Web bengali.cri.cn   
পেইচিং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
  2015-04-29 15:25:49  cri


'বিদেশি শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে চীনা ভাষা শিখলে স্বদেশে ফিরে গিয়ে তারা ভালো চাকরি খুঁজে বের করতে পারবে'। ঘানার শিক্ষার্থী মানেলি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, চীনে লেখাপড়ার অভিজ্ঞতার কারণেই তিনি বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি হোপেই চীনা মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করছেন। তিনি পাঁচ বছর ধরে এই কলেজে পড়ছেন। চিকিত্সা প্রযুক্তি সম্পর্কে তিনি বেশ দক্ষতা অর্জন করেছেন। তিনি চমত্কার চীনা ভাষা বলতে পারেন। তিনি এখন চীনে নিযুক্ত ঘানা দূতাবাসের শিক্ষার্থী পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

বর্তমানে চীনে ঘানার শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। ঘানায় পুঁজি বিনিয়োগ করা চীনা কোম্পানির সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও আরো বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

সম্প্রতি চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় চীনে ২০১৪ সালের বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রকাশ করেছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ২০৩টি দেশ ও অঞ্চলের ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৫৪ জন বিদেশি শিক্ষার্থী চীনে লেখাপড়া করতে আসেন, এ সংখ্যা ২০১৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ৫.৭৭ শতাংশেরও বেশি। গত ১০ বছরে চীনে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা অব্যাহতভাবে বেড়েছে। আর এ কারণে চীন বিশ্বের তৃতীয় বিদেশি শিক্ষার্থীর গন্তব্য স্থানে পরিণত হয়েছে।

গত ১১ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চীনের হোপেই প্রদেশের শিচিয়াচুয়াং শহরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের চীনা ভাষার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। বিশ্বের অনেক দেশের শিক্ষার্থীরা এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। নিজের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর জন্য এসব শিক্ষার্থী চীনা ভাষা শেখার জন্য চীনে আসেন।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাজিকিস্তানের শিক্ষার্থী লুনান চীনা ভাষা শিখতে চীনের হোপেই প্রদেশে আসেন। তিনি হোপেই নর্মালস বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরের চীনা ভাষার প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেন। ভবিষ্যতে চীনা ভাষার অনুবাদক হিসেবে চাকরি করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। লুনান বলেন, চীন দ্রুত উন্নয়ন করছে। চীনে আসার আগে তিনি চীনা ভাষাকে প্রধান বিষয় হিসেবে বাছাই করেন। সম্প্রতি তিনি চীনের সংবাদমাধ্যম থেকে 'এক অঞ্চল, এক পথ' সম্পর্কিত বিষয় জেনেছেন এবং তিনি মনে করেন, এর ফলে বিদেশি চীনা ভাষার শিক্ষার্থীদের আরো বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি এখন চীনা ভাষা, ইংরেজি, রুশ ও কোরিয়ান ভাষা বলতে পারি। তাছাড়া আমি চীনে লেখাপড়া করেছি, স্বদেশে ফিরে যাওয়ার পর আমি একটি চীনা কোম্পানিতে চাকরি করবো। আমি মনে করি তা কঠিন ব্যাপার নয়।

অনেক শিক্ষার্থীদের কাছেই বিদেশে অধ্যয়নের খরচ একটি চিন্তার বিষয়। ভারতের মেয়ে কুসামি হোপেই ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সা বিভাগ থেকে স্নাতক হয়েছেন। তিনি বলেন, চীনে চিকিত্সার বিষয়ে অধ্যয়নের খরচ তুলনামূলকভাবে একটু কম। ভারতে চিকিত্সা বিষয়ে অধ্যয়ন খরচ খুবই বেশি এবং প্রতিযোগিতাও তুমুল। কারণ ভারতে ডাক্তারি পেশা অনেক মার্জিত ও শালীন, তাই অনেকে চিকিত্সা বিষয়ে পড়তে আগ্রহী। তবে গুণগতমানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় খুবই কম। চীনে চিকিত্সা বিষয়ে অধ্যয়ন করার পাশাপাশি দেশটির ভাষা ও ঐতিহ্যিক সংস্কৃতিও জানা যায়, তাই ভারতের অনেক শিক্ষার্থী অদূর চীনে লেখাপড়া করতে আসেন।

