

0919muktarkotha
|
সুপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন সুদূর পেইচিং থেকে প্রচারিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান 'মুক্তার কথা'। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু মুক্তা এবং আলিমুল হক।
বন্ধুরা, তিব্বতী কম্বল বিশ্বের তিনটি বিখ্যাত ব্রান্ডের কম্বলের একটি। তিব্বতী কম্বলের স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কম্বল তৈরির কাঁচামালে যেমন এ বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে, তেমনি ফুটে ওঠে এর ওপর অঙ্কিত চিত্রে। হস্তশিল্প হিসেবে তিব্বতী কম্বল তৈরির প্রক্রিয়া অনেক জটিল আর সুক্ষ্ম। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে তিব্বতের লাসায় অবস্থিত একমাত্র তিব্বতী কম্বল কারখানা সম্পর্কে কিছু কথা বলবো।
(রে ১, কারখানা কন্ঠ)
কারখানা থেকে ভেসে আসে বিভিন্ন শব্দ আর সুন্দর কণ্ঠে গান। লাসায় খাওয়াচেন (Khawachen) হস্তশিল্প কম্বল কারখানার শিল্পীদের নতুন দিনের কাজ শুরু হয়েছে। তাঁরা এখন একটি পশমি কম্বল তৈরি করছেন। তাদের হাতে তৈরি হয় আশ্চর্য সুন্দর সব কম্বল।
পুবুদুনচু (Pubudunzhu) হলেন খাওয়াচেন কারখানার একজন প্রযুক্তিবিদ। তিনি ছোট বেলা থেকে বাবা-মার কাছে কম্বল বোনা শিখেছেন। গত ২৩ বছর ধরে তিনি এ কাজ করছেন। তিনি জানালেন, পশমের মান তিব্বতী কম্বলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
(রে ২)
'আমাদের তিব্বতী কম্বল বোনা হয় উচ্চ মালভূমি থেকে সংগ্রহ করা পশম দিয়ে। কারণ এ ধরণের পশম দিয়ে তৈরি কম্বল অধিক উষ্ণতা দেয়।'
শিল্পীরা সুনির্বাচিত পশম গোছগাছ করে রেখে পশমি সুতো তৈরি করেন। তার পরে পশমি সুতোয় রঙ দেওয়া হয়। সবশেষে শিল্পীরা সুন্দর রঙিন তিব্বতী কম্বল বুনেন। একটি সাধারণ তিব্বতী কম্বল তৈরি করতে দু'জন শিল্পীর এক মাসের বেশি সময় লাগে।
তিব্বতী কম্বল তৈরির কার্যক্রম অনেক জটিল হওয়ার কারণে এ ক্ষেত্রে শিল্পীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। অনেক কম্বল কারখানায় হাতে তৈরি কম্বলের পরিবর্তে যন্ত্র দিয়ে কম্বল তৈরি করছে। কিন্তু খাওয়াচেন কারখানার ওয়ার্কশপ ডিরেক্টার নিমা জাহি (Nima Zahi) দৃঢ়ভাবে হস্তশিল্পের পক্ষে কথা বললেন। তিনি বিশ বছর ধরে এ কারখানাটিতে কাজ করছেন। তাকে এ দীর্ঘ সময়ে অনেক কঠিন চ্যালেন্ঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি দমে যাননি। তিনি বললেন, (রে ৩)
'এখন তিব্বতে এ ধরণের শিল্পী খুবই কম। এখন যদি আমিও পিছটান দিই, তাহলে আমাদের ঐতিহ্যবাহী শিল্প টিকিয়ে রাখা যাবে না।'
খাওয়াচেন কারখানার প্রতিষ্ঠাতা গেসাং জাহিও (Gesang Zahi) এ কারণে কারখানাটি চালু রেখেছেন। ১৯৮৬ সালে গেসাং জাহি লাসায় তিব্বতী কম্বল তৈরির শিল্পী সংগ্রহ করে কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর তিনি এক নতুন প্রজন্মের শিল্পী গড়ে তোলেন।
কারখানায় একসময় পাঁচ শতাধিক শিল্পী ছিলেন। তাঁদের তৈরি কম্বল যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে রফতানি হত। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ারেও তাঁদের তৈরি কম্বল বিক্রি হত।
এখন খাওয়াচেন কারখানায় মাত্র ৩০ জন শিল্পী রয়েছেন। কারখানাটির জেনারেল ম্যানেজার দোলজিনা জীন (Dolgina Jean) গানসু প্রদেশের গাননান তিব্বতী জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাধ্যমিক স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর থেকেই পশম বিক্রীর ব্যবসা শুরু করেন। এরপর কম্বলের শিল্প তাঁকে গভীরভাবে আকর্ষণ করে। হাতে তৈরি কম্বলের উত্পাদনখরচ বেশি, অথচ বেশি দাম পাওয়া যায় না। সেজন্য শিল্পীদের বেতন কম। দোলজিনা জীন নিজের হাতে কম্বল তৈরির ধারা বজায় রাখার পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পীদেরকেও এ কাজে উত্সাহ দিয়ে চলেছেন। তিনি বলেন,
(রে ৪)
'এটি আমাদের জাতির পুরনো ঐতিহ্য। এটি হারিয়ে যাবে না, বিলীন হবে না। টাকা হোক বা না-হোক, আমি হাতে তৈরি কম্বল উত্পাদনের এই ধারা অব্যাহত রাখব। আমি আমাদের পূর্বপুরুষদের উত্তরাধিকার ত্যাগ করতে চাই না।'
বিগত কয়েক বছরে তিব্বতের স্থানীয় নাগরিকরা ছাড়াও চীনের অন্যান্য স্থানের কোন কোন মানুষ হস্তশিল্প হিসেবে কম্বল তৈরির শিল্প রক্ষার চেষ্টা করছেন। শাংদং প্রদেশের ওয়াং চেছিয়াং কাতার বিমান কোম্পানির উচ্চ বেতনের কাজ ত্যাগ করে লাসায় এসে খাওয়াচেন কম্বল কারখানায় কাজ করছেন। তিনি তিব্বতী সংস্কৃতি উন্নয়ন ও সুরক্ষায় অবদান রাখতে চান। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
(রে ৫)
'তিব্বতী সংস্কৃতি বর্তমানে পতনশীল। আমাদের উচিত তিব্বতের প্রাচীন সংস্কৃতি রক্ষা করা। এটা আমাদের দায়িত্ব।'




