Web bengali.cri.cn   
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চীনা মন ও চীনাদের কাছে রবীন্দ্রনাথ
  2015-08-12 16:20:41  cri







 













সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা ভালো আছেন? সুদূর পেইচিং থেকে সবাইকে আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন 'বিদ্যাবার্তা'। আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুনবেন শিক্ষা সম্পর্কিত খবর। এর পর শুনবেন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চীনা মন ও চীনাদের কাছে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত কিছু তথ্য। পরিবেশন করছি সুবর্ণা ও এনামুল হক টুটুল।


চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিনিময় বিভাগের বৈদেশিক অধ্যয়ন কার্যালয়ের পরিচালক ইয়ান পিং ছেন বলেন, বিদেশে অধ্যয়ন করা, চীনে অধ্যয়ন করতে আসা এবং দেশ-বিদেশে যৌথভাবে অধ্যাপনা করাসহ শিক্ষার্থীদের মোট সংখ্যার দিক থেকে চীন বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম আন্তঃদেশীয় শিক্ষাদান রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি চীনের কুইইয়াং শহরে আয়োজিত চীন-আসিয়ান আন্তঃদেশীয় শিক্ষাদান বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনারে তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে প্রায় ৪.৬ লাখ চীনা শিক্ষার্থী বিদেশে অধ্যয়ন করার জন্য যান এবং চীনে প্রায় ৩.৫ লাখ বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করতে আসেন। এর মধ্যে চীন ও বিদেশের সহযোগিতামূলক শিক্ষা সংস্থা ও প্রকল্পের সংখ্যা ২০৫৬টি। চীনের প্রায় ৬০০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বের ৩৩টি দেশ ও অঞ্চলের ৪০০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

চীন-আসিয়ানের অষ্টম শিক্ষা বিনিময় সপ্তাহ সম্প্রতি চীনের কুইইয়াং শহরে আয়োজিত হয়। চীনের শিক্ষামন্ত্রী ইউয়ান কুই রেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসিয়ানের বিভিন্ন দেশের ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়েছে, এতে দু'পক্ষের যুবকরা পরস্পরের ভাষা ও সংস্কৃতি জানার জন্য চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আসিয়ানদেশগুলোতে চীনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১.২ লাখ এবং চীনে আসিয়ানদেশগুলোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। বর্তমানে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আসিয়ানদেশের ভাষা কোর্স চালু করেছে। আসিয়ানের ১০টি দেশে মোট ৩০টি কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট ও ৩০টি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলে কনফুসিয়াস ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আগামী বছর চীন ও আসিয়ানের শিক্ষা বিনিময় বর্ষ পালিত হবে বলে দু'পক্ষ প্রস্তুতি নিয়েছে। এ বর্ষের ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দু'পক্ষের শিক্ষা বিনিময়ের সাফল্য একদিকে যেমন বিশ্বের কাছে তুলে ধরা যাবে তেমনি দু'পক্ষের শিক্ষাদানের সাফল্যের পরিচয়ও সবার কাছে পৌঁছানো যাবে।

বন্ধুরা, এখন শুনবেন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চীনা মন ও চীনাদের কাছে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত কিছু তথ্য।

সম্প্রতি চীনের পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ে 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চীনা মন' শীর্ষক এক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। ১৯২৪ সালে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চীনা কবিদের আমন্ত্রণে চীন সফরে আসেন। চীন থেকে ভারত ফিরে যাবার আগে তিনি আন্তরিকভাবে বলেন, 'আমার মন চীনে রয়ে গেছে'।

চীন ও ভারতের আদান-প্রদান দিন দিন ঘনিষ্ঠ হয়েছে বলে দু'দেশের জনগণের পারস্পরিক সমঝোতাও গভীরতর হয়েছে। বর্তমানে আরো বেশি লোক ঠাকুরের চীনা মনের গভীর যত্ন নিচ্ছেন। এ মন চীন ও ভারতের মৈত্রীর বীজের মতো চীনের ভূভাগে অঙ্কুরিত হচ্ছে।

'ঠাকুরের চীনা মন' বইয়ের জন্য 'ঠাকুর আমার মনে রয়েছেন' নামে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে লেখা সংগ্রহ করা হয়। চীনের শেনচেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারত গবেষণা কেন্দ্র, পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভারতের জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।


(অধ্যাপক ইউ লোং ইউ এবং চীনা গণ বৈদেশিক মৈত্রী পরিষদের উপ-মহাপরিচালক মি. হু সি শে)


শেনচেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারত গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক মি. ইউ লোং ইউ বলেন, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট দু'বার এ প্রবন্ধ যাচাই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। চীনের বিভিন্ন মহলের পণ্ডিত, বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং ঠাকুরের সাহিত্যের অনুরাগীসহ অনেকে সক্রিয়ভাবে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। প্রত্যেক প্রবন্ধেই ঠাকুরের প্রতি চীনাদের গভীর আবেগ ও ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়।'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চীনা মন' বইয়ের নামকরণ নিয়ে তিনি বলেন,

আসলে ১৯২৪ সালে যখন ঠাকুর চীন থেকে হংকং অতিক্রম করে ভারত ফিরে যান, তখন চীনে তার অনুবাদক বিখ্যাত কবি স্যু চি মো গুরুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি দেশে ফিরে যাবেন, কোনো জিনিস চীনে রয়ে গেছে? ঠাকুর মজা করে উত্তরে বলেছিলেন, 'আমার মন চীনে রয়ে গেছে'। সেই গল্পের কারণে আমরা এ বইয়ের নাম নির্ধারণ করেছি। সবাই মনে করেন তা খুবই ভালো একটি নাম। ঠাকুরের যে মন চীনে রয়ে গেছে তা মৈত্রীর বীজের মতো চীনা যুবকদের মধ্যে অঙ্কুরিত হবে।

তিনি আরো বলেন, ২০১৩ সালে প্রথম যখন প্রবন্ধ যাচাই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় তখন ২১৬টি লেখা পাওয়া যায়। তবে ২০১৪ সালে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। এসময় চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মোট ১১৭৮টি লেখা পাওয়া যায়, যা আগের চেয়ে ৫ গুণেরও বেশি।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভারত সফর করেন। সফরকালে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেক কবিতার কথাকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেন। এতে চীনাদের মধ্যে ঠাকুরের প্রতি আরো গভীর আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সফরে প্রেসিডেন্ট সি বলেন,

'আমি ছোটবেলা থেকে ভারত সভ্যতার অনুরাগী। ভারতের সুদীর্ঘকালের ইতিহাস আমাকে আকর্ষণ করে। গঙ্গা সভ্যতা, বৈদিক সংস্কৃতি, কুশান রাজবংশ, গুপ্ত রাজবংশ ও মুঘল রাজ্যসহ বিভিন্ন বিষয় বিভিন্ন ঐতিহাসিক বই থেকে পড়েছি। কিছু কবিতা পড়েছি। রবি ঠাকুর লিখেছেন,

'সূর্য ডুবে গেছে বলে আফসোস করতে থাকলে, আপনি তারা দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন'।'যে যত বড়, সে তত বিনয়ী'। 'মিথ্যা ব্যর্থতা সহ্য করতে পারে না, আর সত্য ব্যর্থতাকে ভয় পায় না'। 'আমরা পৃথিবীকে পড়তে ভুল করি এবং বলি যে, এ আমাদের বিভ্রান্ত করেছে'। 'গ্রীষ্মের ফুলের মত জন্ম নেওয়া এবং শরতের পাতার মত ঝড়ে যাওয়ার নামই জীবন'। এসব সুন্দর ও দার্শনিক কথা আমার জীবনে অনুপ্রেরণা দেয়। আমার ধারণা অনেক চীনা পাঠক আর আমার মন্তব্য একই'।


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040