1222music.mp3
|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি – পেইচিং থেকে আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এবার শুনুন 'সুরের ধারা' আসর।
রেশমপথ প্রদর্শনী
চীনের জাতীয় জাদুঘরে গত ৬ নভেম্বর শুরু হয়েছে রেশমপথ প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনী ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। চীনের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় পুরাকীর্তি ব্যুরো, শেনশি প্রদেশ, কানসু প্রদেশ, নিংসিয়াং হুই জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, ছিংহাই প্রদেশ, সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও হোনান প্রদেশের গণ সরকার যৌথ উদ্যোগে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। গত ১৭ ডিসেম্বর আমরা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগের সকল কর্মী ও পেইচিংয়ে অবস্থানরত কিছু বাঙালি বন্ধুরা একসঙ্গে এ প্রদর্শনী উপভোগ করি। সময় কম হলেও প্রদর্শনীটি আমাদেরকে খুবই মুগ্ধ করেছে।
আজকের 'সুরের ধারা' আসরে আপনাদেরকে রেশমপথ সম্পর্কিত কয়েকটি গান শোনাবো এবং সেই সঙ্গে রেশমপথ সম্বন্ধে কিছু তথ্যও আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
প্রথমে শুনুন চীনের কণ্ঠশিল্পী থান চিংয়ের গাওয়া 'রেশমপথ' নামে গান।
গানের কথা এমন, "খ্রিষ্টপূর্বের সীমান্ত অঞ্চলে উটের ঘণ্টার শব্দ কয়েক হাজার বছর ধরে বাজছে। প্রাচীনকালে প্রেমিকার নীল চোখে আমি দেখেছি চলমান বালি ও নদী। আমি একাকী মরুভূমিতে দেখেছি ধোঁয়া। আমি দেখেছি হাজার মাইল দীর্ঘ রেশমপথ। আমি দেখেছি সুদূরপরাহত দিগন্ত রেখা।"
চীনের জাতীয় জাদুঘর
বন্ধুরা, এবারের রেশমপথ প্রদর্শনীতে চীনের ১৬টি প্রদেশের ৪৪টি পুরাকীর্তি জাদুঘরের ৪০০টি মূল্যবান পুরাকীর্তি সংগ্রহ করে তা একসাথে প্রদর্শিত হচ্ছে। এটা হচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে আয়োজিত রেশমপথ সম্পর্কিত সবচেয়ে বড় আকারের প্রদর্শনী। এর বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে। আপনি যদি পেইচিংয়ে আসেন, সময় পেলে অবশ্যই এ প্রদর্শনী দেখবেন।
বন্ধুরা, এবার শুনুন হংকংয়ের গায়িকা লিয়াং চিং রু'র গাওয়া 'রেশমপথ' নামে গান। গানে বলা হয়েছে, "তারা হচ্ছে গরিবদের মুক্তা। তোমার হাসি আমাকে সমর্থন করে। বালিঝড় হচ্ছে আমার পাতলা পোশাক। এশিয়ার কুয়াশা পার হয়ে কে আমাকে রেশমপথে নিয়ে যাবে?"
