Web bengali.cri.cn   
পেইচিং চাইনিজ মেডিসিন ইউনিভার্সিটি ও নেপালি ছাত্র হরিশ চন্দ্র শাহ'র গল্প
  2015-03-04 17:36:07  cri

তৃতীয়ত: ভিত্তি লেখাপড়া বৃত্তি, ক শ্রেণীর দু'জন প্রত্যেকে পাবেন ১৭৫০০ ইউয়ান, খ শ্রেণীর দু'জন পাবেন ১২০০০ ইউয়ান। চতুর্থত: বিশেষ অবদান বৃত্তি: তা পুরনো ও নতুন ছাত্রছাত্রীদেরকে প্রদান করা হবে । ক্লাসের স্কোয়াডের দায়িত্ব পালন করা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শহর পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া ছাত্রছাত্রীরা এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। মোট ২৩ জনকে এ বৃত্তি প্রদান করা হবে যারা প্রত্যেকেই পাবেন ৮০০ ইউয়ান করে।

বন্ধুরা, এতক্ষণ শুনছিলেন পেইচিং চাইনিজ মেডিসিন ইউনিভার্সিটির বৃত্তি সম্পর্কিত খবর। এখন আমরা সবাই মিলে শুনবো এ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে লেখা একটি সুন্দর গান। গানের নাম 'প্রতিশ্রুতি'।

গানের কথা প্রায় এমন, আজকের ছোট বীজ ভবিষ্যতে প্রস্ফুটিত হবে। আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা মনোযোগ দিয়ে জ্ঞান অর্জন করি, নানান ধরনের মেডিকেল প্রযুক্তি নিয়ে আমরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। বুদ্ধি নিয়ে স্বাস্থ্যের দূতে পরিণত হবো, আমরা মাতৃভূমি ও জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পরিশ্রমের সঙ্গে লেখাপড়া করা এবং জ্ঞান অর্জন করা আমাদের চিরদিনের উদ্দেশ্য। চলুন একসাথে গানটি শুনি আমরা, কেমন?

বন্ধুরা, এ গানটির মতো আমরাও আমাদের অবস্থান থেকে সমাজের কল্যাণে অবদান রাখবো বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এখন আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নেপালি ছাত্রের গল্প তুলে ধরবো। তাঁর নাম হরিশ চন্দ্র শাহ।

হরিশ চন্দ্র শাহ ১৯৭৭ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৮৪ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত চীনে লেখাপড়া করেন। বর্তমানে তিনি নেপালের জাতীয় হাসপাতালের ডীন এবং চীন-নেপাল সংস্কৃতি শিক্ষা বিষয়ক সমিতির চেয়ারম্যান।

প্রথমে তিনি পেইচিং ল্যাঙ্গুয়েজ এ্যান্ড কালচার ইউনিভার্সিটিতে চীনা ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করেন। তারপর তিনি পেইচিং চাইনিজ মেডিসিন ইউনিভার্সিটিতে চীনা মেডিসিন ও আকুপাংচার নিয়ে লেখাপড়া করেন। চীন সম্পর্কে নিজের গল্পের কথা নিয়ে তিনি লেখেন, আমার বাবা চীনে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, 'চীন আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ, চীনারা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ ও সদয়। চীন দীর্ঘকাল ধরে নেপালের বন্ধু। নেপালের নানা সমস্যা ও সংকটে সহায়তা দেয় চীন'। তাঁর এ কথাগুলো আমার মনে গভীর প্রভাব ফেলে। আমার বাবা আশা করেন আমি চীনে লেখাপড়া করবো। তাঁর স্বপ্নের কারণেই আমি নেপালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষায় পাস করে চীন সরকারের বৃত্তির জন্য আবেদন করি এবং ১৯৭৭ সালের ৯ অক্টোবর আমি পেইচিংয়ে পৌঁছাই।

শুরুতে আমি পেইচিং ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্সটিটিউট মানে বিএলসিইউতে ভর্তি হয়ে চীনা ভাষা শিখি। তখন আমি মনে করি চীনা ভাষা এত কঠিন, আমি চীনা ভাষা দিয়ে 'হ্যালো'বলতে পারি না।

একদিন আমি এবং আমার নেপালি সহপাঠী চিড়িয়াখানা বেড়াতে যেতে চাই, তবে আমরা জানি না চীনা ভাষায় তা কি বলে। পরে আমরা ভাবি যে, ছবি আঁকার মাধ্যমে চীনাদের কাছে চিড়িয়াখানা যাওয়ার পদ্ধতি জিজ্ঞাস করবো। সেজন্যে আমরা ঘোড়াসহ কয়েকটি পশুর ছবি আঁকি। পরে এ ছবি দেখে এক ভদ্রলোক আমাদেরকে পথ নির্দেশনা দেন। তবে এ নির্দেশনা অনুসারে আমরা একটি শস্যাগারে পৌঁছাই এবং নিজেদেরকে নিয়ে অনেক হাসাহাসি করি।

