Web bengali.cri.cn   
ঈদ-বাণিজ্যে চাঙ্গা বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি, বিশ্ব প্রতিযোগিতা সূচকে দুই ধাপ অগ্রগতি
  2015-10-05 19:03:21  cri

গত সপ্তাহে বাংলাদেশের অর্থনীতির দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের জরিপে বাংলাদেশের অগ্রগতি আর কোরবানীর ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের অর্থনীতিতে-বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা সৃষ্টি।

ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বপ্রতিযোগিতা সূচকে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৭তম। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের গবেষণায় উন্নতি ঘটেছে দেশের সার্বিক অবস্থানের। ঢাকার বেসরকারি থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি ৩০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের পক্ষে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন।

ব্যবসায়ের পরিবেশ, সুশাসন, অবকাঠামো, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ ১৫টি বিষয়ে বিশ্বের ১৪০টি দেশের ওপর জরিপ চালায় বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম। জরিপে অংশ নেন বাংলাদেশের ৫৬ জন ব্যবসায়ী। জরিপের ফলাফলে বিশ্ব প্রতিযোগিতা সূচকে বাংলাদেশ আগের ১০৯তম অবস্থান থেকে ২ ধাপ উন্নতি লাভ করেছে। তবে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোতে বাংলাদেশের অগ্রগতি যথেষ্ট ভালো নয়। বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলেও তা কতদিন থাকবে সে বিষয়েও সংশয় রয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। আর উন্নয়ন প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অগ্রগতির হারও সন্তোষজনক নয়।

এদিকে, কোরবাণীর ঈদকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা এসেছে। বিশ্লেষকদের মতে এবারের কোরবাণীর ঈদে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে- যা দিয়ে পদ্মা সেতুর মতো মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

সাধ্য অনুযায়ী কোরবাণীর পশু ক্রয় করেন মুসলিমরা। ধর্মীয় তাৎপর্যের পাশাপাশি রয়েছে এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব। সরকারি হিসেব অনুযায়ী এবার প্রায় ৫০ লাখ গরু-মহিষ কোরবাণী হয়েছে। প্রতিটি গড়ে ৪০ হাজার টাকা করে হলেও যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ২০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি ছাগল-ভেড়া, উট-দুম্বার মতো পশু কেনাবেচায় লেনদেন হয়েছে আরও প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও দা, ছুরি, বটি-চাটাই, গবাদি পশুর খাবার প্রতিটি ক্ষেত্রে চলে বড় অংকের আর্থিক কর্মকাণ্ড। পশুর চামড়া রপ্তানি থেকে আসে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। বিপুল রাজস্ব আয় করে সরকার।

এমনকি গবাদি পশুরু হাড়গোড়, খুর, শিং, লেজ, পাকস্থলি-এসব বর্জ্য থেকেও আয় হয় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। একটি পশুর পাকস্থলি রপ্তানি করে আয় হচ্ছে ১০ থেকে ১২ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে রয়েছে পশুর পিত্তথলির চাহিদা। এদিয়ে তৈরি হয় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। এমনকি গবাদি পশুর জননাঙ্গ বিক্রি করেও আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। চীন, কোরিয়া ও থাইল্যান্ড স্যুপ তৈরির জন্য পশুর জননাঙ্গ কিনে নেয় ৪ থেকে ৬ ডলারে। এর পাশাপাশি পশুর হাড়, খুর, দাঁত, শিং দিয়ে তৈরি হয় ক্যাপসুলের কভার, জেলোটিন, ক্যামেরার ফিল্ম, সিরিস কাগজ আর পশুপাখির খাবার। এগুলোও বিক্রি হয় চড়াদামে।

কোরবাণীর ঈদকে কেন্দ্র করে এই যে অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ তাতে চাঙ্গা হয়ে ওঠে গ্রামীণ অর্থনীতি। কোরবাণীর পশুর বেশির ভাগেরই যোগান আসে গ্রামগঞ্জ থেকে। পশু যেখানেই বিক্রি হোক না কেন এই অর্থের সিংহভাগ চলে যায় গ্রামে। চামড়া বিক্রির কয়েক হাজার কোটি টাকার বড় অংশও যায় গ্রামে। এতে গ্রামে অর্থের যোগান, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মামুন রশিদ মনে করেন, কোরবানীর মতো উৎসবে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয় গ্রামীণ অর্থনীতি। কারণ পশু ও চামড়া বিক্রির বেশিরভাগ অর্থ যায় গ্রামের কৃষক ও দরিদ্রদের হাতে। এর মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান এর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা আর্থিক সহায়তা স্কিম চালু করলে দারিদ্র্য দূরিকরণে তা আরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040