Web bengali.cri.cn   
বাংলাদেশের ডিজাইনার মুরাদের গল্প
  2015-11-28 17:01:44  cri


সুপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন সুদূর পেইচিং থেকে প্রচারিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান 'মুক্তার কথা'। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু মুক্তা এবং আমি আলিমুল হক।

আজকাল অনেকেই কিছু-না-কিছু ডিজাইনের কাজ জানেন। তবে বিশেষজ্ঞ ডিজাইনারের সংখ্যা এখনও কম। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা তেমন একজন ডিজাইনারের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব। তার নাম ডক্টর. এস. মুরাদ।

১৯৯৭ সালে মুরাদ বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে চীনে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য বৃত্তি পান। তিনি চীনের শ্রেষ্ঠ ললিতকলা একাডেমি সেন্ট্রাল একাডেমি অব ফাইন আর্ট (সিএএফএ)-এ পড়াশোনা করেন। শুরুতে তাঁর মেজর ছিল চীনা আলোচ্চিত্র। এ পর সিএএফএ তথা কাফায় গ্রাফিকস্ ডিজাইন জনপ্রিয় হয়। মুরাদ ভাবলেন, ভারতীয় কোর্ট পেইন্টিং-এর ওপর যেহেতু ভালো দখল রয়েছে, সেহেতু তিনি বিষয় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। যেই ভাবা, সেই কাজ। তিনি তাঁর মেজর চীনা ঐতিহ্যবাহী আলোচ্চিত্র থেকে ডিজাইনে পরিবর্তন করেন। একই বছর তিনি কাফার অডিওভিস্যুয়াল মিডিয়ার মাস্টারস্ বিভাগে পরীক্ষা দেন।

২০০৪ সালে পেইচিংয়ের থিয়ানআনমেন মহাচত্বর পরিচালনা কমিশন থিয়ানআনমেন মহাচত্বরের নতুন পার্কিং ব্যবস্থা চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। মুরাদ দেখলেন থিয়ানআনমেন'র ব্যবস্থায় ত্রুটি আছে। তিনি নিজের একটি প্রস্তাব থিয়ানআনমেন পরিচালনা কমিশনকে পাঠান। এক্ষেত্রে তার পাঠানো প্রস্তাবটি প্রায় ৪০টি অন্য প্রস্তাবকে হারিয়ে শীর্ষস্থান দখল করে। একই বছরের পয়লা অক্টোবর অর্থাত্ চীনের জাতীয় দিবসে মুরাদের নেতৃত্বে একটি ডিজাইন গ্রুপ থিয়ানআনমেন স্কয়ারের ১২০টি স্থানের জন্য চিহ্নিত বোর্ড ডিজাইন করে এবং সেগুলো নির্ধারিত স্থানে স্থাপন করে। এসব বোর্ড প্রতিদিন ৪০ থেকে ৬০ হাজার পর্যটককে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে। এ সম্পর্কে মুরাদ বলেন,

(রে ১)

'২০০৪ সালে চীনের থিয়ানআনমেন মহাচত্বরে আমার ডিজাইন করা নির্দেশক-বোর্ডগুলো স্থাপিত হয়। আমার জন্য এটি চীন সরকার ও জনগণের দেওয়া মহান স্বীকৃতি ও মর্যাদা। এ ধরণের সুযোগ শুধু বিদেশিদের জন্য নয়, চীনাদের জন্যও অনেক মূল্যবান। এ সুযোগে আমি চীনা সরকারকে আমাকে বৃত্তি প্রদান দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই।'

মুরাদ আমাদের জানান, ২০০৮ সালে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সময় কাফার অলিম্পিক গেমস ডিজাইন দলের একজন হিসেবে তিনি অলিম্পিক পদক ও ম্যাস্কটের ডিজাইনে অংশ নেন। এ ছাড়াও তিনি চীনা জাতীয় সিঙ্ক্রোনাইজ সাঁতার দলের জন্য ১২টি প্রতিযোগিতার বস্ত্র ডিজাইন করেন। জাতীয় সিঙ্ক্রোনাইজ সাঁতার দলের প্রতিযোগিতা বস্ত্র ডিজাইন করার জন্য তিনি পেইচিং অলিম্পিক গেমসের 'লাকি পেইচিং' নামের কোয়ালিফাইংয়ে প্রচুর ছবি তুলেছেন এবং গবেষণা করেছেন। এর মধ্যে একটি খুবই মজা ব্যাপার ছিল। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

