Web bengali.cri.cn   
শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চায় চীনের ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়
  2015-01-21 17:42:12  cri

আগেই আমরা বলেছি, ১৯৩৪ সালে ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয় চীনের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন প্রধান সিয়োং ছিং লাই চীনের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের পরিচালক ছিলেন। তিনি ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাদেশিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালান এবং অবশেষে তা সফল হয়। একই বছরের ২৪ নভেম্বর সরকারি ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিয়োং ছিং লাই বলেন, দেশের দুর্যোগের সময়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি করা হয়েছে। এ জটিল অবস্থায় আমরা দেশের নির্মাণে ব্যক্তি প্রশিক্ষণ দেবো এবং পেশাগত গবেষণায় বিশেষ ব্যক্তিও প্রশিক্ষণ দেবো। একই সাথে তিনি নতুন সরকারি ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি গান রচনা করেন।

গানের কথা প্রায় এরকম, উঁচু শিশান পাহাড় অহংকার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সীমানাহীন তিয়ানছি হ্রদ অনেক উদার। আমাদের চমত্কার ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয় পাহাড় ও হ্রদের মতো। ইউয়ুননানের ভূমিতে তারার উচ্চতা কমেছে এবং নিরক্ষ রেখার সঙ্গে দূরত্ব কমে এসেছে। ইউয়ুননানের আবহাওয়া ভীষণ আরামদায়ক, চার ঋতু ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার স্বর্ণ সময়। এখানকার গবেষণা ও অনুসন্ধান অবিরাম চলছে। নতুন জ্ঞান অর্জনে সংগ্রাম করতে হবে, যাতে চীনা জাতি শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিতে পরিণত হতে পারে। সত্যতা অনুসন্ধানে প্রচেষ্টা চালাতে হবে, যাতে উন্নত দেশের জন্য বিজ্ঞান প্রযুক্তির মান বাস্তবায়ন করা যায়। সেটা আমাদের উদ্দেশ্য, সেটা আমাদের আশা...

সুপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা যে গানটি শুনলেন তা ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের গান। গানের কথা কবিতার মতোই সুন্দর ও আশায় পরিপূর্ণ, তাইনা?

আসলে চীনের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন চীনের গণিত বিশেষজ্ঞ হুয়া লুও কেং, চীনের বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী উ ওয়েন চাও,চীনের বিখ্যাত দার্শনিক ফেং ইয়ো লান এবং চীনের জ্যামিতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চেন সিং শেন।

এবার আমরা এ ক'জন মহান ব্যক্তির কিছু তথ্য আপনাদের কাছে তুলে ধরবো।

হুয়া লুও কেং বিশ্ববিখ্যাত গণিতবিদ, চীনের বিজ্ঞান একাডেমির একজন সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর তাঁকে বিশ্বের ৮৮ জন গণিতবিদের অন্যতম একজন হিসেবে আখ্যায়িত করে। তিনি চীনের গণিতবিদ্যার উন্নয়নে গভীর অবদান রাখেন,তাঁকে চীনের আধুনিক গণিতবিদ্যার জনক বলা হয়। বিখ্যাত এই ব্যক্তি ১৯১০ সালে চীনের চিয়াংসু প্রদেশের চিনথান জেলার একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।১৯২৮ সালে তিনি টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হন, পরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেও তাঁর বাম পা চিরদিনের জন্য অবশ হয়ে যায়।

হুয়া লু কেং গণিতবিদ্যা খুব পছন্দ করতেন। নিজের অক্লান্ত পরিশ্রম ও গবেষণার মাধ্যমে ১৯৩০ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি চীনের 'বিজ্ঞান' ম্যাগাজিনে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্কালীন গণিতবিদ্যা বিভাগের পরিচালক,(পরে ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হন) সিয়োং ছিং লাই এ প্রবন্ধ পড়ে অনেক মুগ্ধ হন। তিনি মনে করেন, দরিদ্র পরিবারে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েও হুয়া লুও কেং এতো গুণগতমানসম্পন্ন প্রবন্ধ লিখেছেন, তা একটি অতি কঠিন ব্যাপার। তিনি হুয়া লুও কেংকে ব্যক্তিগতভাবে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতবিদ্যা বিভাগের লাইব্রেরিতে একজন সহকারী কর্মী হিসেবে ভর্তি করেন এবং তাঁকে গণিতবিদ্যা বিষয়ে গবেষণা করার জন্য নানা ধরনের সাহায্য ও প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।

জনাব সিয়োং ছিং লাইয়ের সাহায্যে হুয়া লুও কেং ৩ বছরের মধ্যে ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকে পরিণত হন এবং ১৯৩৬ সালে পণ্ডিত হিসেবে ব্রিটেনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় সফর করেন। তিনি পরপর ১৮টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন এবং তা ব্রিটেন, রাশিয়া, ভারত, ফ্রান্স ও জার্মানির গণিতবিদ্যা বিষয়ক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়।

১৯৩৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে হুয়া লুও কেং ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতবিদ্যা বিভাগে পড়ানো শুরু করেন। যদিও খুনমিংয়েও তাঁর জীবনযাত্রার মান আগের মতোই এতটা সচ্ছল ছিল না, তারপরও তিনি যথেষ্ট পরিশ্রমের মাধ্যমে গবেষণা করেন এবং গণিতবিদ্যা বিষয়ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখেন।

১৯৪৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে 'সংখ্যা তত্ত্ব' নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরে ইলিনোয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫০ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর তিনি পরিবার নিয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন এবং চীনের বিজ্ঞান একাডেমির গণিতবিদ্যা গবেষণাগারের প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮৩ সালে তিনি মার্কিন বিজ্ঞান একাডেমির প্রথম বিদেশি সদস্য নির্বাচিত হন এবং আন্তর্জাতিক গণিতবিদ্যা বিষয়ক মহলের ব্যক্তিরা তাঁকে একজন শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

শ্রদ্ধেয় মহান এই গণিতবিদ ১৯৮৫ সালের ১২ জুন জাপান সফরকালে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক রিপোর্ট জমা দেয়ার সময় হঠাত হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

 ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক জন বিখ্যাত ব্যক্তি হলেন ফেং ইয়ো লান। তিনি চীনের বিখ্যাত দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ। ১৯১৮ সালে তিনি পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে স্নাতক হন এবং ১৯২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

ফেং ইয়ো লান ১৯১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন এবং ১৯২০ সালের জানুয়ারি মাসে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন শাস্ত্র নিয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯২৩ সালে তিনি বিখ্যাত দার্শনিক বার্গসের চিন্তাধারার উপর ভিত্তি করে 'কেন চীনে বিজ্ঞান নেই' প্রবন্ধ রচনা করেন। তিনি মনে করেন যে, চীনের বিজ্ঞান প্রযুক্তির দুর্বলতার মূল কারণ চীনাদের বুদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং চিন্তাধারার সঙ্গে জড়িত।

চীনারা মানুষের নৈতিক চরিত্রের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তবে জ্ঞান ও ক্ষমতার ওপর গুরুত্ব দেন নি। কিন্তু পাশ্চাত্য দর্শনে প্রকৃতি ও বিশ্বকে জয় করার কথা বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করেন এবং দু'জন একসাথে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। পরে তিনি 'ভারতের ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনা' নামক এক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। চীনারা তাঁর প্রবন্ধের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দার্শনিক তত্ত্ব সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারেন।

চীনে ফিরে আসার পর তিনি ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে তিনি সেখানে অস্থায়ী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং 'চীনের দর্শনশাস্ত্রের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস' নামক এক বই প্রকাশ করেন। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন এবং দর্শনশাস্ত্রের উপর অনেক গবেষণামূলক বই প্রকাশ করেন।

১৯৯০ সালের ২৬ নভেম্বর ৯৫ বছর বয়সে ফেং ইয়ো লান মৃত্যুবরণ করেন। মহান এই ব্যক্তি চীনের দর্শনশাস্ত্রে অনেক অবদান রাখেন।

 সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, কথা বলতে বলতে ফুরিয়ে এলো আমাদের আজকের 'বিদ্যাবার্তার' সময়। আজকের 'বিদ্যাবার্তায়' আপনার চীনের ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বেশকিছু তথ্য জানতে পারলেন। হ্যাঁ বন্ধুরা, চীনের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরাই হলো আমাদের 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য।

আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে এবং সেই সঙ্গে চীনের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কেও আপনাদের কোনোকিছু জানার থাকলে আমাদেরকে চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগের ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn (সুবর্ণা/টুটুল)


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040