হোপেই নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল কালচার একচেঞ্জ একাডেমির উপ-প্রধান কুও লি চুন মনে করেন, চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন এবং বিদেশের সঙ্গে আর্থ-বাণিজ্যিক আদান-প্রদান ও বিনিময়ের কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য চীনা ভাষা থেকে শুরু করে ইন্টারনেট প্রযুক্তি, মহাকাশযান, গাড়ি মেরামতসহ বিভিন্ন বিষয় সম্প্রসারিত হয়েছে।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা চীনে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন শুনলেন।

এখন আমরা পেইচিং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

 

পেইচিং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা ইউএসটিবি ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর

পুরনো নাম পেইইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়। চীনের থিয়ানচিন বিশ্ববিদ্যালয় ও ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৬টি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের খনিজ ও ধাতুবিদ্যা বিভাগ নিয়ে গঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয় এখন চীনের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি।

এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরের মধ্যে ১.৬ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকে চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা বিশেষজ্ঞ পরিণত হয়েছেন।

ইউএসটিবি পেইচিং শহরের উত্তরাঞ্চলের হাইতিয়ান এলাকার স্যুয়েইউয়ানলুতে অবস্থিত। পূর্বাঞ্চলীয় উপকণ্ঠ এলাকা কুয়ানচুয়াং ও ইয়ানছিং এলাকায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দু'টি শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে।

ইউএসটিবিতে স্নাতক বিষয় ৪৮টি,এমবিএসহ মাস্টার্স ডিগ্রির অন্যান্য প্রধান বিষয় ২০টি। এর মধ্যে ধাতুবিদ্যা, কাঁচামাল, খনিজ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ক চারটি প্রধান বিষয় চীনের শীর্ষস্থান অধিকার করে। ২০১৪ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ হাজারেরও বেশি। তাদের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮২৯ জন, বয়স্ক শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার ৮০০ জন ও ইন্টারনেট কোর্সের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ হাজারেরও বেশি। ইউএসটিবি'র শিক্ষকের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৮৫ জন। তাদের মধ্যে ৪ জন চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একাডেমির একাডেমিশিয়ান, ৩ জন চীনের শিল্প একাডেমির একাডেমিশিয়ান ও ৩ জন চীনের শীর্ষ পর্যায়ের বিজ্ঞানী।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায় ইউএসটিবি'র দক্ষতা ও সুনাম অত্যন্ত চমত্কার। ১৯৭৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ৫৯৩টি পেটেন্ট আবেদন করেছে ইউএসটিবি। এর মধ্যে ইস্পাত কাঁচামাল ও ইস্পাত পণ্যদ্রব্যে বায়ু দূষণ পরিসংখ্যানের হিসাব, শৃঙ্খলা ও বিনিময় পরিসেবা, বড় ধরনের খনিজ পাহাড় অনুসন্ধানের প্রযুক্তি ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল চীনের অর্থনীতির নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ইউএসটিবি অব্যাহতভাবে সমাজের পরিসেবা ও উন্নয়নের সম্ভাবনা সম্প্রসারণ করে চলেছে। এ পর্যন্ত চীনের ১১০টিরও বেশি প্রাদেশিক সরকার ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সার্বিক সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করে জার্মান আকন শিল্প বিশ্ববিদ্যালয়, মার্কিন ওয়াক রিজ জাতীয় পরীক্ষাগার ও ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি শিক্ষা ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহুমুখী দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে প্রতি বছর নানা প্রতিযোগিতায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040