Web bengali.cri.cn   
চীনের রেলপথ
  2015-01-21 12:00:48  cri

ঝেংচৌ পূর্ব স্টেশন

চীনের ম্যাপ দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন যে, হে নান প্রদেশের রাজধানী ঝেংচৌ দেশের একটি কেন্দ্রীয় পয়েন্ট। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশকিছু সড়ক ও রেলপথ এসে মিশেছে এর সাথে। একসময় উন্নত রেল যোগাযোগের কারণে ঝেং চৌ ছিল চীনের অন্যতম বাণিজ্য শহর। ২০০৪ সালের আগেই, উত্তর থেকে দক্ষিণে যাওয়ার পেইচিং-কুয়াং চৌ রেলপথ ও পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাওয়ার লং হাই রেলপথ ঝেংচৌর সাথে সংযুক্ত হয়। ২০১২ সালে চালু হওয়া ঝেংচৌ পূর্ব স্টেশন এশিয়ার বৃহত্তম রেল স্টেশন। ঝেংচৌ চীনে উচ্চগতির রেলের সংযোগস্থলও বটে।

৬০ বছর বয়সি মিঃ থিয়ান মনে করেন, উচ্চগতির রেল ঠিক যেন 'ভূমিতে চলা বিমান'। তিনি বলেন, "আগে রেল চলতো সাইকেলের গতিতে; আর এখন ট্রেনে বসলে মনে হয় বিমানে চড়েছি।"

আগে চীনের ট্রেনের রঙ ছিল সবুজ। মিঃ সেনকে কাজের কারণে নিয়মিত ট্রেনে চড়তে হতো। আগেকার দিনের সবুজ ট্রেনে বসার অভিজ্ঞতা করতে গিয়ে তিনি বলেন,"আগে ট্রেনে চড়ার জন্য রীতিমতো পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হতো। একবার আমি পেইচিং থেকে উরুমুছি পর্যন্ত ৭২ ঘন্টার ট্রেন যার্নি করেছিলাম। সে আমলে ট্রেনে প্রায়ই বসার আসন পাওয়া যেত না, দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। আসন না-পেলে ট্রেনের মেঝেতে ঘুমাতে হতো। উচ্চগতির ট্রেন চালু হওয়ার আগে আমি ট্রেনে চড়া সত্যিই পছন্দ করতাম না।"

মানুষের মনে আগিলা জামানার ট্রেন যে বিরূপ ছাপ ফেলেছিল, বর্তমানের উচ্চগতির ট্রেন সে ছাপ পুরোপুরি মুছে দিয়েছে। দুপুরে পেইচিং থেকে ঝেংচৌ যাওয়ার উচ্চগতির ট্রেনে ম্যাডাম লি লাঞ্চ খাওয়ার জন্য তার ছোট মেয়েকে নিয়ে খাবারের কেবিনে আসেন। ম্যাডাম লি মনে করেন, শিশুকে নিয়ে বাইরে গেলে বিমানের চেয়ে উচ্চগতির ট্রেন ভাল। শিশুর খাবার ও পানীয় এখানে সহজে পাওয়া যায়।

বর্তমানে পেইচিং, সি আন ও উ হানসহ চীনের উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে যাতায়াতে উচ্চগতির ট্রেনে মাত্র ২ থেকে ৩ ঘন্টা লাগে। যুক্তরাষ্ট্র থাকে আসা গার্সিয়া দম্পতি তাদের ছোট মেয়েকে নিয়ে হু পেই প্রদেশের রাজধানী উ হান ও পেইচিংয়ের মধ্যে উচ্চগতির ট্রেনে আসা-যাওয়া করেন। চীনের উচ্চগতির ট্রেনের উচ্চ প্রশংসা করেন তারা।

মিঃ গার্সিয়া বলেন, "উচ্চগতির ট্রেনে ভ্রমণ খুব আরামদায়ক। গতকাল রাতে আমার গোটা পরিবার উ হান থেকে উচ্চগতির ট্রেনে পেইচিং যায় এবং আজ সকালে দূতাবাসে ভিসার এক্সটেনশন কাজ শেষ করে দুপুরে ফিরতি ট্রেন ধরে। ২৪ ঘন্টায় আমরা উ হান ও পেইচিংয়ের মধ্যে আসা-যাওয়ার করতে পারি। "

মিসেস গার্সিয়া বলেন, "বিমানের চেয়ে আমার উচ্চগতির ট্রেন ভাল লাগে। কারণ, ট্রেনের আসন তুলনামূলকভাবে বড় ও আরামদায়ক। তা ছাড়া, বিমানের টিকিটের দাম উচ্চগতির ট্রেনের টিকিটের তুলনায় বেশি। এমনকি আমাদের ছোট মেয়েটি ট্রেনে বিনামূল্যে ভ্রমণ করতে পারে।"

যাত্রী পরিবহন ছাড়াও, বাণিজ্য শহর হিসেবে ঝেংচৌ মালামাল পরিবহনের ওপর গুরুত্ব দেয়। ঝেংচৌতে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার (?) টন বিভিন্ন ধরনের মালামাল পরিবহন করা হয়। এসব মালামালের মধ্যে আছে টেলিভিশন, খাদ্য ও কৃষিজাত দ্রব্য। আপনি যদি আজ পেইচিংয়ে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে হে নান প্রদেশের এক বাক্স রাঙা আলু অর্ডার করেন, তাহলে কাল সকালে তা উচ্চগতির ট্রেনে আপনার কাছে পৌঁছে যাবে। তার মানে, এক দিনের ব্যবধানে আপনার কাছে পৌঁছে যাবে হে নানের খাবার।

উচ্চগতির ট্রেনে মালামাল পরিবহনের সুবিধা অনেক। প্রথমত, অন্য পরিবহন-ব্যবস্থার তুলনায় রেল-ব্যবস্থায় ব্যয় ১০ থেকে ২০ শতাংশ কম। ট্রেন জ্বালানি খরচও কম হয়। দ্বিতীয়ত, রেল তুলনামূলকভাবে দ্রুততর। দু'দিনের মধ্যেই চীনের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছাতে পারছেন। তৃতীয়ত, রেল পরিবহনের ওপর আবহাওয়া কম প্রভাব ফেলে। বৃষ্টি বা তুষারপাতের সময়ও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকে।

চীনের নতুন অর্থনৈতিক বিন্যাস পরিকল্পানায় ঝেংচৌর অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে ৯টি উচ্চগতির রেললাইন ঝেংচৌয়ে এসে সংযুক্ত হবে। সার্বিক যাতায়াতের সংযোগস্থল ও পণ্য স্থানান্তরের কেন্দ্রে পরিণত হবে ঝেংচৌ। হে নান প্রদেশের বিজ্ঞান একাডেমীর উপ-প্রধান ছাং চান চাং বলেন, "সার্বিক যাতায়াতের সংযোগস্থল ও পণ্য স্থানান্তরের কেন্দ্র হল কেন্দ্রীয় সমতল অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কৌশলের অন্যতম উপাদান। পরিবহন অবকাঠামো ভালভাবে নির্মিত হলে পণ্য স্থানান্তরের ব্যয় কম হবে এবং আরও বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে কেন্দ্রীয় সমতল অর্থনৈতিক অঞ্চল। "

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ঝেংচৌ ট্রেনের শহর। আর বর্তমানে সাধারণ ট্রেন নয়, বরং উচ্চগতির ট্রেনের শহর ঝেংচৌ।

1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040