(রে ২)

'ডিজাইনারের দৃষ্টিতে আমি মনে করি, অলিম্পিক গেমসের বিভিন্ন প্রতিযোগীদের পোশাকের মধ্যে সিঙ্ক্রোনাইজ সাঁতারের পোশাক সবচে' সুন্দর। অন্যান্য দেশের প্রতিযোগিতা বস্ত্র সম্পর্কে জানার জন্য আমি কোয়ালিফাইংয়ে প্রচুর ছবি তুলি। কিন্তু আমার পাশে একজন বৃদ্ধা নারী মনে করলেন যে আমি শুধু সুন্দর মেয়েদেরকে ছবি তুলি।'

উচ্চ পর্যায়ের ডিজাইনের জন্য সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। মুরাদ আমাদেরকে জানান যে, তিনি প্রথমে পুরোপুরি অতিথিদের প্রয়োজন অনুযায়ী ডিজাইন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে তিনি নিজের ধারণা ডিজাইনে সংযুক্ত করেন। তিনি চিয়াংসু প্রদেশের বিখ্যাত ধনী গ্রাম হুয়াসিতে পাঁচ তারকা হোটেল, দক্ষিণ-পশ্চিম বাঁশ সংস্কৃতি যাদুঘর ও পেইচিং আন্তর্জাতিক চিত্রকলার সামগ্রী কেন্দ্রসহ বিভিন্ন বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক স্থাপত্যের ডিজাইনে অংশ নেন। এ ছাড়াও তিনি চীনের বিভিন্ন ডিজাইন প্রতিযোগিতায় বিশেষজ্ঞ বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন এবং সারা চীনে প্রশিক্ষণ ও ভাষণ দেন। এখন তিনি হলেন চীনা ডিজাইন মহলে একজন পরিচিত মুখ। এ সম্পর্কে মুরাদ বলেন,

(রে ৩)

'আসলে ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমি চীনের কয়েক শ' শহরে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছি এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছি। আমি আশা করি, নিজের অভিজ্ঞতা চীনা শিল্প মহলের ছাত্রছাত্রীদেরকে কাজে লাগবে।'

একজন বিদেশি ডিজাইনার হিসেবে মুরাদ আরও ভালভাবে চীনকে জানার জন্য চীনা ভাষা শিখেছেন। পাশাপাশি তিনি চীনা সংস্কৃতি বিশ্বে প্রচার করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

(রে ৪)

'আমি মনে করি, চীনে অনেক ভালো ডিজাইনার রয়েছেন। কিন্তু ভাষার সীমাবদ্ধতার কারণে তারা নিজেদের বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে পারছেন না। আসলে চীনা ডিজাইনারদের উচিত চীনা সংস্কৃতি বিশ্বের নানা স্থানে প্রচার করা এবং বিদেশি ডিজাইনারদের সঙ্গে যোগাযোগ জোরদার করা। আমি মনে করি, ডিজাইন জীবন বদলে দিতে পারে এবং ভবিষ্যত গঠন করতে পারে।'

বর্তমানে মুরাদ চীনে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন। তিনি একটি সুন্দরী চীনা মেয়েকে বিয়ে করেছেন এবং তাদের একটি সুন্দর ছেলে আছে। তিনি বলেন,

(রে ৫)

'কাফায় লেখাপড়া হল আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা। আমার জীবন কাফার লেখাপড়ার মাধ্যমে পরিবর্তন হয়। আমি বিশ্বের প্রথম শ্রেণির ডিজাইনারদের তালিকায় নিজের নাম দেখতে চাই। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে 'ডিজাইন ইন চায়না' দেখা যাবে।'

1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040