Web bengali.cri.cn   
চীনের রেলপথ
  2015-01-21 12:00:48  cri

এখন আমরা ট্রেনে বেড়াতে যাবো চীনের তিব্বতে।

২০১৪ সালের আগস্টে চালু হয় লাসা-শিকাজে ট্রেন যোগাযোগ। সম্প্রতি লানা-লিন চি রেলপথ প্রকল্পও শুরু হয়েছে। তিব্বতে রেলপথ চালু হওয়ার পর আমরা ট্রেনে তুষারময় মালভূমিতে ভ্রমণ করতে পারি। এ ছাড়া, তিব্বতের মানুষও নিজের এলাকার বাইরে সহজে ভ্রমণ করতে পারে। রেলপথ শুধু তিব্বতের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যায় তা নয়, এটি চীনের অন্যান্য স্থানের সাথে তিব্বতের মানুষের মধ্যে সমঝোতা ও যোগাযোগের একটি সেতু নির্মাণ করে।

এখন আমরা শুনব 'ট্রেন শিকাজে যাচ্ছে' শীর্ষক একটি গান। এটা হল লাসা- শিকাজে রেলপথ চালু হওয়ার পর শিকাজে পর্যটন ব্যুরো কর্তৃক সৃষ্ট একটি গান।

যদি আপনি প্রথম বারের মতো তিব্বতে আসেন এবং লাসা থেকে ট্রেনে শিকাজে যান, তাহলে পথিমধ্যের দৃশ্য দেখলে অবাক হবেন। কেউ কেউ বলেন, তিব্বতের আকাশ পরিষ্কার এবং পাহাড় পবিত্র। কেউ কেউ বারবার তিব্বতে এসেও একঘেঁয়েমি অনুভব করেন না।

আরোও বেশি পর্যটককে তিব্বতে আকর্ষণ করা ছাড়া রেলপথ আর কী কী ভূমিকা পালন করতে পারে? শিকাজে পর্যটন ব্যুরোর প্রধান ভুপুচাসি আমাদেরকে জানান, গত আগস্ট মাসে লাসা-শিকাজে রেরপথ চালু হওয়ার পর শুধু আগস্ট মাসে পর্যটকের পরিমাণ ২০১৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেড়েছে এবং সেপ্টেম্বর মাসে এ সংখ্যা ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শিকাজে তিব্বতের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করতে চান বলেও তিনি জানান।

ভুপুচাসি আরও বলেন, "পর্যটনশিল্প চেন অনেক ব্যাপক ও লম্বা। কারু শিল্প,পরিবহন, ক্যাটারিং, পর্যটন সেবা ও স্মারকগ্রন্থ পণ্যসহ নানা ক্ষেত্র পর্যটন শিল্পের সাথে সম্পর্কিত। তিব্বত সরকার যদি পর্যটন শিল্পকে বড় ও শক্তিশালী করতে পারে, তবে তিব্বতের মানুষ এ থেকে উপকৃত হবে। অন্য দিকে,পর্যটকরা তিব্বত আসলে ভিন্ন সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে চান। আমরা তাদের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখানোর পাশাপাশি নিজেদের সংস্কৃতিরও প্রচার করতে চাই।"

শিকাজে শহরের লি সিন গ্রামের পুরবা একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। পরে তিনি ব্যবসায় নামেন। পুরবা প্রথমে একটি বাস কিনে পর্যটক পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন এবং আরো পরে গ্রামে পারিবারিক হোটেল খুলে বসেন। তার প্রভাবে গ্রামের অধিবাসীদের ধারণারও পরিবর্তন ঘটে। পুরবা বলেন, "আগে সবাই গোচারণ করতো বা সীমান্ত ব্যবসা করতো। তখন গ্রামে থাকতেন শুধু প্রবীণেরা, যুবকরা সব কাজ করার জন্য বাইরে যেত। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টেছে। এখন যুবকরা গ্রামে ফিরে আসতে চায় এবং আমার সঙ্গে সহযোগিতা বা পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ করতে চায়।" পুরবা আরও বলেন, "আমাদের অনেক সুন্দর প্রত্যাশা আছে।"

তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থুতেংকেচু দীর্ঘকাল তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অর্থনীতি,সংস্কৃতি ও পর্যটন নিয়ে গবেষণা করছেন। তার মতে, এ পর্যন্ত তিব্বতের অর্থনীতি কেন্দ্রীয় সরকার ও অন্য প্রদেশের সহায়তার ওপরই মূলত নির্ভরশীল ছিল। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করলে, তিব্বতের জনগণের ধারণা পাল্টাবে এবং তাদের আত্ম-উন্নয়ন ক্ষমতা উন্নত হবে।

থুতেংকেচু বলেন, "ট্রেন যোগাযোগের মাধ্যমে তিব্বত বাইরের জগত সম্পর্কে জানতে পারে এবং তিব্বতি মানুষ দেশের অন্যান্য অঞ্চল সম্পর্কে অবহিত হতে পারে। বাইরের পর্যটকরা আজকাল তিব্বতে আসেন এবং তাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি বাইরের দুনিয়ার পরিবর্তনের খবরাখবর। একসময় তিব্বতে আজকের কাজ কাল করার একটা প্রবণতা প্রচলিত ছিল। এর ফলে আমরা দেশের অন্যান্য স্থান থেকে পিছিয়ে পড়ি। আবার আগে তিব্বতি মানুষ ব্যবসা পছন্দ করতো না; তারা মনে করতো, ব্যবসায়ীরা ভালো মানুষ নয়, তারা সব ধূর্ত। তখন তিব্বতিরা নিজেদের সন্তানদের কেবল শিক্ষক বা ডাক্তার বানাতে চাইতেন। বর্তমানে এ ধারণা পাল্টেছে।"

শিকাজে Tashilhunpo মন্দিরের বাইরে একজন অন্ধ প্রবীণ তিব্বতি তিব্বত জাতির ঐতিহ্যিক বাদ্যযন্ত্র চানিয়ানকিন বাজিয়ে গান গেয়ে থাকেন। তখন মানুষ মন্দিরে প্রার্থনা করেন। তিব্বতের এই শান্ত ও ঐহিত্যিক জীবনরীতি বাইরের মানুষের জন্য সত্যিই আকর্ষণীয়।

সি ছুয়ানের বাসিন্দা সিয়াও থান পেইচিংয়ে কাজ করছিলেন। তবে পেইচিংয়ের খারাপ আবহাওয়া, ট্রাফিক জ্যাম এবং ব্যস্ততার তাকে ক্লান্ত করে তোলে। দুই বছর আগে তিনি সাইকাল চালিয়ে তিব্বতে আসেন এবং লাসাতে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন।

Jokhang মন্দিরের পাশে একটি রাস্তায় একটি বইয়ের দোকান খুলে বসেন তিনি। তিনি জানান, লাসায় দীর্ঘসময় বসবাস করার পর তার জীবনের গতি ধীরে ধীরে পাল্টেছ। তিনি হাসতে হাসতে জানালেন, এখন কেউ তাকে একটি রসিকতা করলে, অনেকক্ষণ পর তিনি তা বুঝতে পারেন। তিনি বলেন, 'আমি এখানে রিল্যাক্স মুডে থাকি। এখানে আমি খুঁজে পেয়েছি আমার জন্য একটি উপযুক্ত জীবন।"

আসলে মানুষ যোগাযোগের মাধ্যমে পরস্পরের ওপর প্রভাব ফেলে। তিব্বতের সংস্কৃতি থেকে আমাদের অনেককিছু শেখার আছে। যেমন তারা জীবন ও প্রকৃতিকে সম্মান করে এবং তাদের চাহিদা কম। রেলপথ চালু হওয়ার পর তিব্বত ও আমাদের মধ্যে স্থানিক দূরত্ব কমে যাওয়ার পাশাপাশি, আত্মিক ব্যবধানও কমে আসবে বলে আশা করা যায়।


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040