আমার চীনা শিক্ষকের ধৈর্যশীল প্রশিক্ষণে আমার চীনা ভাষার অনেক উন্নতি হয়। আমিও চীনাদের জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে যাই। আমার বয়স তখন কম, তাই সবসময় বাসা ও বাবা-মাকে মিস করি। আমার চীনা শিক্ষক বাব- মার মতো আমাকে যত্ন নেন। তাঁরা মাঝে মাঝে আমাদের নিয়ে রেস্তোরাঁয় যান ও চীনা সিনেমা দেখেন। তবে তখন আমার চীনা ভাষা দুর্বল বলে চীনা চলচ্চিত্রের অনেক কথা বুঝতে পারিনা। আমি মনে করি তখন আমি চীনা ভাষা দিয়ে বীর ও ভুতের শব্দ বলতে পারি না, আমার শিক্ষক স্ক্রিন নির্দেশনা করে আমাকে বলেন যে, সেটা ভালো মানুষ এবং অন্যটা খারাপ মানুষ।

১৯৭৮ সালের পয়লা মে কয়েক শো বিদেশি ছাত্রছাত্রী পেইচিং ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্সটিটিউট থেকে রওয়ানা হয়ে হাঁটাহাঁটি করে পিংআনলি, সিদান অতিক্রম করে অবশেষে থিয়ানআনমেন চত্বরে পৌঁছাই। সেইদিন আমরা চীনা নাগরিকদের সঙ্গে শ্রম দিবস উদযাপন করি, যা আমার মনে গভীর ছাপ তৈরি করে।

পরে আমি পাঁচ বছর সময় দিয়ে বিইউসিএমতে আকুপাংচারে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করি। তবে দেশে ফিরে যাওয়ার পর আমি আবিষ্কার করি যে, চীনা ওষুধ ও আকুপাংচারের বিষয় নেপালিদের জন্য একটি দারুণ নতুন ব্যাপার। সেই ডিগ্রী দিয়ে আমি নেপালের হাসপাতালে কোনো চাকরি পেতে পারি না। সেজন্য আমি স্নাতক প্রমাণপত্র নিয়ে নেপালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। অবশেষে তারা চীনের ঐতিহ্যিক ওষুধ ও আকুপাংচার ডিগ্রী গ্রহণ করে এবং আমি সরকারি হাসপাতালে চাকরিও পাই।

সাত বছর আমি চীনে লেখাপড়া ও বসবাস করেছি। চীনের প্রতি আমার গভীর অনুভূতি রয়েছে। দেশে ফিরে যাওয়ার পর আমি চীন-নেপাল সংস্কৃতি শিক্ষা সমিতি গড়ে তুলি। এ সমিতিতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও ভাষা বিশেষজ্ঞসহ এক শো জনেরও বেশি সদস্য রয়েছেন। আমাদের সমিতি ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরের পয়লা অক্টোবর চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে উদযাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন করে। বসন্ত উত্সব প্রত্যেক চীনার জন্য একটি দারুণ গুরুত্বপূর্ণ দিবস। ১৯৮৬ সাল থেকে চীনের বসন্ত উত্সব উপলক্ষে প্রতি বছর আমরা নানান উদযাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন করি। নেপালে বাসকারী অনেক চীনা কাজের জন্য দেশে ফিরে যেতে পারেন না, তারাও আমাদের উদযাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার মাধ্যমে এ উত্সব পালন করেন।

হরিশ চন্দ্র শাহ আরো বলেন, আমার পরিবার চীনকে দারুণ ভালোবাসে। আমার দু'টি সন্তান এখনও চীনে লেখাপড়া করছেন। আমার মেয়ে ক্লিনিক্যাল মেডিসিন ও ছেলে কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে লেখাপড়া করছেন। আমি সবসময় ভাবি চীন আমার দ্বিতীয় জন্মস্থান। আমি সবসময় বলি নেপাল ও চীনের মৈত্রী চিরদিন বিরাজ করবে।

ক. আচ্ছা, সময় দ্রুত চলে যায়। গল্প শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অনুষ্ঠান তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। হ্যাঁ, আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদেরকে চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn (সুবর্ণা/টুটুল)


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040