Web bengali.cri.cn   
ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ইরানি ছাত্র হামিদের গল্প
  2015-03-11 15:39:21  cri


বন্ধুরা, বরাবরের মতো আজও অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুনবেন শিক্ষা সম্পর্কিত খবর। এরপর চীনের অতি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য তুলে ধরবো এবং তারপর শুনবো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ বিদেশি ছাত্রের অন্যতম ইরানি ছাত্র হামিদের গল্প।

ব্রিটেনের প্রিন্স উইলিয়াম গত ৩ মার্চ প্রথমবারের মতো চীন সফরে আসেন। এসময় তিনি দু'দেশের শিক্ষা আদান-প্রদান সম্পর্কে বলেন, চীন ও ব্রিটেনের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রমের পারস্পরিক আদান-প্রদান অনেক শক্তিশালী। শিক্ষা বিষয়ে বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে চীনা ছাত্রছাত্রীদের বিদেশে লেখাপড়ার অন্যতম একটি গন্তব্য স্থান হচ্ছে ব্রিটেন।

ব্রিটেনের শিক্ষা বিষয়ক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর ব্রিটেনে ৫ লাখেরও বেশি বিদেশি ছাত্রছাত্রী পড়ালেখা করতে আসেন। এদের মধ্যে চীনা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি। তবে দু'দেশের শিক্ষা আদান-প্রদান শুধু যে একপক্ষীয় তাই নয়, বরং প্রতি বছর চীনে ব্রিটিশ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও অনেক বাড়ছে । উইলিয়াম মনে করেন, চীন-ব্রিটেন শিক্ষার আদান-প্রদান ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনেক কল্যাণকর। তিনি এ আদান-প্রদানকে নতুন যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার 'মূল্যহীন পুঁজি বিনিয়োগ' হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ৫ মার্চ দেশটির ২০১৪ সালের বিদেশে লেখাপড়াকরা ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা প্রকাশ করেছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালে চীনের বিদেশে লেখাপড়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮০০ জন। পাশাপাশি বিদেশে লেখাপড়া শেষে দেশে ফিরে আসা চীনা ছাত্রছাত্রীর মোট সংখ্যা ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮০০ জন। জানা গেছে, ২০১৩ সালের চেয়ে বিদেশে যাওয়া চীনা ছাত্রছাত্রী ও স্বদেশে ফিরে আসা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা উভয়ই বেড়েছে।

পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ১৯৭৮ সাল থেকে ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ বিদেশে লেখাপড়াকরা চীনা ছাত্রের মোট সংখ্যা ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৪০০ জন। তাদের মধ্যে প্রায় ১৮ লাখ ১০ হাজার ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া শেষে স্বদেশে ফিরে এসেছেন।

ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। উত্তরপশ্চিম পেইচিংয়ের ছিংহুয়া বাগানের কাছে অবস্থিত বলে এর নাম ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার শুরুতে এটি ছিলো ছিংহুয়া স্কুল। ছিং রাজবংশের সরকার চীনা ছাত্রছাত্রীদের আমেরিকায় পড়তে যাবার জন্য প্রস্তুত করার জন্য এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। পরে ১৯২৫ সালে এই স্কুল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং ১৯২৮ সালে এর নামকরণ করা হয় ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৩১ সালের ১৪ অক্টোবর ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পর্যায়ের স্নাতক মেই ই ছিকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে মনোনীত করা হয়। তাঁর ১৭ বছর কার্যমেয়াদে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এবং পরে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় চীনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটিতে পরিণত হয়। ১৯৩৬ সালে হুনান প্রদেশে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রেসিডেন্ট মেই ই ছি হুনানে গিয়ে শাখা ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার স্থান পরিদর্শন করেন।

১৯৩৭ সালে জাপানবিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণ চীনের হুনান প্রদেশের ছাংশা শহরে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৩৮ সালে আবার ইউয়ুননান প্রদেশের খুনমিং শহরে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তর করা হয় এবং ১৯৪৬ সালে পুনরায় পেইচিংয়ের ছিংহুয়া বাগানে শুরু হয় এর কার্যক্রম।

১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর ছিংহুয়া চীন সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ১৯৫২ সালে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে ছিংহুয়ার সাহিত্য একাডেমি, বিজ্ঞান একাডেমি,আইন একাডেমি, কৃষি একাডেমিসহ বিভিন্ন একাডেমি পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয় এবং ছিংহুয়া চীনের বহুমুখী শিল্প বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। বিশেষ করে চীনের শিল্প ও প্রযুক্তি খাতের ব্যক্তিদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করে। ১৯৫২ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের 'উন্নত শিক্ষা' অভিজ্ঞতা অনুসারে শিক্ষা খাতে সংস্কার চালু করে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী পেশাগত কারিগরি ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক প্রশিক্ষণ বই অনুবাদ করা হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশেষজ্ঞদের চীনে পড়াশোনার আমন্ত্রণ জানানো হয়।

