সাফল্য অর্জন করলেও হে হুই'র তখন নিঃসঙ্গ লাগছিল। অনুষ্ঠান শেষে তিনি হোটেলে ফিরে আসলেন। তার নিঃসঙ্গ লাগার কারণ, সেদিন ছিল চীনের ঐতিহ্যিক বসন্ত উত্সব। পরিবারের সঙ্গে থাকতে না-পারা তার জন্য কষ্টকর ছিল। তবে তিনি সে কষ্টকে জয় করেন এবং সেখানে নানা প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করেন। অবশ্য সেসময় তিনি বেশকিছু অফার প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ, তিনি আদৌ ইতালি থাকবেন কি না, নিশ্চিত ছিলেন না।
অবশেষে ২০০৩ সালে তিনি একটি কোম্পানির সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হন। ভিয়েনার মঞ্চে দাঁড়ানোর তীব্র আগ্রহই তাকে সে চুক্তি স্বাক্ষর করতে উত্সাহিত করে। তিনি অপেরা 'মাদাম প্রজাপতি'-তে অভিনয় করেন। সমালোচকরা তখন বলেছিলেন, হে হুই 'মাদাম প্রজাপতি' চরিত্রে সবচে' ভাল করেছেন। জীবনের এ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হে হুই উপলব্ধি করলেন, নিঃসঙ্গতা, কষ্ট ও পরিশ্রমের বিনিময়ে সংগীতের জগতে স্থান করে নেওয়া একটি চমত্কার ব্যাপার। তিনি ভাবলেন, এটাই তার জীবনের অর্থ।
অন্য শিল্পের চেয়ে অপেরা একটু ভিন্ন ধাঁচের। প্রতিটি দৃশ্যের সময় ৩০ মিনিট এবং মঞ্চ থেকে অডিটোরিয়াম ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। অভিনেতাকে একদিকে মন দিয়ে দর্শকদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়, এবং অন্যদিকে চরিত্রের মধ্যে প্রবেশ করতে হয়। হে হুই ১৪০ বার 'মাদাম প্রজাপতি'-র ভূমিকায় এবং ১৩০ বার Aida চরিত্রে অভিনয় করেন। কিন্তু প্রতিবারই তার মনে হয়েছে, এই প্রথম তিনি এতে অভিনয় করছেন। তিনি সবসময় চরিত্রে নতুনকিছু যোগ করতে চাইতেন। হে হুই মনে করেন তিনি নিখুঁত নন। তিনি নিজেই তার কঠোর সমালোচক।
হে হুই সবসময় একজন চীনা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে গৌরব বোধ করেন। তিনি বলেন, তার প্রতিটি কথা, মনোভাব ও আচরণ নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। হে হুই দু'সংস্কৃতির মধ্যে যোগসূত্র রচনা করেন। তিনি নিজে অন্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন, পাশাপাশি অন্যের প্রভাবও নিজের ওপর অস্বীকার করেন না। বর্তমানে চীনে অপেরার মান উন্নত হয়েছে। এখন চীনের এ শিল্পকে বিশ্বমানের বলা যেতে পারে। হে হুই আশা করেন, ভবিষ্যতে আরও বেশি চীনা শিল্পী বিশ্বের মঞ্চে দাঁড়বে। কারণ, বর্তমানে ক্রমবর্ধমান হারে চীনারা ইতালিতে অপেরা নিয়ে লেখাপড়া করছে। হে হুই জানান, যেদিন আর মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাজ করতে পারবেন না, সেদিন থেকে অপেরার শিক্ষক হিসেবে কাজ করবেন। তিনি আশা করেন, তার ছাত্র-ছাত্রীরা তাকেও ছাড়িয়ে যাবে। (শিশির)