0121edu
|
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা দক্ষিণপশ্চিম চীনের ইউয়ুননান প্রদেশের রাজধানী খুনমিংয়ে অবস্থিত চীনের অন্যতম বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য তুলে ধরবো।
ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২২ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৩ সালের ২০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস শুরু হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। পূর্বে এর নাম ছিলো তুংলু বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৩৪ সালে এই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৪৬ সালে ব্রিটেনের 'কন্সাইজ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা' বই চীনের বিখ্যাত ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করে। এর মধ্যে খুনমিং বিশ্ববিদ্যালয় একটি।
তখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৫টি একাডেমি,১৮টি বিভাগ ও ৩টি গবেষণাগার ছিল। ২০১৪ সালে ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবাসাইটের খবর থেকে জানা গেছে, বর্তমানে মোট ২২টি একাডেমি, ১টি পাবলিক প্রশিক্ষণ বিভাগ ও ১টি ফরেন স্টুডেন্টস একাডেমি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্নাতক পর্যায়ে বিভাগ রয়েছে ৮৫টি।
ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেন স্টুডেন্টস একাডেমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীদের চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করা বিদেশি ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এ কারণে চীনের 'হানবান' অফিস এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের চীনা ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করার
১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটি হিসেবে নির্ধারণ করেছে।
চীনা ভাষার দক্ষতা বা মান সম্পর্কিত পরীক্ষা এইচএসকের নির্ধারিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খুনমিং বিশ্ববিদ্যালয়ে জুনিয়ার, মাঝারি ও সিনিয়র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এ পর্যন্ত ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশের ৮০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থার সঙ্গে শিক্ষা সম্পর্কিত বিনিময় কার্যক্রম গড়ে তুলেছে। ফরেন স্টুডেন্টস একাডেমি ১৯৮৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩০টি দেশ ও অঞ্চলের ১৫ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকের সঙ্গে চীনা ভাষা শিক্ষা সম্পর্কিত বিনিময় কার্যক্রম পালন করেছে। বর্তমানে একাডেমিতে পেশাদার ও খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা ৫০ জনেরও বেশি।
পেশাদার শিক্ষকের মধ্যে অনেকে স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি ও থাইল্যান্ডে গিয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।তাঁরা চীনা ভাষার উপর ব্যাপক অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন এবং বহুমুখী পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে চীনা ভাষা নিয়ে কাজ করছেন।
বাংলাদেশে ২০০৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত হয়। ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে এ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা হয়। চীনের 'হানবানের' মহাপরিচালক ম্যাডাম স্যু লিন এবং বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তত্কালীন চেয়ারম্যান জনাব আসাদুজ্জামান পৃথক পৃথকভাবে অভিনন্দনবার্তা পাঠান।
বাংলাদেশে নিযুক্ত তত্কালীন চীনা রাষ্ট্রদূত ছাই শি, ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উ সোং এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন মহলের প্রায় ১০০ জনেরও বেশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত ছাই শি তাঁর ভাষণে বলেন, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য নতুন রং যুগিয়েছে।
ঢাকায় প্রথম পর্যায়ের চীনের শিক্ষা প্রদর্শনী সফলভাবে আয়োজন করা এবং বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানদের প্রতিনিধি দলের সফলভাবে চীন সফর করার মাধ্যমে চীন ও বাংলাদেশের শিক্ষা খাতের আদান-প্রদান ও সহযোগিতায় অনেক সাফল্য অর্জিত হয়। ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উ সোং বলেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রস্তুতি নেয়ার পর কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কর্মীদের প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম যুক্ত রয়েছে।নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা বলেন, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশিদের জন্য চীনকে জানার একটি জানালা খুলে দিয়েছে। চীনের সুপ্রতিবেশী দেশ হিসেবে চীনের উন্নয়নের অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের সাফল্য শিখতে হবে বাংলাদেশকে। চীনা ভাষার প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ করা দু'দেশের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য লি ছাং ছুন ঢাকা সফর করেন এবং নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন। তিনি বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের বলেন, আমি ঢাকায় পৌঁছার ২৩ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশিদের চীনের প্রতি যে গভীর মৈত্রী অনুভব করেছি, তা দেখে মনে হয়েছে, দু'দেশের জনগণের আদান-প্রদানের ইতিহাস ২০০০ বছরেরও বেশি, ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ২০০৬ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটে চীনা ভাষা শেখার ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২০ থেকে ২০০০ জনে বৃদ্ধি পায়। চীনা ভাষা ছাড়াও, চীনা লিপিবিদ্যা, কুংফু ও চীনা সংগীতসহ বৈশিষ্ট্যময় কোর্সও চালু করা হয়।
বাংলাদেশের আরো বেশি ছাত্রছাত্রী যেন চীনে লেখাপড়া করতে পারেন সেজন্য লি ছাং ছুন সফরকালে চীনের সরকারি বৃত্তির সংখ্যা ৮০ থেকে ১৬০ জনে বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেন। তিনি আশা করেন, বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা চীনা ভাষা শেখার মাধ্যমে দু'দেশের মৈত্রীর সেতু ও দূতে পরিণত হবে এবং দু'দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের সাথে চীনের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কিত সহযোগিতার পরিচয় তুলে ধরলাম আমরা। এখন আমরা ইউয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গানের গল্প তুলে ধরবো।