

ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ডিগ্রির বিদেশি স্নাতকের সংখ্যা চীনের চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এদের মধ্যে ১২০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী বিশ্ববিখ্যাত হার্ভাড, স্ট্যান্ডফোর্ড, অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছেন।
২০১৫ সালের মার্চ মাসে বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা অনলাইনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদনপত্র জমা দিতে পারেন। যাদের আবেদনপত্র ও প্রমাণপত্র যোগ্যতাসম্পূর্ণ, তারা ১৮ ও ১৯ এপ্রিল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন এবং সেপ্টেম্বর মাসে পেইচিংয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। মাস্টার্স ডিগ্রিতে লেখাপড়ার সময় সাধারণত ২ থেকে ৩ বছর। ডক্টরেট ডিগ্রির লেখাপড়ার সময় ৪ বছর। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ভর্তির জন্য আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন। ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশের সাথে শিক্ষা বিনিময় সংক্রান্ত ছাত্রছাত্রী ও ভিজিটিং স্কলার গ্রহণ করে। পেশাগত ভিজিটিং স্কলার প্রতি বছরের বসন্তকালীন ও শরত্কালীন দু'টি সেমিস্টারে ভর্তি হতে পারেন। যারা শরত্কালীন সেমিস্টারে ভর্তি হতে চান,তাদেরকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আবেদন করতে হবে। যারা বসন্তকালীন সেমিস্টারে ভর্তি হতে চান, তাদেরকে প্রতি বছরের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আবেদন করতে হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে, আপনারা ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দেখে নিতে পারেন।
ওয়েবসাইটর ঠিকানা http://is.tsinghua.edu.cn/
সুপ্রিয় বন্ধুরা, এতক্ষণ শুনছিলেন চীনের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু তথ্য। এখন আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানি ছাত্র হামিদ রেজা আরান দিয়ানের লেখাপড়ার গল্প শোনাবো।
হামিদ রেজা ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পিএইচডি করেন এবং প্রথম বিদেশি ছাত্র হিসেবে ছিংহুয়ার সবচেয়ে শীর্ষ গ্রেডের বৃত্তি লাভ করেন।
চীনে আসার আগে ২০১০ সালে তিনি ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদি নেজাদও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।
হামিদ রেজা ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান ধরনের বৃত্তি লাভ করেন, এর মধ্যে রয়েছে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ গ্রেডের বৃত্তি, যা প্রথম বিদেশি ছাত্র হিসেবে তিনি এ বৃত্তি লাভ করেন। তিনি কৌতুকের মতো করে বলেন, আমার পরিবারের নাম আরানদি তা শুনতে 'R &D'র যেমন (research and development) এর মতো। তিনি বলেন,তিনি গবেষণার জন্যই জন্মগ্রহণ করেছেন। ইরানের আসাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি ইরান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিতে ভর্তি হন।
২০১১ সালে তিনি বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প নিয়ে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পিএইচডি করার জন্য আবেদন করেন। যখন তিনি ছিংহুয়ায় পৌঁছান, তখন তাঁর শিক্ষক তাঁকে বলেন 'এখানে তোমাকে অনেক পরিশ্রমের সঙ্গে লেখাপড়া করতে হবে'।
এরপর থেকে তিনি প্রতি সপ্তাহে সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত গবেষণাগারে কাজ করতেন এবং এর সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত ক্লাস ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। তিনি বলেন, 'তিনি গবেষণাগারে পরীক্ষা করতে পছন্দ করেন। কারণ সেখানে নতুন জিনিস আবিষ্কার করা তাঁর কাছে খুবই একটি মজার ব্যাপার'।
তবে গবেষণাগারের পরীক্ষায় অনেক সময়ই মজা থেকে বঞ্চিত হন তিনি । বিভিন্ন পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ বিষয়ই অনেক সময় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তাই বিভিন্ন পরীক্ষা বারবার করার জন্য প্রচুর উত্সাহ ও ধৈর্যের প্রয়োজন। বিভিন্ন পরীক্ষার প্রক্রিয়া অতি লম্বা ও জটিল। যখন সমস্যা তৈরি হয় তখন গবেষকরা সবসময়ই জানতে পারেন না যে, তাতে কি হয়েছে? তখন তাঁদেরকে আবার শুরু থেকে পরীক্ষা করতে হয়।
এ সম্পর্কে হামিদ বলেন, যত বেশি ভুল হয়, আমাদের তত বেশি ধৈর্য দরকার,যাতে অবশেষে সমস্যা খুঁজে বের করা যায়। যখন আমি একাই গবেষণার কাজ করি, আমি একাই সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করি। তার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করি,যা ভবিষ্যতের বিভিন্ন গবেষণার পথের বাধা নির্মূল করতে সহায়ক ।
লেখাপড়ার জন্য হামিদ তিন বছর দেশে ফিরে যান নি এবং তাঁর অধিকাংশ সময়ই তিনি গবেষণাগারে কাটান। হামিদ বলেন, 'আমি ছিংহুয়া ও আমার কাজ ভালোবাসি'।
ছিংহুয়ার শীর্ষ গ্রেডের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে হামিদ বলেন, আমার ধারণায় এ বৃত্তি পাওয়ার জন্য অনেক শর্ত প্রয়োজন। সৌভাগ্য ৪৭ শতাংশ, জ্ঞান ৯৬ শতাংশ, পরিশ্রম ৯৮ শতাংশ এবং আমার মনোভাব ১০০ শতাংশ। আমি নিজেকে বললাম 'পরিশ্রমের সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করতে হবে। '
প্রফেসার ম্যাডাম লি জুন হুয়া ছিলেন হামিদ রেজার শিক্ষক। তিনি একজন শিক্ষক হিসেবেই শুধু যে গবেষণার কাজে হামিদকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তা নয়, বরং হামিদের জীবনযাপনেও যত্ন নিয়েছেন তিনি।
হামিদ রেজার মাতৃভূমি ইরানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পেট্রোল ও প্রাকৃতিক গ্যাস মজুত রয়েছে। তা দেশের উন্নয়নে অনেক সুযোগ বয়ে আনের পাশাপাশি পরিবেশের জন্যও সমস্যা সৃষ্টি করে । বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তিনি ছিংহুয়া'র কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রধান বিষয় হিসেবে বাছাই করেন। যদি গ্যাসের বিষাক্ত উপাদান পরিস্কার করতে সক্ষম হওয়া যায়, তাহলে অনেক লোকের প্রাণ উদ্ধার করা যাবে। তাঁর উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি পরিশ্রমের সঙ্গে গবেষণা করেন। তাঁর উদ্ভাবিত ত্রিমাত্রিক ম্যাক্রো পোরুস কার্যকরভাবে নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার অক্সাইডসহ বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান কমাতে সক্ষম।
২০১৩ সালে 'দাউ কেমিক্যাল করপোরেশনে'র উদ্যোগে টেকসই উন্নয়ন উদ্ভাবনী চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় হামিদ চীনের একমাত্র চ্যাম্পিয়ন ও বিশ্বের ১৬ জন চ্যাম্পিয়নের অন্যতম হন। তাঁর গবেষণা ত্রিমাত্রিক ম্যাক্রো পোরুস ক্যাটালিটিক কনভার্টার (three dimensional macro porous catalytic converter) বিশ্বের সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞদের স্বীকৃতি ও সম্মান অর্জন করে।
গবেষণা ছাড়াও চীনের সংস্কৃতি জানতে অনেক আগ্রহী হামিদ। ছিংহুয়ায় পৌঁছার পর তিনি চীনা ভাষা ও চীনা সংস্কৃতি শিখতে শুরু করেন এবং চীনা ছাত্র সমিতিতে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমিতিতে তাঁকে দেখা যায়। ছবি তোলা, পাহাড় আরোহণ আর বিদেশি শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবকের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নেন। চীনের একটি প্রবাদ তিনি দারুণ পছন্দ করেন, তা হলো '১০ হাজার বই পড়া আর ১০ হাজার মাইল পথ যাত্রা করা একই'।
ছুটির সময় ভ্রমণ করতে বেশ পছন্দ করেন তিনি। স্বচোখে সুন্দর চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের দৃশ্য উপভোগ করা তাঁর আশা। গত ৩ বছরে তিনি চীনের ৩০০টিরও বেশি শহর ঘুরে বেড়িয়েছেন। ভ্রমণে সবসময়ই সঙ্গে ক্যামেরা রাখতেন। চীনা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে আর তাদেরকে ইরানের সাহিত্য, সংগীত ও দর্শন পরিচয় করিয়ে দিতে অনেক পছন্দ করতেন তিনি।
হামিদ আশা করেন, ভবিষ্যতে চীন ও ইরানের জনগণের আদান-প্রদান ও মৈত্রী জোরদার করতে তিনি অবদান রাখবেন এবং তাঁর গবেষণাও দু'দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
(সুবর্ণা/টুটুল)




