1223
|
১৬ থেকে ১৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় বিশ্ব ইন্টারনেট মেলা চে চিয়াং প্রদেশের চিয়া সিং শহরের উ চেন জেলায় অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বব্যাপী ১২০টি দেশ ও অঞ্চলের ২ হাজারের বেশি অতিথি সম্মেলনে অংশ নেন। গত বছর উ চেনে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম বিশ্ব ইন্টারনেট মেলা। উ চেনে যেমন রয়েছে বিশেষ ইন্টারনেট অর্থনীতি, তেমনি রয়েছে ঐতিহ্যিক চীনা সংস্কৃতি। তাই গত বছর বিশ্ব ইন্টারনেট মেলার স্থায়ী ভেন্যু হিসেবে উ চেনকে বাছাই করা হয়।
চীনা জাতীয় ইন্টারনেট তথ্য কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রেন সিয়ান লিয়াং এ প্রসঙ্গে বলেন, "অনেকে প্রথমে বুঝতেই পারেননি যে, কেন আমরা উ চেনকে বাছাই করেছি। আসলে উ চেনের ইতিহাস হাজার বছরের পুরাতন এবং এ শহরটি দক্ষিণ চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে। উ চেন চীনের দীর্ঘ ইতিহাস মনে করিয়ে দেয়।"
উ চেন জেলার ইতিহাস ১৩০০ বছরের পুরাতন এবং এখানে এখনও দেখা মেলে ছিং রাজবংশ আমলের বাড়িঘর ও নকশা। উ চেনকে ডাকা হয় 'জাল ও মাছের বাসা, রেশমের নগর' বলে। উ চেনের অট্টালিকা ও পরিবেশ দেখলে বোঝা যায় প্রাচীনকালে চীনা মানুষ কতটা সৌন্দর্যপিপাসু ছিল। উ চেনের মানুষের প্রকৃতির সাথে সহাবস্থান উল্লেখ করার মতো। অনেকে উ চেনকে সুইজার্ল্যান্ডের 'দাভোস'-এর সাথে তুলনা করেন।
উ চেন চীনের একটি উন্নত জেলা। এখানকার প্রাচীন পাথরের সড়কের নীচ দিয়ে গেছে ইন্টারনেট কেবল্ এবং ইটের তৈরি বাড়িগুলোতে রয়েছে ৩ হাজারেরও বেশি ওয়াই ফাই এক্সেস পয়েন্ট। বছরে প্রায় ৬০ লাখ পর্যটক এখানে ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করেন। তা ছাড়া, তারা অনলাইনে থাকা-খাওয়ার খরচ পরিশোধ করতে পারেন। অনলাইনে তারা সহজেই শহরের কোথায় কোন রেস্তোরাঁ বা ক্যাফে আছে, জানতে পারেন। উ চেন পর্যটন কোম্পানি তথ্যায়ন বিষয়ক পরিচালক কে ওয়ে বলেন, ইন্টারনেট মেলার অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সম্প্রতি উ চেন জেলার ইন্টারনেট অবকাঠামো আগের চেয়ে উন্নত করা হয়েছে।
চীনে বিগত কয়েক বছর ধরেই ইন্টারনেট খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। ইন্টারনেটের প্রভাব পড়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। কিছুদিন আগে পেইচিংয়ে বাসকারী মিস সিয়ে অসুস্থ বোধ করেন এবং মেডিক্যাল টেস্ট করাতে চাইলেন। কিন্তু হাসপাতালে মানুষের ভীড়ের কারণে তিনি সেখানে সুবিধা করতে পারলেন না। এসময় তিনি আবিষ্কার করেন একটি ইন্টারনেট চিকিত্সা রিজার্ভেশন প্ল্যাটফর্ম। তখন তিনি মোবাইলফোনের সাহায্যে এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ভাল হাসপাতালে রিজার্ভেশন করান। এ প্রসঙ্গে মিস সিয়ে বলেন, "এ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম অনেক সুবিধাজনক। একটি ফোন করার পরই তারা আমার জন্য উপযুক্ত হাসপাতালে চিকিত্সার বন্দোবস্ত করে দেয়। হাসপাতালের গাইড আমার সঙ্গে থেকে সবসময় আমার সেবা করেছে। এটা খুবই আনন্দদায়ক।"
মিস সিয়ে মনে করেন, এখন আর হাসপাতালে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই। এই প্লাটফর্মের সেবা নেওয়া অনেক সুবিধাজনক।
যে অ্যাপ্লিকেশন মিস সিয়ে ব্যবহার করেছেন তার নাম'ই ই সেং'। এ অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপআর কোম্পানির সিইও চিয়াং পেই তান বলেন, কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর চীনে অনেক উচ্চ পর্যায়ের হাসপাতালের সঙ্গে সহযোগিতা শুরু করেন তারা। এরই মধ্যে তারা ৫ হাজারের বেশি চিকিত্সাবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রোগীরা দেশব্যাপী উন্নত চিকিত্সা সেবা পেতে পারেন। চিয়াং পেই তান বলেন, "আমাদের অ্যাপ্লিকেশন একটি সেতুর মতো, যার মাধ্যমে আমরা বড় শহরের উন্নত হাসপাতাল ও চিকিত্সাসম্পদের অভাব আছে এমন শহরগুলোর মধ্যে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করি। রোগীরা আমাদের সাহায্যে চিকিত্সাবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। "
বর্তমানে ইন্টারনেট 'তৃতীয় শিল্প' বিশেষ করে সেবা শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চীনা ইন্টারনেট তথ্যকেন্দ্র প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, দ্বাদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা বাস্তবায়নকালে (২০১১-২০১৫) মোবাইল ইন্টারনেট দ্রুত উন্নত হয়েছে এবং কম্পিউটারের বদলে মোবাইলফোন চীনে বৃহত্তম ইন্টারনেট ডিভাইসে পরিণত হয়েছে। চীনে মোবাইলফোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৯ কোটি ৪০ লাখ। এর পাশাপাশি, মোবাইলফোন অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। এখন আগের যে-কোনো সময়ের তুলনায় বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মোবাইলফোন ব্যবহার করে খবর পড়ছেন, সামাজিক বিনিময়ের কাজ সারছেন, কেনাকাটা করছেন।
চীনা জাতীয় শুল্ক ব্যুরোর উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১৫ সালের প্রথম নয় মাসে ইন্টারনেট ও তার সংশ্লিষ্ট সেবা, সফটওয়্যার ও তথ্য সেবা শিল্পে শুল্ক আদায় হয়েছে আগের বছরের একসই সময়ের তুলায় ২০ শতাংশ বেশি।
২০০৯ সাল থেকে প্রতি বছরের ১১ নভেম্বর চীনে অনলাইনে কেনাকাটার উত্সব অনুষ্ঠিত হয়। দিনটি চীনে 'সিঙ্গেলস্ ডে' নামে পরিচিত। চলতি বছরের এই দিনে 'আলি পা পা' কোম্পানির থিয়ান মাও ও থাও পাও—এই দুই শপিং সাইটের বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ৯১২০ কোটি ইউয়ান, যা ২০১৪ সালের বিক্রির চেয়ে ৪০০০ কোটি ইউয়ান বেশি। চীনে অন্য একটি বড় ই-কমার্স ওয়েবসাইট চিং তুং গত ৫ বছরে 'সিঙ্গেলস্ ডে'তে বিক্রি করেছে ৪০০০ কোটি ইউয়ান মূল্যের পণ্য।
চীনা ই-কমার্স গবেষণালয়ের উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১৫ সালের প্রথম ছয় মাসে চীনা আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স বিনিময়ের পরিমাণ ২ ট্রিলিয়ান ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪২.৮ শতাংশ বেশি। চীনা ই-কমার্স কমিটির উপ-পরিচালক ওয়াং হাই পো বলেন, "বর্তমানে ই-কমার্স দু'টি ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পাচ্ছে: একটি হল গ্রামীণ ই-কমার্স এবং আরেকটি আন্তঃসীমান্ত ই-কমার্স। এটা একটি উন্নয়ন-প্রবণতা। বিশেষ করে অনলাইনে আমদানি বাণিজ্যের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।"
গত ৫ বছরে চীনা অনলাইন খুচরা বিক্রির পরিমাণ ছিল বিশ্বে সবচে' বেশি। চীনা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৬ কোটি ১০ লাখ এবং তাদের মধ্যে ৫৫.৭ শতাংশ মানুষের ইন্টারনেটে কেনাকেটার অভিজ্ঞতা আছে। কোনো সন্দেহ নেই, চীনে ইন্টারনেট উদ্ভাবন, অর্থনীতি, সমাজ ও জীবনযাপনসহ নানা ক্ষেত্রে চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছে।