Web bengali.cri.cn   
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চীনা মন ও চীনাদের কাছে রবীন্দ্রনাথ
  2015-08-12 16:20:41  cri

অধ্যাপক ইউ বলেন, প্রেসিডেন্ট সি'র ভাষণ দারুণ সাহিত্য প্রতিভা ও গভীর চিন্তায় ভরপুর, যা দু'দেশের জনগণকে মুগ্ধ করে।

ঠাকুরের অনেক কবিতার কথা উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট সি চীনা যুবকদের ঠাকুরের কবিতার আবেগের প্রতি উত্সাহিত করেছেন।

চীনের হু পেই প্রদেশের নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্য ও বিশ্ব সাহিত্য বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করা মিস সুন ফেং লিং এ প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ লেখকের পুরস্কার লাভ করেন। তিনি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের অভাব অনটনের কারণে ১৬ বছর বয়সে তিনি চাকরি করা শুরু করেন।

পরে তিনি বাবা মা'র সাথে উহান শহরের এক বাজারে সবজি বিক্রি করেন। একদিন তিনি বাজারের পাশে বইয়ের দোকানে গিয়ে রবি ঠাকুরের কবিতা পড়েন। তখন থেকে তিনি ঠাকুরের লেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

'আমি ছোটবেলা থেকে কবিতা পড়তে পছন্দ করি এবং আমি সাহিত্যের খুব অনুরাগী। তবে ১৬ বছর বয়সে পরিবারের অভাবের কারণে আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। চাকরির পরিবেশ আমার ভালো লাগে না।তাছাড়া চাকরিতে জীবনযাপনের পরিবেশও কঠোর।

২০০২ সালে আমি বাবা মার সাথে উহান শহরের একটি বাজারে সবজি বিক্রি করছিলাম। একদিন আমি বইয়ের দোকানে রবি ঠাকুরের কবিতার বই দেখি।

এ বইটি কেনার পর বাজারের কাজে ব্যস্ত না হয়ে আমি তা পড়ি ও মুখস্থ করি। তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে আমার বেশি জানা ছিলো না। তার অনেক কবিতার কথাও বুঝতে পারতাম না, তবে ভীষণ ভালো লাগতো। কবিতার কথা পড়তে দারুণ সুন্দর। তারপর আমি উহানে চাকরি করার পাশাপাশি লেখাপড়া করি। বিশেষ করে কবিতা নিয়ে লেখাপড়া করি।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যখন আমি এ প্রতিযোগিতার বিজ্ঞপ্তি দেখি তখন আমি বলি যে, আমি আমার মনের আবেগ বর্ণনা করতে চাই এবং ঠাকুরের প্রতি আমার অনুভব সবাইকে জানাতে চাই।

মিস সুনের লেখায় তিনি নিজের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা, বাধ্যতামূলকভাবে চাকরি করা, বাজারে সবজি বিক্রি করা ও সংগ্রামের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার গল্প বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা তার জন্য আধ্যাত্মিক রিযিক। তার বিভিন্ন সুন্দর কবিতায় জীবনের সৌন্দর্য অনুভব করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য তিনি চারবার পরীক্ষায় অংশ নেন। যখন তিনি ভর্তি পরীক্ষা ব্যর্থ হন, তখন তিনি ঠাকুরের কবিতা পড়ে নিজেকে উত্সাহিত করেন। অবশেষে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার পেইচিংয়ে নিযুক্ত সাংবাদিক সুতীর্থ পেত্রোনবিস মনে করেন, রবি ঠাকুর বর্তমানে চীন ও ভারতের মৈত্রীর সেতুতে পরিণত হয়েছেন। চীনা পাঠকরা ঠাকুরের কবিতা ও গবেষণার মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতিকে বেশ বুঝতে সক্ষম। তিনি বলেন,

'আজকের এ বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চীনা বিশেষজ্ঞরা চীন-ভারত সম্পর্কের উন্নয়ন নিয়ে মত বিনিময় করেছেন। আমার ধারণায় এ ধরনের অনুষ্ঠান যত বেশি হবে তত ভালো। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ধরনের আদান-প্রদান করলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য সহায়ক হবে।'

 