রেশমপথ হচ্ছে পশ্চিম হান রাজবংশের রাজধানী ছাংআন অর্থাত্ বর্তমান শেনশি প্রদেশের শিআন শহর থেকে শুরু হয়ে কুয়ানচুং সমতল ভূমি, হোশি করিডোর, তালিম উপত্যকা পার হয়ে, মধ্য এশিয়া, ইরান আর ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার স্থলপথ। এ ঐতিহাসিক তাত্পর্যপূর্ণ আন্তর্জাতিক স্থলপথে রঙিন রেশমি কাপড়, চীনামাটি আর মশলা আদানপ্রদান হতো। এ রেশমপথ প্রাচীনকালে প্রাচ্য ও পশ্চিমের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
বন্ধুরা, এবার শুনুন 'মরুভূমির প্রেম' নামে গান। গেয়েছেন ফিনিক্স লিজেন্ড। গানের কথা এমন, "আমি তাকে দেখেছি। তাকে আর একাই ভবঘুরে হতো দিবো না। আমি তাকে এক বাসা দিতে চাই। যাতে সে আর ভয় না পায় । আমার চোখের জল হাজার বছর ধরে বরফ হওয়ার পর আস্তে আস্তে গলে যাচ্ছে। তৃণভূমির রাত্রে ফুল ফুটেছে।"
থাং রাজবংশের চিত্র
একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বাণিজ্য ও বিনিময় আবার এ প্রাচীন রেশমপথটিকে সতেজ করেছে। মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশ চীনের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করতে চায়। চীনের কিছু বিজ্ঞ ব্যক্তিও বার বার আহ্বান জানান যে, আধুনিক পরিবহন এবং বিশ্বায়নের উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে রেশমপথের নিকট অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করা উচিত।
সিনচিয়াং হচ্ছে রেশমপথের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এবার শুনুন 'আমার সঙ্গে সিনচিয়াংয়ে আসুন' নামে গান। গেয়েছেন শু ছিয়ান ইয়া।
গানের কথা এমন, "আসো, আসো, তোমার ভালোবাসা নিয়ে আমার সঙ্গে সিনচিয়াংয়ে আসো। রহস্যময় সিনচিয়াংয়ের সুন্দর দৃশ্য তোমাকে মুগ্ধ করবে।"
২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কাজাখস্তানের নাজারবায়েভ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেয়ার সময় যৌথভাবে 'রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল' প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। এটা এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের জনগণের বিশাল কল্যাণ বয়ে আনবে।
বন্ধুরা, আপনারা এখন শুনুন 'লোলানের মেয়ে' নামে গান। গেয়েছেন ইয়ু চিং। এ গানটি সিনচিয়াংয়ের প্রাচীন নগর লোলানকে ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। গানটি ১৯৯৫ সালে চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্রের সংগীত টিভি প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পুরস্কার লাভ করে।
চীনের প্রাচীনকালের পোশাক
বন্ধুরা, আপনি কখনো দুনহুয়াং মোকাও গুহার নাম শুনেছেন? এটা হচ্ছে উত্তর-পশ্চিম চীনের এক অদ্ভুত দর্শনীয় স্থান। মোকাও গুহা হোশি করিডোরের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। গুহার মধ্যে মোট ৪৫ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে দেওয়াল চিত্র রয়েছে। এটা হচ্ছে বিশ্বের সংরক্ষিত সবচেয়ে বড় আকারের এবং সবচেয়ে সমৃদ্ধ বৌদ্ধ ধর্মের শিল্পকলা কেন্দ্র। দেওয়াল চিত্রে অনেক সুন্দর সুন্দর উড়ন্ত দেবী আছে। এবার শুনুন 'উড়ন্ত দেবী' নামে গান।
বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সুরের ধারা আসর শুনছেন। আজ আমি রেশমপথ সম্পর্কিত কয়েকটি গান আপনাদেরকে শুনিয়েছি। অবশেষে শুনুন তাইওয়ানের গায়িকা হুয়াং ইয়াং ইয়াং'র গাওয়ার 'রেশমপথ' নামে গান।
গানে বলা হয়েছে, 'ঘন কুয়াশা পার হয়ে আমি নীরব চোখ নিয়ে রেশমপথে যাচ্ছি। এ রহস্যময় বিশ্বে আছে খাঁ খাঁ রোদে তীব্র ঝড়বাতাস। আমি হালকা ধোঁয়া হয়ে আকাশে উড়তে চাই।'
শ্রোতাবন্ধুরা, এ সময়ের সুরের ধারা আসর এ পর্যন্তই। আশা করি, গানগুলো আপনাদের ভালো লেগেছে। সবাই ভালো থাকুন। আবার কথা হবে। (ইয়ু / টুটুল)