প্রিয় শ্রোতা, এখন আমরা বেড়াতে যাব সিন চিয়াং স্বায়ত্বশাসিত এলাকার অন্য একটি শহর 'ইলি'-তে।
সিন চিয়াংয়ের ইলি, জাপানের হোক্কাইডোর ও ফ্রান্সের প্রোভঁস—বিশ্বের তিন বৃহত্তম ল্যাভেন্ডার উত্পাদনকারী অঞ্চল। বর্তমানে চীনের বাজারে ল্যাভেন্ডার তেল বিক্রি হয় তার ৯০ শতাংশ ইলিতে উত্পন্ন হয়। সম্প্রতি ইলি'র ল্যাভেন্ডার আন্তর্জাতিক বাজারেও সুনাম অর্জন করেছে। এখন ল্যাভেন্ডার ফুল ফোটার সময়। আমরা সি আর আইর সাংবাদিক ছাং সুয়ের সঙ্গে ইলির ল্যাভেন্ডার শিল্প সম্পর্কে জানতে সেখানে যাব।
প্রতি বছরের জুন থেকে আগষ্ট পর্যন্ত ল্যাভেন্ডার ফুল ফোটে। তখন গোলা ইলি বেগুনি ফুলের সাগরে পরিণত হয় ।
চলতি বছর ইলির ল্যাভেন্ডার হংকং, তাইওয়ান ও ম্যাকাওয়ের অসংখ্য পর্যটক আকর্ষণ করেছে। ম্যাকাও থেকে আসা চেন নি ল্যাভেন্ডার ফুলের সাগরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিককে জানান তার আনন্দে কথা, ভাল লাগার কথা। তিনি বলেন, "মনে হয় আমি ফ্রান্সে দাঁড়িয়ে আছি। ইলি একটি খুব আকর্ষনীয় দর্শনীয় স্থান। ল্যাভেন্ডার দেখতে এখন আর প্রোভঁসে যাওয়ার দরকার নেই। নিজের দেশেই দেখতে পারি। "
ল্যাভেন্ডার শুধু বিশেষ পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে। ল্যাভেন্ডারের মূল উত্পাদন অঞ্চলগুলোর সবগুলোই উত্তর অক্ষাংশ ৪২-৪৪-এর মধ্যে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০-৮০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। ইলি একটি উপত্যকা। পশ্চিম দিক থেকে আসা আটলান্টিক মহাসাগরের ভেজা বাতাস, দক্ষিণ দিকের মরুভূমির ধূলিকণা এবং উত্তর দিকের শীতল বাতাস আটকে যায় প্রাকৃতিকভাবেই। তা ছাড়া, ইলি অঞ্চলে সূর্যের আলোও পড়ে যথেষ্ট। এইসবই ল্যাভেন্ডার চাষের জন্য প্রয়োজন।
প্রতি বছরের জুন মাসে ইলি'তে অনুষ্ঠিত হয় ল্যাভেন্ডার উত্সব। চলতি বছরের উত্সবে অনুষ্ঠিত হয় 'ল্যাভেন্ডার শিল্প উন্নয়ন শীর্ষ ফোরাম'। এতে অংশগ্রহণকারী, ফ্রান্সের তেল নিষ্কাশন বিশেষজ্ঞ, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা ল্যাভেন্ডার ক্যাটালগের লেখক ডাক্তার পিয়ের রথ ইলি'র ল্যাভেন্ডারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, "অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীনের সিন চিয়াং, ও ফ্রান্সের প্রোভঁসের ল্যাভেন্ডার তেলের তুলনামূলক পরীক্ষা চালিয়েছি আমি। এতে দেখেছি চীনা ও ফ্রান্সের তেলের মান সবচেয়ে ভাল। প্রোভঁসের ল্যাভেন্ডার তেলের তুলনায় ইলি'র তেলের দাম কম তবে মান প্রায় সমান। চীনের ল্যাভেন্ডার তেল সত্যি খুব ভাল।"
ইলি'র হু ছেং জেলা ল্যাভেন্ডার উত্পাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। মানুষ 'হু ছেং'-কে চীনা ল্যাভেন্ডারে জন্মস্থান বলে ডাকে। বিশ্বে একমাত্র হু ছেং-এ বছরে দু'বার ল্যাভেন্ডার ফুল ফোটে। বর্তমানে হু ছেংতে ল্যাভেন্ডার খেতের আয়তন ২ হাজার হেক্টর এবং ১৫ হাজার কৃষক ল্যাভেন্ডার চাষ করেন। ল্যাভেন্ডার শিল্পের ভবিষ্যত সম্পর্কে হুছেং জেলার কৃষি বিভাগের প্রধান ছাও সি পিং বলেন, "ভবিষ্যতে আমরা ল্যাভেন্ডারের বহুমুখীকরণের উপর জোর দিব। একদিকে দর্শনীয় ল্যাভেন্ডার ফুল উত্পাদন করা হবে এবং অন্যদিকে উত্পাদান করা হবে উন্নত মানসম্মত ল্যাভেন্ডার তেল উত্পাদনকারী ফুল। বর্তমানে আমাদের ল্যাভেন্ডার তেলের ফলন ৬৬৬ বর্গমিটারে ৫-৬ কেজি। নতুন প্রজাতি আমদানি করলে তেলের ফলন বেড়ে হবে ৮-৯ কেজি। আমাদের ল্যাভেন্ডার খেতের আয়তনও প্রতিবছর ৩ বর্গকিলোমিটার করে বাড়বে। উত্পাদনের মোট মূল্যও ১০০ বিলিয়ান ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে।"
ল্যাভেন্ডার চাষ ছাড়া, ইলিতে গড়ে উঠেছে ল্যাভেন্ডার শিল্প চেইন। সিন চিয়াং চে ইউরো রাজকুমারী কোম্পানি প্রধানত ল্যাভেন্ডার পণ্য গবেষণা ও পর্যটন ব্যবসা করে। কোম্পানির সি ই ও রেন কে বলেন, "চে ইউরো রাজকুমারী ল্যাভেন্ডার বাগান প্রতিষ্ঠা করেছি আমরা এবং দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটককে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছি। এখানে ল্যাভেন্ডার দেখার জন্য ফ্রান্স থেকেও পর্যটক আসছে। এইসব পর্যটকের কাছ থেকেও আমরা বিভিন্ন ধারণা লাভ করে থাকি। আমরা ল্যাভেন্ডারের বালিশ উত্পাদন করি এবং চিত্র, বই, মৃত্শিল্প ও সূচিকর্মসহ নানা খাতে ল্যাভেন্ডারের উপাদান ব্যবহার করি।"
তাইওয়ান থেকে আসা মিঃ চৌ ইং চিয়ে বলেন, "তেল ও দর্শনীয় ল্যাভেন্ডার ছাড়া, ইলি'র উচিত অন্য পণ্যও উত্পাদন করা। যেমন, ল্যাভেন্ডারের ঔষধি চা। ল্যাভেন্ডার ছাড়াও অন্য গাছ বিশেষ করে ঔষধি উদ্ভিদ উত্পন্ন করাও জরুরি।"
(শিশির/আলিম)