

ইউএসটিবির ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মান ও ক্রীড়া তত্পরতা চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চমত্কার। ইউএসটিবি'র শিক্ষার্থীদের অ্যাথলেটিক্স দল বহুবার চীন ও পেইচিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়। নারী বাস্কেটবল প্রতিনিধি দল পেইচিং শহরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় ১২ বারের মতো শীর্ষস্থান অধিকার করে।
২০০৮ সালে ইউএসটিবি'র স্টেডিয়ামকে পেইচিং প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমসের স্টেডিয়াম হিসেবে জুডো, তাইকন্দো, হুইলচেয়ার বাস্কেটবল ও হুইলচেয়ার রাগবি প্রতিযোগিতার জন্য ব্যবহার করা হয়।
যারা ইউএসটিবিতে ভর্তি হতে চান তারা প্রথমে http://onlineapply.ustb.edu.cn/ এই ঠিকানায় ক্লিক করে আবেদনপত্র পূরণ করতে পারেন। তারপর প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র, নিজের সংক্ষিপ্ত পরিচয়, দুই জন অধ্যাপকের সুপারিশ পত্র ও চীনা ভাষার মানদণ্ড সম্পর্কিত এইচএসকে পরীক্ষার ফলাফল এবং শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দেবেন। প্রতি বছরের পয়লা মার্চ থেকে পয়লা জুন পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।
ইউএসটিবি'র বিদেশি শিক্ষার্থী কার্যালয় জুন মাসের শেষ দিকে যোগ্য প্রার্থীদের নামতালিকা ঘোষণা করবে এবং জুলাই মাসের শুরুতে বিজ্ঞপ্তি পাঠাবে। বিদেশি শিক্ষার্থীর কার্যালয়ের যোগাযোগ নম্বর ০০৮৬-১০-৬২৩৩২৯৪৩, এবং ইমেইল ঠিকানা admission@ustb.edu.cn
চীনের গুণগতমানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ইউএসটিবিতে অনেক জ্ঞানী, অনেক অভিজ্ঞ ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণ প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এখন আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির তথ্য তুলে ধরবো।
উ জি লিয়াং হলেন চীনের কাঁচামাল বিষয়ক বিজ্ঞানী। ১৯১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি চেচিয়াং প্রদেশের পুচিয়াং জেলার ছিয়ানউ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তাঁর বাবা মারা যান, মা ও বোনের যত্নে তিনি বড় হতে থাকেন। তিনি পুচিয়াং জেলার পুইয়াং প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাংচৌ শহরে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চেচিয়াং প্রদেশের হাংচৌ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি পেইইয়াং শিল্প একাডেমিতে ভর্তি হন।
প্রথমে তিনি খনিজ ও ধাতুবিদ্যা বিষয়ে লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি বিমানের যন্ত্রপাতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি পেইইয়াং শিল্প একাডেমি থেকে স্নাতক হওয়ার পর ইউয়ুননান প্রদেশের বিমান কারখানায় ডিজাইনার হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৪২ সালে জাপানের আগ্রাসী বিমান হামলায় এ কারখানা বিধ্বস্ত হলে কারখানার কর্মীদেরকে খুনমিং শহরে স্থানান্তর করা হয়। তখন তিনি কেন্দ্রীয় যন্ত্রপাতি কারখানার উপ-ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৩ সালে তাঁর বড় বোনের সাহায্যে তিনি নিজ খরচে যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগী ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে ধাতুবিদ্যা বিষয়ের উপর মাস্টার্স করেন।
তিনি অত্যন্ত পরিশ্রম ও মনোযোগের সাথে ধাতুবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেন এবং সফলভাবে কার্নেগী ইন্সটিটিউট থেকে ডক্টরেট ডিগ্রীও লাভ করেন।এরপর তিনি কনস্তানতিউস বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁচামাল বিভাগে উপ গবেষকের দায়িত্ব পালন করেন। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫০ সালে তিনি চীনের ধাতুবিদ্যা শিল্পের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে ফিরে আসেন।
পরে তিনি পেইফাং যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের থাংশান শিল্প একাডেমিতে (বর্তমান নাম: থাংশান যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়) ধাতুবিদ্যা বিষয়ক অধ্যাপকে পরিণত হন।
চীনের শ্রেষ্ঠ কাঁচামাল বিষয়ক বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি চীনের অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষায় কাঁচামাল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে তিনি চীনের মজুতকৃত অ্যালুমিনিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ উপাদানের মাধ্যমে নতুন ধরনের মিশ্র ইস্পাত শিল্প নিয়ে গবেষণা করেন, যা চীনের মিশ্র ইস্পাত শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
১৯৬৪ সালে চীনের অর্থনীতির দুর্বল অবস্থায় তিনি নিজস্বভাবে ইউরেনিয়াম আইসোটোপ আলাদা করার বিশেষ উপাদান আবিষ্কার করেন এবং তা চীনের পরমাণু বোমার গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৯৯ সালে তিনি 'দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ও একটি উপগ্রহ' নামক চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পদক লাভ করেন।
ইউএসটিবি'র আরেকজন বিখ্যাত শিক্ষার্থীর নাম চাং জি লিন। ১৯৮৪ সালের ২২ মার্চ তিনি হোপেই প্রদেশের শিচিয়াচুয়াং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পরে তিনি রাজধানী পেইচিংয়ে বসবাস করা শুরু করেন।
তিনি ৫৭তম মিস ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হন। চীনাদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম মিস ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি হার্ডল খেলোয়াড় হিসেবে প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। ১৯৯৮ সালে পেইচিং শহরে আয়োজিত দশম গেমসে তিনি নারী দলের ১০০ মিটার হার্ডল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। একই বছর তিনি ব্রোঞ্জপদকও লাভ করেন।
১৯৯৯ সালে তিনি চীনের ইয়থ এ্যাথলেটিক্স নারী দলের ১০০ মিটার হার্ডল প্রতিযোগিতায় চতুর্থ স্থান লাভ করেন।
চাং জি লিন ২০০২ সালে ইউএসটিবিতে ব্যবসা প্রশাসন বিষয় নিয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। ২০০৩ সালে তিনি নতুন সিল্করোড মডেল প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং এ মডেল কোম্পানির পেশাদার মডেলে পরিণত হন। পেশাদার মডেল হিসেবে নানা ধরনের ফ্যাশন ম্যাগাজিনে তাঁর ছবি ছাপানো হয়। বিশ্বের বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার জর্জ আমার্নি তাঁকে বেশ পছন্দ করেন।
২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে তিনি মিস ওয়ার্ল্ড ফাইনাল প্রতিযোগিতায় ব্যক্তিগত পুরস্কারের শাখায় ব্রোঞ্জপদক লাভ করেন। একই বছরের ২৪ নভেম্বর চীনের হাইনান প্রদেশের সানইয়া শহরে আয়োজিত ৫৭তম মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার ফাইনালে তিনি শ্রেষ্ঠ মডেল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হন।
চাং জি লিন নানা ধরনের দাতব্য অনুষ্ঠানে অবদান রাখা শুরু করেন। যেমন চীনের দরিদ্র পাহাড়ি অঞ্চলে চিকিত্সা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ক্লিনিক নির্মাণ করেন। এ কারণে তিনি তাঁর শ্রেষ্ঠ চীনা মাটির শিল্পকর্মটিও বিক্রি করেন।
২০০৮ সালে তিনি মিস ওয়ার্ল্ডের পক্ষ থেকে বিশ্বের অনেক দেশ ভ্রমণ করেন এবং নানা ধরনের দাতব্য অনুষ্ঠানে অংশ নেন। মিস ওয়ার্ল্ডের কার্যমেয়াদে তিনি মোট ৩২০ লাখেরও বেশি মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেন। এর সঙ্গে সঙ্গে পেইচিং অলিম্পিক গেমস সম্পর্কিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও অবদান রাখেন। চীনের অনেক গায়ক ও গায়িকার সঙ্গে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের বৈশিষ্ট্যময় গান 'পেইচিং আপনাকে স্বাগত জানায়' গানে কণ্ঠ দেন তিনি।
২০১০ সালে তাঁকে শাংহাই বিশ্ব মেলার দূত হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। একই বছর তিনি জাতিসংঘের নারী অধিকার ব্যুরোর জেন্ডার সমতা বিষয়ক উদ্যোক্তার পুরস্কার লাভ করেন। মডেল শোতে অংশ নেয়া ছাড়াও চীনের কয়েকটি বিখ্যাত চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন তিনি।
সুপ্রিয় বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা পেইচিং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা ইউএসটিবি সম্পর্কে কিছু তথ্য জানলেন। জানলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার নানান দিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তিত্বের পরিচয়।
আর এরই সঙ্গে ফুরিয়ে এলো আমাদের আজকের 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠানের সময়। আগামী সপ্তাহের 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠানে আমরা ইউএসটিবি'র কয়েকজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলবো। তাদের কাছ থেকে আপনারা এ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। তাই আমাদের সঙ্গেই থাকুন আর শুনতে থাকুন আপনাদেরই প্রিয় 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠান।
সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত বা পরামর্শ থাকলে আমাদের কাছে চিঠি লিখুন। চিঠিতে তুলে ধরুন এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনার ভালোলাগা, তুলে ধরুন আপনার মতামত ও পরামর্শ। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn
বন্ধুরা, রেডিওয়ের মাধ্যমে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা শুনতে মিস করলে বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে শুনতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো Bengali.cri.cn।
এবার তাহলে বিদায়। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। থাকুন সুস্থ ও আনন্দে। আগামী সপ্তাহে একই দিনে একই সময়ে আবারও কথা হবে। যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল)




