![](/images/12index_07.jpg)
![](/images/12index_27.jpg)
এখন আমরা আরেকজন চীনা চিকিত্সকের সঙ্গে পরিচিত হব। পশ্চিম আফ্রিকার সিয়েরা লিয়নে বিশেষ এক ধরনের গাছ পাওয়া যায়। স্থানীয় মানুষ তাকে 'ছাতা গাছ' বলে ডাকে। এ গাছ লবণাক্ত মাটি ও খরা পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। চীনের চিকিত্সকদলগুলোও ১৯৭৩ সাল থেকে বিগত ৪২ বছর ধরে ছাতা গাছের মতোই বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে আফ্রিকার জনগণকে চিকিত্সাসেবা দিয়ে এসেছেন। ওয়াং ইয়ু এমনি একটি চীনা চিকিত্সকদলের সদস্য।
২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে ওয়াং ইয়ু আফ্রিকায় আসেন। তিনি সিয়েরা লিয়নের রাজধানী ফ্রিটাউনের Kingharman Road হাসপাতালে দু'বছরের মতো কাজ করেন। তখন দীর্ঘকালীন গৃহযুদ্ধের কারণে সিয়েরা লিয়নের অনেক অবকাঠামো বিধ্বস্ত হয়েছে। দেশের লোকসংখ্যা ৬১ লাখ হলেও, নিবন্ধিত চিকিত্সকের সংখ্যা ১০০ জনের কম। ওযাং ইয়ু বলেন, যদিও Kingharman Road সবচেয়ে ভাল স্থানীয় হাসপাতাল, এখানেও পানি ও বিদ্যুত সংকট ছিল। কখনও কখনও অপারেশন চলাকালে বিদ্যুত্ বিভ্রাট ঘটতো। তখন টর্চলাইট ব্যবহার করে অপারেশন জারি রাখা হতো। সিয়েরা লিয়নে কাজ করার অভিজ্ঞতা ওয়াং ইয়ুর অনেক ধারণা পরিবর্তন করেছে। তিনি বলেন
"আফ্রিকা আসার পর আমি অনুভব করি যে স্থানীয়দের সহায়তা দেওয়া আমার দায়িত্ব। রোগীদের করুণ চোখ দেখে এমন অনুভব আরও তীব্র হয়। আমার আফ্রিকায় আসার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। আসলে তাদের আমাদের সাহায়্য লাগবে।"
Kingharman Road হাসপাতালে চীনা চিকিত্সক ছাড়া শুধু দুজন স্থানীয় ডাক্তার কাজ করতেন। তাই চীনা চিকিত্সকদেরকেই অধিকাংশ সময় কাজ করতে হতো। প্রতি সপ্তাহে তারা ৬ দিন কাজ করতেন এবং একজন শিক্ষানবীশ চিকিত্সক হিসেবে ওয়াং ইয়ুর কাজ ছিল আরও বেশি। প্রতিদিন তিনি ২০ জনের বেশি রোগী দেখতেন। কাজের চাপ বেশি হলেও, প্রতিটি রোগীর সঙ্গে তিনি আন্তরিক ব্যবহার করতেন। অফিস থেকে বের হওয়া শেষ লোকটি হতেন তিনি। প্রায় সময়ই তার খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো হতো না। ওয়াং ইয়ু বলেন, ক্লান্ত হলেও রোগীর সন্তুষ্ট চেহারা দেখে তিনি তৃপ্ত হতেন।
সিয়েরা লিয়ন বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোর অন্যতম। সেখানকার মানুষ দরিদ্র এবং অসুখ-বিসুখে চিকিত্সকা করানোর সামর্থ্য তাদের অনেকেরই নেই। দরিদ্র রোগী দেখলে ওয়াং ইয়ু সবসময় তাদেরকে সাহায্য দিতেন। সম্ভব হলে তিনি রোগীদের বিনামূল্য ওষুধ দিতেন এবং এমনকি এজন্য নিজের পকেট থেকে অর্থ ব্যয় করতেন। ওয়াং ইয়ু বলেন, চিকিত্সা দেওয়া ডাক্তারের দায়িত্ব। ধনী বা দ্ররিদ্র, প্রত্যাক মানুষের সম্মান পাওয়া উচিত। ওয়াং ইয়ুর আচরণে অভিভূত স্থানীয় মানুষ।
Veronica Lansana Kingharman Road হাসপাতালের একজন নার্স। তিনি বলেন,
"ডাক্তার ডেভিড (ওয়াং ইয়ুর ইংরেজি নাম) আমাদের হাসপাতালে সবচেয়ে ভাল ডক্তার। প্রত্যেক রোগীকে তিনি জানাবেন কীভাবে ওষুধ খাওয়া উচিত্। একবার একজন গুরুতর রোগী এলো, কিন্তু তার কাছে টাকা নেই। ডাক্তার ডেভিড নিজের পকেট থেকে তার চিকিত্সার খরচ দেন। ওই রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালে তিনি প্রতিদিন তাকে দেখতে যেতেন। স্থানীয়রা ডাক্তার ডেভিডকে পছন্দ করেন কারণ তিনি স্নেহশীল একজন চিকিত্সক।"
২০১৪ সালের মে মাসে সিয়েরা লিয়নে ইবোলার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ২২ জুলাই ওয়াং ইয়ু ৩০ বছর বয়সী একজন নারী রোগীর দেখা পান। পরে এ রোগীর দেহে ইবোলা ভাইরাস পাওয়া যায়। এ নারীই ছিলেন সিয়েরা লিয়নের ফ্রিটাউনের প্রথম ইবোলা রোগী। রোগ নির্ণয়ের পরদিনই তিনি মারা যান। এমনকি তার চালকও মারা যান।
ওয়াং ইয়ু বলেন, এ খবর শুনে তারও অনেক ভয় লেগেছিল। একজন চিকিত্সক হিসেবে তিনি জানতেন, তিনি কতোটা বিপদের মুখে আছেন। তার পর ওয়াং ইয়ুকে পরীক্ষার জন্য আলাদা কক্ষে রাখা হয়। তিনি নিজেও ভয় পেয়েছিলেন এই ভেবে যে, তিনি ইবোলায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তার পরিবার তাকে অনেক সাহস দেন। তার সহকর্মী ও বন্ধুরা তার জন্য শুভকামনা করেন। ২১ দিন পর ওয়াং ইয়ু ইবোলা আক্রান্ত হননি বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। তিনি তার নির্জন কক্ষ থেকে বাইরে বের হয়ে আসেন। তবে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই অন্যান্য রোগীর চিকিত্সা দেওয়া শুরু করেন। বিশেষ এ অভিজ্ঞতা ওয়াং ইয়ুকে অনেককিছু শিখিয়েছে। তিনি বলেন
"একজন চিকিত্সক হিসেবে রোগীদের চিকিত্সা দেওয়া নিজের দায়িত্ব। আমরা সৈনিক, যেখানে আমাদের লাগবে ওখানে যাওয়া উচিত্।"
আন্তরিক ও আবেগপূর্ণ এমন একজন মানুষ ওয়াং ইয়ু এবং এ কারণে তার অনেক বন্ধু হয়েছে। সিয়েরা লিয়নে এমন কোনো পার্টি নেই যেখানে ওয়াং উয়ু আমন্ত্রিত না-হতেন। তার অফিসের টেবিলও সবসময় পরিপূর্ণ থাকতো বিভিন্ন উপহার সামগ্রীতে। হাসপাতালের গাড়িচালক, নার্স—সবাই ওয়া ইয়ুর বন্ধু।
বিদেশে বিশেষ করে আফ্রিকায় অপেশাদার জীবন বিরক্তিকর। সবাই শুধু টিভি দেখে বা রেডিও শোনে। তবে ওয়াং ইয়ু তার বাড়ির সামনে শতাধিক ছাতা গাছ রোপণ করেন। এ প্রসঙ্গে ওয়াং ইয়ু বলেন,
"৫০ বছর আগে থেকে চীন আফ্রিকাকে সহায়তা দিতে শুরু করে এবং আমাদের চিকিত্সকদলগুলো কঠিন পরিবেশে স্থানীয় মানুষকে সেবা দিয়ে এসেছে। এমনকি ৫০ জন চীনা চিকিত্সক আফ্রিকায় প্রাণ উত্সর্গও করেছেন। তাদের মনোবল আমাকে উত্সাহ দেয়। আমরা এ ছাতা গাছের মতো বড় হয়ে স্থানীয় মানুষের সেবায় লাগতে চাই। আমরা হয়ত সিয়েরা লিয়নের পরিস্থিতি পুরোপুরি পরিবর্তন করতে পারি না, তবে যতটুকু করতে পারি, ততটুকুই লাভ। "
![](/images/12index_27.jpg)
![](/images/12index_27.jpg)
![Play](/images/12index_11.jpg)
![Stop](/images/12index_13.jpg)
![](/images/12index_27.jpg)