অনুষ্ঠানে চীন, ভারত ও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা পৃথক পৃথকভাবে মন্তব্য করেন। তারা মনে করেন, চীনা জনগণের কাছে রবি ঠাকুর ব্যাপকভাবে সম্মানিত হবার মূল কারণ শুধু তার চমত্কার কবিতাই নয়, বরং চীনা জনগণের প্রতি তার যে গভীর আবেগ এবং দ্বিপাক্ষিক মৈত্রীর জন্য যে মহান অবদান তাও যুক্ত রয়েছে।

পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি ভাষা ইন্সটিটিউটের ডিন ম্যাডাম নিং ছি বলেন,

'১৯১৩ সালে রবি ঠাকুর এশিয়ানদের মধ্যে প্রথম নোবেল সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। আমি যতদূর জানি, এ পর্যন্ত মোট ১১১ জন এ পুরস্কার লাভ করেছেন। তবে তাদের লেখা ১০০ বছর পর চীনের পাঠক ও পণ্ডিতদের কাছে এত জনপ্রিয় ও সম্মানিত নয়। শুধু রবি ঠাকুরের লেখাই এ গৌরব অধিকার করে।

এর মূল কারণ হলো তিনি শুধু বিশ্ব সাহিত্যের একজন চমত্কার কবিই নন, বরং তার মন স্নেহ ও ন্যায়ে ভরা। তিনি ভারতের জনগণের চমত্কার প্রতিনিধি। তার মনে চীনের প্রতি গভীর ভালোবাসা রয়েছে এবং তিনি চীনের উন্নয়নের প্রতি আশাবাদী।

১৯২৪ সালে তিনি যখন চীন সফর করেন তখন 'চীনের আদর্শ' চিন্তাধারা দাখিল করেন। এ চিন্তাধারার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সি'র উত্থাপিত 'চীনা স্বপ্ন' ও 'অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি'র মধ্যে অনেক মিল রয়েছে।

বাংলাদেশের কিশোর বিশ্বাস পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় চীনা ভাষা শিখেছেন এবং এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রিও লাভ করেন।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐচ্ছিক কোর্স বাংলা ভাষার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেবেন। রবি ঠাকুর সম্পর্কে তিনি গৌরব নিয়ে বলেন, রবি ঠাকুর শুধু ভারতের নন, তিনি বাংলাদেশ তথা বিশ্বের।

হাজার হাজার বছর ধরে চীন ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদান ও বিনিময়ের মধ্যে ঠাকুর একজন চমত্কার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। তার সাহিত্য এবং দু'দেশের মৈত্রীর জন্য যে প্রচেষ্টা তা দু'দেশের জনগণের পারস্পরিক সমঝোতার জন্য সহায়ক।

প্রায় ১০০ বছরের কাছাকাছি হলো তিনি চীনে তার মন রেখে গেছেন। সেই মন মৈত্রীর বীজে পরিণত হয়ে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে অঙ্কুরিত হয়েছে। চীনা গণ বৈদেশিক মৈত্রী পরিষদের উপ-মহাপরিচালক মি. হু সি শে বলেন,

এক সংস্কৃতি অন্য দেশের মাটিতে বপন করা, পাতা বড় হওয়া, তা থেকে বোঝা যায় যে, চীন ও ভারতের সংস্কৃতিতে পরিপূরক ও সহনশীল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ধরনের সংস্কৃতি দু'দেশের সংস্কৃতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। চীন ও ভারতের সহযোগিতা ও আদান-প্রদানে সাংস্কৃতিক বিনিময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়, গল্প শুনতে শুনতে আমাদের অনুষ্ঠানের সময়ও ফুরিয়ে এলো। তবে অনুষ্ঠান শেষ করার আগে আপনাদের জন্য রয়েছে একটি চমত্কার রবীন্দ্র সঙ্গীত।

বন্ধুরা, গান শুনতে শুনতেই শেষ করছি আমাদের অনুষ্ঠান। আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না।

আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

রেডিওয়ের মাধ্যমে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা শুনতে মিস করলে বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে শুনতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো www.bengali.cri.cn

এবার তাহলে বিদায়। আসছে সপ্তাহের একইদিনে একই সময়ে আবারো আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। থাকুন সুস্থ ও আনন্দে। চাই চিয়ান।(সুবর্ণা/টুটুল)


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040