0204edu
|
বন্ধুরা, বরাবরের মতো আজও শুরুতেই শুনবেন শিক্ষা সম্পর্কিত খবর।
চীনের মুল-ভূভাগের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের স্নাতক বিভাগ ও ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের উচ্চপর্যায়ের শিক্ষা সহকারী কার্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে 'চীনের উচ্চপর্যায়ের শিক্ষা প্রদর্শনী' চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ম্যাকাওয়ে আয়োজিত হয়। চীনের মুল-ভূভাগের ৪৭টি বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রদর্শনীতে অংশ নেয়।
প্রদর্শনী চলাকালে পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়, ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চীনের গণ বিশ্ববিদ্যালয়, নানচিং বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিও প্রদর্শনীতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন এবং দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। এর সঙ্গে সঙ্গে চীনে অধ্যয়নকারী ম্যাকাওয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দর্শকদের সঙ্গে লেখাপড়ার অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
ম্যাকাওয়ের স্নাতকরা প্রদর্শনীর সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করার পর মনে করেন, প্রদর্শনীতে চীনের মূল-ভূভাগের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবাসী চীনা শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে প্রশিক্ষণের পরিচয় দেখার পর তাঁরা বিস্তারিতভাবে শিক্ষার তথ্য জানতে পেরেছেন। যা ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যের চেয়ে আরো সম্পূর্ণ ও নির্ভরশীল। চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতে তাঁরা নিজেদের প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর জানতে পেরেছেন, এতে করে আরো ভালভাবে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করতে পারবেন বলে মনে করেন তাঁরা।
সম্প্রতি চীনের অর্থমন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে সরকারি বৃত্তির আর্থিক পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রির আবেদনকারীদের বার্ষিক বৃত্তির সর্বোচ্চ পরিমাণ হবে ৬৬ হাজার ২০০ ইউয়ান,৭৯ হাজার ২০০ ইউয়ান ও ৯৯ হাজার ৮০০ ইউয়ান। জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়ন আর মুদ্রাস্ফীতিসহ বিভিন্ন উপকরণ বিবেচনায় রেখে বিদেশি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় সহায়তা দেয়ার জন্য এ বৃত্তির অর্থের পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে বৃত্তির অর্থের পরিমাণ বাড়ানো হয়।
বৃত্তির মোট তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। প্রথম শ্রেণীর ক্যাটাগরিতে রয়েছ দর্শন, অর্থনীতি, আইন, শিক্ষা, সাহিত্য, ইতিহাস ও প্রশাসন বিষয়। দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে রয়েছে গণিত,শিল্পকলা ও কৃষি বিষয়। তৃতীয় ক্যাটাগরিতে রয়েছে চিকিত্সা বিষয়। অস্নাতকদের জন্য প্রথম ক্যাটাগরি থেকে তৃতীয় ক্যাটাগরি পর্যন্ত বার্ষিক বৃত্তির পরিমাণ ৫৯ হাজার ২০০ ইউয়ান, ৬২ হাজার ২০০ ইউয়ান ও ৬৬ হাজার ২০০ ইউয়ান। স্নাতকোত্তর ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক বৃত্তির পরিমাণ ৭০ হাজার ২০০ ইউয়ান, ৭৪ হাজার ২০০ ইউয়ান ও ৭৯ হাজার ২০০ ইউয়ান। পিএইচডি ডিগ্রি শিক্ষার্থীদের বার্ষিক বৃত্তির পরিমাণ ৮৭ হাজার ৮০০ ইউয়ান, ৯২ হাজার ৮০০ ইউয়ান ও ৯৯ হাজার ৮০০ ইউয়ান।
তাছাড়া, ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়াকরা স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের প্রতি বছর ৫০০০ ইউয়ান প্রশিক্ষণ ভর্তুকি দেয়া হবে।
বন্ধুরা, এতক্ষণ শুনছিলেন শিক্ষা সম্পর্কিত খবর। এখন আমরা আপনাদেরকে চীনের সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু তথ্য জানাবো। সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণপূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের সিয়ামেন শহরে অবস্থিত। ১৯২১ সালে প্রবাসী চীনা জনাব ছেন চিয়া কেং এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। চীনের শিক্ষার ইতিহাসে এটি সর্বপ্রথম প্রবাসী চীনার প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭টি ইন্সটিটিউট ও ১০টি গবেষণাগার রয়েছে। চীনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং চীনের হংকং, ম্যাকাও, তাইওয়ান ও বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮০০ জনেরও বেশি।
এ পর্যন্ত ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফ্রান্স ও রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের ২৭০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু তাই নয়, চীনা ভাষার প্রশিক্ষণ কাজেও অংশ নিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে মোট ১৫টি কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা জনাব ছেন চিয়া কেং একজন মহান দেশপ্রেমিক, প্রবাসী চীনাদের শীর্ষ নেতা, বিখ্যাত শিল্পপতি ও শিক্ষাবিদ। চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের থোংআন জেলায় ১৮৭৪ সালের ২১ অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি বাবার সঙ্গে সিঙ্গাপুরে গিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তারপর নিজ উদ্যোগে আনারস কারখানা, চালের কারখানা ও রাবার বাগান প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯১৬ সাল থেকে তাঁর কারখানায় তৈরি রাবারের দ্রব্য বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করা শুরু হয়। ধীরে ধীরে তিনি একজন জনপ্রিয় ও বিখ্যাত ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। যদিও তিনি বিদেশে বসবাস করেছেন তবে স্বদেশের উন্নয়নে তাঁর মনোযোগ ছিল অতুলনীয়। মাতৃভূমিতে অবদান রাখার জন্য তিনি শিক্ষা খাতে প্রচুর অর্থ প্রদান করেন।
১৯১৩ সালে তিনি জন্মস্থানে একটি প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পর্যায়ক্রমে সেখানে তিনি নর্মাল স্কুল, মাধ্যমিক স্কুলসহ ব্যবসা ও কৃষি খাতের পেশাদার স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এসব স্কুলের সংক্ষিপ্ত নাম 'চিমেই' স্কুল।
জনাব ছেন চিয়া কেং ১৯২১ সালে সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান করেন। একই সময়ে তিনি সিঙ্গাপুরে প্রবাসী চীনাদের জন্যও অনেক স্কুল গড়ে তোলেন।
একসময় বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে তিনি নানা পদ্ধতিতে অর্থ সংগ্রহ করে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রদান করেন। ১৯৩৭ সালের বসন্তকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক প্রশিক্ষণ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট অর্থ তাঁর কাছে ছিল না। ফলে তিনি সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়টি চীন সরকারকে প্রদান করেন। তখন থেকে সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫২ সাল তিনি চীনে ফিরে আসেন এবং তাঁর জন্মস্থান চিমেইতে বসবাস করা শুরু করেন। জীবনের বাকী সময়টাতে তিনি চীনের শিক্ষা খাতের উন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালান এবং চীনের বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখেন।
বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা মহান দেশপ্রেমিক, শিক্ষাবিদ ও দানবীর জনাব ছেন চিয়া কেং সম্পর্কে কিছু তথ্য জানলেন। এখন আমরা সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট সম্পর্কিত কিছু বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
এই ইন্সটিটিউট ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ইন্সটিটিউট চীনা ভাষার প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। এখানকার চীনা ভাষার প্রশিক্ষণের ধরন বিদেশে অনেক বিখ্যাত ও সুপরিচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের চীনা ভাষা শেখার চাহিদা মেটানোর জন্য এখানে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয়।