১৯৭৭ সালে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত বিশেষ পরীক্ষা 'কাওখাও' পুনরায় চালু করার পর ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ধীরে ধীরে প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করে ও ও প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কাজও পুনরুদ্ধার করে।

 ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় পেইচিং শহরের হাইতিয়ান এলাকায় ছিংহুয়া বাগানে অবস্থিত। এর পাশেই রয়েছে পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউয়ানমিংইউয়ার রাজবাগান। ছিংহুয়া বাগান ছিলো রাজপরিবারের বাগান। প্রাচীনকালে ছিং রাজবংশের চার রাজা খাংশি, ইয়োংচেং, ছিয়ানলোং ও সিয়ানফেং পরপর এখানে বাস করতেন। সিয়ানফেং রাজার আমলে এ বাগানটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ছিংহুয়াইউয়ান।

ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আয়তন ৩৯২.৪ হেক্টর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রায় ১১৫২ ধরনের গাছগাছালি রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় শতাধিক একশো বছরেরও পুরনো গাছ রয়েছে। বিশাল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসিক কক্ষের সংখ্যা ১৩ হাজার ৯০০। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের বিভিন্ন সময়পর্বের স্থাপত্য নিদর্শন লক্ষ্য করা যায়।বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনের তৃণভূমিতে প্রাচীনকালের সূর্যঘুড়ি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে । এতে লেখা রয়েছে 'আচরণ কথার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ'। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান রাস্তা অনুসারে দু'টি ভাগে বিভক্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়। পশ্চিম এলাকায় আমেরিকা ও পাশ্চাত্যের স্থাপত্য নিদর্শন দেখা যায়। প্রাচীনকালে চীনের ঐতিহ্যিক বাগানসহ বিভিন্ন পুরনো স্থাপত্যও পশ্চিম এলাকায় অবস্থিত। এর মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত শাপলা পুকুর, যার অপরূপ দৃশ্য বর্ণনা করেছেন চীনের বিখ্যাত লেখক চু চি ছিং 'শাপলা পুকুরের চন্দ্রদৃশ্য' প্রবন্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল মিলনায়তন মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। তাছাড়া ১৯৫০ সালে নির্মিত রুশ স্টাইলের ভবনও রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব এলাকায়।

বন্ধুরা, এখন শুনবেন ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গানের তথ্য। ১৯২৩ সালে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সমাজের কাছে গান আহ্বান করেন। ১৯২৪ সালের ২০ মার্চ এ গানটি আনুষ্ঠানিকভাবে মিলনায়তনে কোরাস আকারে গাওয়া হয়।

গানের কথা প্রায় এমন, পশ্চিম পাহাড় বিশাল উঁচু, পূর্ব সমুদ্র অনেক বিস্তার, এর মাঝখানে অবস্থিত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়।এখানে সংমিশ্রিত হয় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি, এখানে লেখাপড়া করে বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থী। আত্মনির্ভরশীলতা, আত্মনির্ভরশীলতা........।

চীন ও বিশ্বের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও, চীনের গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান উ পাং কুও, চীনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চু রোংচি, চীনের বিজ্ঞান প্রযুক্তি পরিষদের অবৈতনিক চেয়ারম্যান ছিয়ান স্যুয়ে সেন, চীনা গণ ব্যাংকের গভর্নর চৌ সিয়াওছুয়ান, মার্কিন প্রবাসী চীনা বিজ্ঞানী ইয়াং জেন নিং, স্থাপত্যবিদ লিয়াং সি ছেংসহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।

১৯৫০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো ১৪ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করে, যা নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর ভর্তি করা প্রথম পর্যায়ের বিদেশি শিক্ষার্থী। ২০১৪ সাল নাগাদ ছিংহুয়ায় মোট ২৭ হাজারেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হন। ২০১৪ সালের শরতকালে ১২৬টি দেশের ৩৪৪০জনেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন। তাদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ স্নাতক,মাস্টার্স ও ডক্টরেট ডিগ্রীর জন্য এবং ২৩ শতাংশ ভিজিটিং স্কলার হিসেবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্স ও এবং চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে পড়াশোনা করতে আসেন। এদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান,পাকিস্তান ও ইরানসহ ১৫টি দেশের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040