হ্যাঁ, এটি একটি চমত্কার ক্যাম্পাস। পুরো ক্যাম্পাস সবুজ গাছ-গাছালিতে পরিপূর্ণ। বিশাল বিশাল ভবন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ডরমেটরি, ক্যান্টিন, লাইব্রেরি, খেলার মাঠসহ জ্ঞান চর্চার সকল প্রয়োজনীয় বিষয় এই ক্যাম্পাসে রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ক্যাম্পাসের অদূরেই রয়েছে সাবওয়ে লাইন। ক্যাম্পাসের পাশেই বিখ্যাত 'পার্ল রিভার' । শিক্ষার্থীরা এ নদীর পাড়ে বুক ভরে নি:শ্বাস নেয়ার পাশাপাশি উপভোগ করতে পারেন এ নদীর চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য। সকালের শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশে সবাই এখানে নিজের শরীর চর্চা করে নিতে পারেন। দীর্ঘ ক্লান্তি দূর করতে ও বিনোদনের জন্য শিক্ষার্থীরা এ নদীর মধ্যে রঙিন জাহাজে করে ঘুরতে পারেন। এক কথায়, অসাধারণ একটি ক্যাম্পাস এটি।
আরেকটি ক্যাম্পাস চুহাই শহরের থাংচিয়াওয়ানে অবস্থিত। বিভিন্ন ক্যাম্পাসের মধ্যে আয়তনে এই ক্যাম্পাসটি সবচেয়ে বড়।আন্তর্জাতিক ব্যবসা একাডেমি, পর্যটন একাডেমিসহ প্রায় ১০টি শাখা একাডেমির শিক্ষার্থীরা এখানে লেখাপড়া ও বসবাস করে থাকেন।
সান ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রধান বিষয়ের র্যাঙ্কিং চীনের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করে।
গভীরভাবে অধ্যয়ন, সঠিকভাবে অনুসন্ধান, সযত্নে অভিব্যক্ত করা, সুস্পষ্টভাবে বিচার করা, আন্তরিকতার সাথে চর্চা করা-এই আদর্শ বাক্যকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে চলেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়।
২০১৩ সালের হিসেব অনুযায়ী সান ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ১২ হাজারেরও বেশি। এদের মধ্যে অধ্যাপকের সংখ্যা ৭৪৫ জন, সহযোগী অধ্যাপকের সংখ্যা ৮২০ জন।
এদের মধ্যে রয়েছেন চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একাডেমির একাডেমিশিয়ান ১১ জন, চীনের প্রকল্প একাডেমির একাডেমিশিয়ান ২ জন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ৯ জন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিশেষ অবদান পুরস্কার বিজয়ী যুব বিশেষজ্ঞ ১৫ জন এবং চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের 'ইয়াংজি নদী' বিষয়ক বিশেষ অধ্যাপক ২১ জন।
আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২ হাজার ৫০০'শরও বেশি, পোস্টগ্রাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ হাজারেরও বেশি, ডক্টরাল শিক্ষর্থীর সংখ্যা রয়েছেন ৫ হাজারেরও বেশি।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান হার এবং পরীক্ষায় পাসের হার চীনের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থানে রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গবেষণা দক্ষতা ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে। ২০১৪ সালে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণার বাজেট ১.৪ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে।
এ পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের বিভিন্ন শীর্ষ ও গুণগতমানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়, জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও ফ্রান্সের গ্রেনোবল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে সান ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতি বছর বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশের ৩০০০ জনেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে আসেন। প্রতি বছর বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০০০ জনেরও বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নয়া চীন প্রতিষ্ঠার আগে চীনের আধুনিককালের বিখ্যাত লেখক লু স্যুন, কবি কুওমোরুও ও ফেং ইয়ৌসহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন।
ভৌগোলিকভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি চীনের তাইওয়ান, হংকং ও ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক এলাকা থেকে খুব দূরে নয়। এ কারণে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়, হংকং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে সান ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়।
২০০৬ সাল থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয় ফিলিপিন্স, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সহযোগিতা করে মোট ৫টি কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে।
বিভিন্ন দেশের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে স্থানীয় অঞ্চলের লোকদের কাছে চীনা ভাষা ও সাহিত্য তুলে ধরার মধ্য দিয়ে বিশ্বে আরো বিখ্যাত হয়ে উঠেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মি. সান ইয়াত-সান ১৮৬৬ সালে চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের সিয়াংশান জেলায় এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চীনের আধুনিককালের জাতীয় বিপ্লবের উদ্যোগ্তা, চীনের বিপ্লবী নেতা। তার নেতৃত্বে চীনা জনগণ সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাবিরোধী যুদ্ধে জয়লাভ করে।
১৯১১ সালের ১১ অক্টোবর তিনি সিনহাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেন এবং এরপর ১৯১২ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে ১৯১২ সালের পয়লা এপ্রিল পর্যন্ত চীনের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
যুব বয়সে তিনি হংকং, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও মালয়েশিয়ায় চিকিত্সা বিষয়ে লেখাপড়া করেন। পরে তিনি চীনের বিপ্লবে যোগ দেন।
১৯২৫ সালের ১২ মার্চ তিনি পেইচিংয়ে মৃত্যুবরণ করেন এবং ১৯২৯ সালে তাকে নানচিং শহরে সমাহিত করা হয় ।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা চীনের কুয়াতুং প্রদেশের কুয়াংচৌ শহরের সান ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত তথ্য শুনলেন।
এখন শুনবেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রিজওয়ান আহমেদের সাক্ষাতকার।
বন্ধুরা, আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com
রেডিও'র মাধ্যমে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে মিস করলে আমাদের বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে শুনতে পারবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn
এবার তাহলে বিদায়। আগামী সপ্তাহের একই সময় একই দিনে আবার কথা হবে। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন ও সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল)