গত শতাব্দীর ৮০-র দশকে চীন-জাম্বিয়া চুক্তির আওতায় চীনা গণমুক্তি ফৌজ বিনামূল্যে জাম্বিয়া ট্রাই সার্ভিস জেনারেল হাসপাতালকে সহায়তা দিতে শুরু করে। ১৯৮৪ সাল থেকে চীন ১৮ দফায় ২০০ জন সামরিক চিকিত্সক পাঠায় হাসপাতালটিতে। চীনা গণমুক্তি ফৌজের ১৭৫ নম্বর হাসপাতালের চিকিত্সক চাই ওয়েন লিয়াং ১৬তম দফায় জাম্বিয়া গিয়েছিলেন এবং দলের প্রধান হিসেবে সেখানে ২০১৩ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সেদেশে কাজ করেন।
২০১২ সালের অক্টোবর মাসে চীনা গণমুক্তি ফৌজের ১৭৫ নম্বর হাসপাতাল জাম্বিয়ায় চিকিত্সা সহায়তা দেওয়ার দায়িত্ব পায়। চাই ওয়েন লিয়াং সহায়তা দলের প্রধান নির্বাচিত হন। তিনি বলেন, প্রথমে জাম্বিয়া সম্পর্কে তার ধারণা স্পষ্ট ছিল না। তিনি জানতেন, জাম্বিয়া দুর্বল অবকাঠামোর একটি পশ্চাত্পদ আফ্রিকান দেশ। তিনি বলেন, "চীনে এমন একটি কথা আছে যে, সৈনিক হিসেবে একদিনের কাজের জন্য ১ হাজার দিনের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আমি নিজে থেকেই আফ্রিকায় যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করি।"
জাম্বিয়া আফ্রিকার মধ্য-দক্ষিণ অঞ্চলে অবস্থিত এবং ওখানে ম্যালেরিয়া ও এইডসের প্রকোপ আছে, কিন্তু এসব রোগের চিকিত্সার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। দেশটিতে চিকিত্সক ও নার্সের সংখ্যা এক হাজারেরও কম। এর ধরনের একটি বিরূপ পরিস্থিতিতে কাজ করতে যাওয়ার আগে চাই ওয়েন লিয়াং যথেষ্ট প্রস্তুতিমূলক কাজ করেন তার দল নিয়ে। তিনি বলেন, "আমি নিজেকে চিকিত্সকদলের একজন হিসেবে ভেবে দায়িত্ব শেষ করতে চাইনি, বরং জাম্বিয়া সম্পর্কে নিজে জানার এবং অন্যদের জানানোর উদ্যোগ নেই। আমি জাম্বিয়ায় চিনা দূতাবাসে একটি ইমেল পাঠাই এবং আমাদের আগের ১৫তম সহায়তা দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করি। এটা প্রস্তুতির অংশ। আমি মনে করি, প্রস্তুতি যত ভালো হবে, কাজের ক্ষেত্রেও তত সুবিধা হবে।"
বিদেশে কাজ করার ক্ষেত্রে ভাষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। চাই ওয়েন লিয়াংয়ের আমন্ত্রণে একজন ইংরেজি শিক্ষক দলের ক্লাশ নেওয়া শুরু করেন এবং দু'জন জাম্বিয়ান নাগরিক স্থানীয় মানুষের ভাষা বুঝতে প্রয়োজনীয় টিপস্ দিতে থাকেন।
জাম্বিয়া যাওয়ার আগে চাই ওয়েন লিয়াংসহ সহায়তাদলের সবাই প্রয়োজনীয় অনেককিছু শিখেছেন। তারা নিজেদের বিশেষায়িত জ্ঞানের পাশাপাশি আরো কিছু প্রয়োজনীয় জ্ঞান আয়ত্ব করে নেন। এ জ্ঞান জাম্বিয়ায় অন্য চিকিত্সকদের কাজে লাগবে।
জাম্বিয়ার চিকিত্সামান ভালো নয়। ফলে চীনের দেওয়া অনেক ওষুধ ও চিকিত্সা সরঞ্জাম গুদামে নষ্ট হচ্ছিল। এ পরিস্থিতি দেখে চেই ওয়েন লিয়াং তার দল নিয়ে গুদামে আসেন। তারা চিকিত্সাসরঞ্জামগুলো মেরামত করেন এবং সকল চীনা ওষুধের প্যাকেটের ওপর ইংরেজি নাম লিখে দেন। এভাবে এ সম্পদগুলো স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠে।
চীনা সহায়তাদলকে জাম্বিয়ায় পানি ও বিদ্যুত সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে। এসব সমস্যা সত্ত্বেও এ দলটি এক বছর ধরে অনেক কাজ করে। তারা ৬ হাজারেরও বেশি রোগী দেখেন এবং ৪১০০টিরও বেশি পরীক্ষা করেন। স্থানীয় রোগীরা চীনা চিকিত্সকদের সেবার মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। একজন Cholecystitis-এর রোগী বললেন, 'চিকিত্সা খুব ভাল। আমি অনেক ভাল বোধ করছি। জাম্বিয়ার চিকিত্সকদের তুলনায় চীনা চিকিত্সকরা ভালো। আমি তাদের জানাই অনেক অনেক ধন্যবাদ।
চিকিত্সা সহায়তা ছাড়া, অন্যান্য বিষয়েও চেই ওয়েন লিয়াং ও তার দল স্থানীয় মানুষকে অনেক সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। তারা প্রত্যাকে ২ থেকে ৪ জন স্থানীয় চিকিত্সককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং নতুন চিকিত্সাপদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
Sidyney Charlie একজন স্থানীয় চিকিত্সক এবং তিনি সাহায্যকারী হিসেবে চীনা ডাক্তারের সঙ্গে কাজ করেন। তিনি চীনা চিকিত্সকের কাছ থেকে অনেক শিখেছেন এবং এখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। যখন চীনা শিক্ষকের কথা আসে তখন Charlie তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, "চীনা চিকিত্সকরা সবাই ভাল শিক্ষক। তারা আমাকে অনেককিছু শিখিয়েছেন। তাদের জ্ঞান আমার চেয়ে অনেক বেশি এবং আমি অনেক অজানা জিনিস তাদের কাছ থেকে শিখেছি।"
২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি, সফলভাবে দায়িত্ব পালন শেষে এ চিকিত্সকদলটি চীনের ফিরে আসে। তারা সঙ্গে করে নিয়ে আসে জাম্বিয়ার জনগণের প্রশংসা ও শুভেচ্ছা। জাম্বিয়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদেরকে প্রতিরক্ষা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পদকেও ভূষিত করে।
দেশে ফিরে এলেও জাম্বিয়ার কথা সবসময় চেই ওয়েন লিয়াংয়ের মনে পড়ে। তিনি জাম্বিয়াকে নিজের 'দ্বিতীয় জন্মস্থান' মনে করেন। তিনি মাঝে মাঝে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জাম্বিয়ার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সুযোগ পেলে তিনি আবার জাম্বিয়ায় যেতে চান। চাই ওয়েন লিয়াং বলেন,
"সত্যি কথা বলতে কি, জাম্বিয়ার কথা সবসময় আমার মনে পড়ে। ভবিষ্যতে অবসর নেওয়ার পর আমি জাম্বিয়ায় ফিরে যেতে চাই। আমি দেখতে চাই, আমাদের সাহায্যে জাম্বিয়ার হাসপাতালগুলোতে কী ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।"