১৯৫২ সালে পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়, ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, থিয়ানচিন বিশ্ববিদ্যালয় ও থাংশান রেলওয়ে কলেজের ভূতত্ত্ব বিভাগের যৌথ উদ্যোগে পেইচিং জিওলজি ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৭৫ সালে এ ইন্সটিটিউট উহানে স্থানান্তর করা হয় এবং নাম দেওয়া হয় উহান কলেজ অব জিওলজি (ইউসিজি)।
১৯৭৮ সালে চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট তেং সিয়াও পিংয়ের নির্দেশে পেইচিং ক্যাম্পাসে মাস্টার্স পর্যায়ের বিভাগ চালু করা হয়।
১৯৮৭ সালে চীনের শিক্ষা কমিটির অনুমোদনে উহান কলেজ অব জিওলজির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় চীন জিওসাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর পেইচিং ও উহানের ক্যাম্পাস নিয়ে যাত্রা শুরু করে চীনের জিওসাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিইউজি)।
চীনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সিইউজি'র স্লোগান হলো 'সাধারণভাবে জীবনযাপন করা, বাস্তবমুখী সত্যতা খুঁজে বের করা'।
সিইউজি'র উহান ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক দৃশ্য ভীষণ চমত্কার। এ ক্যাম্পাস উহানের বিখ্যাত 'ইস্ট লেকের' কাছে অবস্থিত।
বিগত ৫০ বছরে ২ লাখেরও বেশি শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী এ ক্যাম্পাস থেকে জ্ঞানার্জন করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
চীনের বিজ্ঞান একাডেমি ও প্রকল্প একাডেমির ৩০ জন একাডেমিশিয়ান সিইউজি থেকে ডিগ্রি অর্জন করেন।
চীনের উচ্চপর্যায়ের শিক্ষাদান ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়ন ও পরিবর্তনে সিইউজি নতুন সুযোগের সম্মুখীন হয়। এ উপলক্ষ্যে সিইউজি'র প্রশাসনিক বিভাগ প্রধান বিষয় প্রতিষ্ঠা, ব্যক্তি প্রশিক্ষণ, বিজ্ঞান গবেষণা, সমাজ পরিসেবা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আর বিনিময়সহ বিভিন্ন খাতে চমত্কার সাফল্য অর্জন করে এবং তিনটি পদক্ষেপ নিয়ে উন্নয়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন করে।
ভূ-বিজ্ঞান প্রধান বিষয়সহ বহুমুখী প্রধান বিষয়ের ভারসাম্যমূলক উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা, দেশ-বিদেশে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১০০তম বার্ষিকীতে বিশ্বে ভূ-বিজ্ঞান খাতে শীর্ষ স্থান অধিকার করা।
বর্তমানে সিইউজিতে শিক্ষকসহ ও কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৩২০০ জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন চীনের বিজ্ঞান একাডেমির ১০ জন একাডেমিশিয়ান, অধ্যাপক ৪২০ জন, ডক্টরেট ডিগ্রিধারী শিক্ষক ১৮৩ জন।
চীনের ইয়াজি নদী স্কলার পরিকল্পনা, চীনের যুব বিজ্ঞান তহবিল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের 'নতুন শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি' এবং 'ছুথিয়ান' স্কলার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন তহবিল ও গবেষণা পরিকল্পনায় সিইউজির অনেক অধ্যাপক যুক্ত রয়েছেন।
২০০৮ সালে সিইউজি'র অধ্যাপক মি. ছেং ছিউ মিং একাডেমিশিয়ান চাও পেং তা'র পর বিখ্যাত 'কারেন পেন অ্যাওয়ার্ড' লাভ করেন।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক সম্পদ এবং ভূতাত্ত্বিক প্রকৌশল এবং ভূতত্ত্ব- এ দুটি প্রধান বিষয় চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শীর্ষ স্থান অধিকার করে।
সিইউজিতে ১০টি একাডেমি ও ৬০টি স্নাতক পর্যায়ের বিষয় রয়েছে। এছাড়া অনেক মাস্টার্স পর্যায়ের প্রধান বিষয়ও রয়েছে এখানে। চীনসহ বিভিন্ন দেশের অনেক শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষক হিসেবে কাজ করেন।
বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬৪ হাজারেরও বেশি। তাদের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭০০ জনেরও বেশি।
সিইউজি শিক্ষার্থীদের আরও বেশি দক্ষ করে তুলবার জন্য চীনের বিজ্ঞান একাডেমির ৯টি গবেষণা কেন্দ্র ও চীনের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান একাডেমির সঙ্গে 'সহযোগিতামূলক সম্পর্ক' গড়ে তুলেছে।
চীনের মহাশূন্য গবেষণায় জড়িত 'ছাং এ' চাঁদ অনুসন্ধান সম্পর্কিত তথ্য ও চাঁদ গবেষণা এবং 'শেনচৌ' মানববাহী মহাকাশযানের উদ্ধার ব্যবস্থায় অংশ নিয়েছে সিইউজির সংশ্লিষ্ট গবেষণাগার।
তাছাড়া, ২০০৮ সালে চীনের সিছুয়ান প্রদেশের ওয়েনছুয়ানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে সিইউজি বিজ্ঞান খাতের উদ্ধারকারী দল দুর্গত এলাকায় পাঠায়। তারা দুর্গত এলাকার পুনরুদ্ধার ও নতুন শহর প্রতিষ্ঠার ঠিকানা বাছাইসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন।
ভূতত্ত্ব সংক্রান্ত প্রধান বিষয় ছাড়াও ক্রীড়ার ওপরও গভীর নজর রাখে এবং গুরুত্ব দেয় সিইউজি। দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় মোট ১৫০টিরও বেশি স্বর্ণপদক ও ৩৫০টিরও বেশি রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেছে সিইউজির শিক্ষার্থীরা।
২০১২ সালের মে মাসে সিইউজি'র পর্বতারোহীরা প্রথমবারের মতো চুমুলাংমা শৃঙ্গে আরোহণ করেন, যা চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্বতারোহী দলের মধ্যে প্রথম।
সিইউজি শিক্ষাদানের মান উন্নত করার জন্য সক্রিয়ভাবে বিজ্ঞানসম্মত ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান করে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ,অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়াসহ বিশ্বের ১০০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সিইউজি। সিইউজির উদ্যোগে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাককুরি বিশ্ববিদ্যালয় ও হংকং বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের ১০টিরও বেশি বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান 'আর্থ সিস্টেম সাইন্স লিগ' প্রতিষ্ঠা করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতি বছর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সিইউজি'র শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০০ জনেরও বেশি এবং চীন সফর করা বিদেশি স্কলার ও বিশেষজ্ঞের সংখ্যা ৩০০ জনেরও বেশি।
প্রিয় শ্রোতা, এতক্ষণ আপনারা চীনের জিওসাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত কিছু তথ্য জানলেন। এখন শুনবেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত শিক্ষার্থী চীনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও এবং জাতীয় স্টেডিয়ামের ডিজাইনার লি চিউ লিনের কিছু তথ্য।
ওয়েন চিয়া পাও ১৯৪২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীনের থিয়ানচিন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি পেইচিং জিওলজি ইন্সটিটিউটে জিওলজিকাল সার্ভে অ্যান্ড প্রোসপেক্টিং বিষয়ে লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি এ ইন্সটিটিউট থেকে জিওলজিকাল স্ট্রাকচার বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি কানসু প্রদেশের ভূতাত্ত্বিক ব্যুরোর জিওমেকানিক্স দলে কাজ করেন এবং ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি এ ব্যুরোর উপ-পরিচালক ও ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি এ ব্যুরোর উপ-প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টর (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর সদস্য ও চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সিইউজি'র আরেক জন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম লি চিউ লিন। তিনি হলেন চীনের জাতীয় স্টেডিয়াম বার্ডনেস্টের ডিজাইনারদের অন্যতম একজন।
১৯৬৮ সালের অগাস্ট মাসে চীনের হোপেই প্রদেশের ফেংরুন জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৯৩ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি উহান জিওসাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইড্রোলজিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং জিওলজি বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন।
২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি বার্ডনেস্ট স্টেডিয়ামের প্রধান দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ও প্রযুক্তিতে ধারাবাহিক প্রশাসনিক ও নির্মাণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। এ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে তিনি বলেন, বার্ডনেস্ট প্রকল্পের সবচে বড় বৈশিষ্ট্য হলো বিনা শৃঙ্খলায় সুশৃঙ্খলভাবে স্থাপত্যের কাঠামো তৈরি করা।
৯১ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন বার্ডনেস্ট স্টেডিয়ামে ৪৮ হাজার টন লোহা ব্যবহার করা হয়েছে।
বিভিন্ন পক্ষের সমন্বয় ও সমর্থনে এ বার্ডনেস্ট নির্মাণের প্রযুক্তি গবেষণা করা হয় এবং তা সুন্দরভাবে গত পেইচিং অলিম্পিক গেমস শুরুর আগে সম্পন্ন করা হয়।
বন্ধুরা, এখন আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সুন্দর গান আপনাদের শোনাবো। গানের নাম 'পরিমাপকের গান'। ১৯৫২ সালে এ গান রচনা করা হয়। ১৯৬৩ সালে পেইচিং জিওলজি ইন্সটিটিউট প্রথমবারের মতো 'যুব প্রজন্ম' নাটকে এ গান ব্যবহার করে। পরে এ গানটি সারা চীনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
গানের কথা বাংলায় অনুবাদ করলে মোটামুটি এমন দাঁড়ায়, সেই উপত্যকার বাতাস আমাদের লাল পতাকা নাড়িয়ে দেয়, সেই ঝড়বৃষ্টি আমাদের তাঁবু পরিস্কার করে। আমাদের আন্তরিকতা অগ্নির মতো গরম,তা সকল ক্লান্তি ও শীত ব্যর্থ করে দেয়। আমরা বিভিন্ন পর্বত ও শৃঙ্গে আরোহণ করি। আমাদের প্রত্যাশা ও আশা দেশের জন্য প্রচুর খনিজ সম্পদ আবিষ্কার করবো। আকাশের তারা অন্ধকার রাতে আমাদের জন্য বাতি জ্বালায়, বনের পাখি ভোরবেলায় আমাদের জাগিয়ে তোলে। আমাদের আন্তরিকতা অগ্নির মতো গরম, তা সকল ক্লান্তি ও শীত ব্যর্থ করে দেয়।
আমরা বিভিন্ন পর্বত ও শৃঙ্গে আরোহণ করি। আমাদের প্রত্যাশা ও আশা দেশের জন্য প্রচুর খনিজ সম্পদ আবিষ্কার করবো। বিভিন্ন নদী ঢেউসহ সমুদ্রে মিলিত হয়। আমাদের আন্তরিকতা অগ্নির মতো গরম,তা সকল ক্লান্তি ও শীত ব্যর্থ করে দেয়। আমরা বিভিন্ন পর্বত ও শৃঙ্গে আরোহণ করি। আমাদের প্রত্যাশা ও আশা দেশের জন্য প্রচুর খনিজ সম্পদ আবিষ্কার করবো...।
বন্ধুরা, আর এ সুন্দর গানের মধ্য দিয়ে শেষ করছি আমাদের আজকের 'বিদ্যাবার্তা'। আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn
সময়মতো আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে, সিআরআইয়ের ওয়েবসাইট থেকে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা www.bengali.cri.cn.
এবার তাহলে বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আগামী সপ্তাহের একই দিনে একই সময়ে আবারও আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। চাইচিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল)