ট. ১৫ লাখেরও বেশি বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য গড়ে উঠেছে। ২০১০ সালে পেইইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহো ক্যাম্পাস আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করা শুরু হয়। ক্যাম্পাসের মধ্যে ব্যাংক, হাসপাতাল, সুপারমার্কেট, হোটেলসহ নানান অবকাঠামো স্থাপন করা হয়। দুটি ক্যাম্পাসে বিশাল স্টেডিয়াম, খেলার মাঠ, সুইমিংপুল, লাইব্রেরি রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ১০টি ক্যান্টিন।
ক্যাম্পাসের পরিবেশ অপরূপ সুন্দর। মহাকাশযান জাদুঘর, সংগীত হল, শাপলা পুকুর, চেরিফুলের বাগান, ভাস্কর্য ও পাথর খোদাইসহ বিভিন্ন স্থাপত্য ও প্রাকৃতিক দৃশ্য রয়েছে ক্যাম্পাস জুড়ে।
২০১০ সালের মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের গান নির্ধারণ করা হয়; এর নাম 'তারাসহ আকাশ দেখা'। চীনের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাওয়ের রচিত কবিতাকে এ গানে রূপ দেয়া হয়। গানের কথা প্রায় এমন,
আমি আকাশের তারা দেখি, সেই তারা এতো বিস্তার ও গভীর যেন অসীম সত্য আমাকে কষ্ট করে খুঁজে বের করে। আমি আকাশের তারা দেখি, সেই তারা এতো মহান ও পবিত্র, যেন ন্যায় আমাকে ভালোবাসে ও ভয় করে। আমি আকাশের তারা দেখি, সেই তারা এতো স্বাধীন ও শান্ত, যেন উন্মুক্ত মন আমার মনকে নির্ভয় করে। আমি আকাশের তারা দেখি, সেই তারা এতো মুগ্ধকর ও উজ্জ্বল, যেন স্থায়ীভাবে আমার মনে গভীর আশার আগুণ জ্বালায়....।
বন্ধুরা, এবার চলুন সবাই মিলে শুনি এ সুন্দর গানটি, কেমন?
স. আচ্ছা, বন্ধুরা, গানের পর আবারও আমরা ফিরলাম পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ে।
পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয় চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিল বা সিএসসি'র সহযোগিতামূলক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম। ১৯৯৩ সালে ৭ জন বিদেশি শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিতে পড়তে আসেন। তাঁরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পর্যায়ের বিদেশি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীতে পরিণত হন।
২০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কোর্স অতি দ্রুত উন্নত হয়। ২০০৯ সাল পর্যন্ত এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯০০ জনেরও বেশি।
তাদের মধ্যে ৫৫০ জনেরও বেশি ডক্টরেট ডিগ্রি, মাস্টার্স ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ৪০০ জনেরও বেশি চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেন।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য ২০০৭ সাল থেকে পেইইহাং বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থী বৃত্তি চালু করে। এই বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৬ সালে পেইচিং পৌর সরকারের বিদেশি শিক্ষার্থী বৃত্তির কার্যকরী বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ২০০৮ সালে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজস্বভাবে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি প্রদান করে।
ট. পেইইহাং বিশ্ববিদ্যালয় সক্রিয়ভাবে ইউরোপ, আমেরিকা ও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শিক্ষার্থী বিনিময় পরিকল্পনা চালু করে। ফলে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থীকে এখানে ভর্তি করা হয়। এখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা বিদেশি শিক্ষার্থীরা যাদের লেখাপড়ার ফলাফল অনেক ভালো তারা সরাসরি মাস্টার্স ও ডক্টরেট ডিগ্রি করার জন্য আবেদন করতে পারেন। পাশাপাশি তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তির জন্যও আবেদন করতে পারেন।
পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স ও ডক্টরেট ডিগ্রি কোর্স এবং স্নাতক পর্যায়ের কিছু কোর্স ইংরেজি মাধ্যমে অধ্যয়ন করতে পারেন। আসলে চীনে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে অধ্যয়নের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি নয়। ১৯৯৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ৪০০০ জনেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। এদের মধ্যে ৩০০ জন মাস্টার্স ও ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
২০০৪ সালে পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ইন্সটিটিউট শুধু যে স্নাতক, মাস্টার্স ও ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে তা নয়, বরং দীর্ঘকালীন ও স্বল্পকালীন চীনা ভাষা প্রশিক্ষণ প্রকল্প, পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রকল্প ও বিভিন্ন ধরনের গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প আয়োজন করে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। অভিজ্ঞ শিক্ষক এবং উন্নত মাল্টিমিডিয়া প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রশিক্ষকদের চীনা ভাষা শোনা, বলা, পড়া ও লেখার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
২০০৬ সাল থেকে চীনের জাতীয় মহাকাশযান ব্যুরো ও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় মহাশূন্য দপ্তরের বহুপক্ষীয় সহযোগিতা কার্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয় 'মহাশূন্য প্রযুক্তি প্রয়োগ' বিষয়ক মাস্টার্স প্রশিক্ষণ প্রকল্প চালু করে। জাতিসংঘের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কোর্স কাঠামো থেকে অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে এই প্রকল্প চালু করা হয়। এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রিমোট সেন্সিং এবং ভৌগলিক তথ্য ব্যবস্থা, উপগ্রহ যোগাযোগ, উপগ্রহ ও আবহবিদ্যা ইত্যাদি।
স. পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ইন্সটিটিউট বিদেশি শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়ন ও বিজ্ঞানসম্মত গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেয়। চীনা শিক্ষকদের পরামর্শে বিদেশি শিক্ষার্থীরা শুধু নিজের প্রধান বাধ্যতামূলক কোর্স লেখাপড়া করেন তা নয়, বরং নিজ ইচ্ছা মতো নানা ধরনের ঐচ্ছিক বিষয় বাছাই করতে পারেন। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক ইন্সটিটিউট বিদেশি শিক্ষার্থীদের চমত্কার জীবনযাপনের উপরও গুরুত্ব প্রদান করে। বাস্কেটবল, চীনা গান গাওয়া, ছবি তোলা, চীনের হস্তলিপিশিল্প ও চিত্রকলাসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করে এ বিশ্ববিদ্যালয়। ছুটির সময়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সফরেরও আয়োজন করা হয়।
ট. বন্ধুরা, এতক্ষণ শুনলেন পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু তথ্য। এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বৃত্তির তথ্য তুলে ধরবো।
শ্রেষ্ঠ বিদেশি শিক্ষার্থী বৃত্তি: বিদেশি শিক্ষার্থীদের উত্সাহিত করার জন্য পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয় এ বৃত্তি চালু করে। দু'টি ক্যাটাগরিতে এ বৃত্তি প্রদান করা হয়। বিদেশি শিক্ষার্থীর বিশিষ্ট একাডেমিক ফলাফল বৃত্তি ও বিদেশি শিক্ষার্থীর চমত্কার অভিনয় বৃত্তি। এ বৃত্তি মোট তিনটি শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত। প্রথম শ্রেণী পাবেন ৩০০০ ইউয়ান, দ্বিতীয় শ্রেণী পাবেন ২০০০ ইউয়ান আর তৃতীয় শ্রেণী পাবেন ১০০০ ইউয়ান।
বিদেশি শিক্ষার্থী পেশাগত সহযোগিতা বৃত্তি: পেইহাংয়ের স্নাতক, মাস্টার্স, ডক্টরেট ও স্কলারসহ সকল বিদেশি শিক্ষার্থী এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। এ বৃত্তির মধ্যে সম্পূর্ণ বৃত্তি, একপক্ষীয় বৃত্তি ও আন্ত:স্কুল সহযোগিতা বৃত্তি রয়েছে। বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দেখে নিতে পারেন। ওয়েবসাইটের ঠিকানা http://is.buaa.edu.cn ।
স.সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এতক্ষণ আপনার পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জানলেন। এখন আমরা পেইচিং পৌর সরকারের বৃত্তি সম্পর্কিত কিছু তথ্য তুলে ধরবো।
যারা পেইচিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে চান, তারা এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার উন্নয়ন এবং বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা, সামাজিক পরিসেবা ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান জোরদার করার জন্য পেইচিং পৌর সরকার এ বৃত্তি প্রদান করে। বৃত্তির মেয়াদ এক বছর ও চার বছর যা আবেদনকারীদের লেখাপড়ার বিষয় ও মেয়াদের সঙ্গে সম্পর্কিত।
চমত্কার বিদেশি শিক্ষার্থীরা যারা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডক্টরেট ডিগ্রি অন্বেষণ করেন তাদের বৃত্তির মেয়াদ চার বছর।
চীনা ভাষার শিক্ষার্থী ও সিনিয়র স্কলার, সাধারণ স্কলার এবং শিক্ষার্থী বিনিময় কার্যক্রমের শিক্ষার্থী বা বিশেষ অবদান রাখা বিদেশি শিক্ষার্থীর বৃত্তির মেয়াদ এক বছর।
ডক্টরেট ডিগ্রির আবেদনকারীকে মাস্টার্স পাশ হতে হবে এবং তাদের বয়স হতে হবে ৪০ বছরের নিচে। মাস্টার্স ডিগ্রির আবেদনকারীকে স্নাতক পাশ হতে এবং তাদের বয়স হতে হবে ৩৫ বছরের নিচে। স্নাতক ডিগ্রির আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ৩০ বছরের নিচে। সাধারণ স্কলার প্রকল্পের আবেদনকারীর বয়স ৫০ বছরের নিচে হতে হবে। আর দীর্ঘকালীন ভাষা প্রশিক্ষণের আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ৬০ বছরের নিচে ।
ডক্টরেট ডিগ্রির শিক্ষার্থীর বার্ষিক বৃত্তির পরিমাণ ৪০ হাজার ইউয়ান, মাস্টার্সের শিক্ষার্থীর বার্ষিক বৃত্তির পরিমাণ ৩০ হাজার ইউয়ান, অস্নাতক শিক্ষার্থীর বার্ষিক বৃত্তির পরিমাণ ২০ হাজার ইউয়ান, সিনিয়র স্কলার ও দীর্ঘকালীন ভাষা শেখার শিক্ষার্থীর বার্ষিক বৃত্তির পরিমাণ ১০ হাজার ইউয়ান। শিক্ষার্থী বিনিময় কার্যক্রমের শিক্ষার্থী আর আন্তর্জাতিক বিনিময় ও সহযোগিতায় বিশেষ অবদান রাখা বিদেশি শিক্ষার্থীর বার্ষিক বৃত্তির পরিমাণ ৫ হাজার ইউয়ান।
আবেদনকারীরা নিজ দেশের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান বা চীনা দূতাবাসের শিক্ষা কনসুলেট থেকে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারেন অথবা http://www.bjedu.gov.cn)থেকেও জেনে নিতে পারেন। আপনারা পেইচিং পৌর সরকারের বৃত্তির আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে www.csc.edu.cn থেকে খুঁজে বের করতে পারবেন।
ট. বন্ধুরা, সময় খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আজকের অনুষ্ঠানের সময়ও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে এলো। হ্যাঁ, আমাদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চীনের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কিত যেকোনো বিষয় যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে আমাদেরকে অবশ্যই চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn.
স. সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন ও সুস্থ থাকুন । আগামী সপ্তাহে একই দিনে একই সময়ে আবারো কথা হবে। যাই চিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল)