অপেরা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সহজ নয়। লিপি তৈরিতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয় অপেরা দল। প্রথমে ওয়াং থুং চীনা কুনশু অপেরার বিন্যাস অনুযায়ী একটি লিপি রচনা করেন। তবে মঞ্চে এর ভালো প্রভাব পড়েনি। পরে তারা ক্যান্টনিজ অপেরা লিপি রচনা শুরু করেন। নাম থেকে আমরা জানতে পারি যে, এ অপেরা ক্যান্টনিজ ভাষায় গাওয়া। ক্যান্টনিজ উচ্চারণ ম্যান্ডারিনের চেয়ে ভিন্ন এবং ঐতিহ্যিক অপেরায় প্রতি বাক্যের শেষ শব্দে ছড়ার মতো আছে। বিশেষ করে ক্যান্টনিজ অপেরায় প্রতিটি বাক্যের শেষে নির্দিষ্ট শব্দের সংখ্যা ঠিক রেখে অপেরা রচনা সহজ নয়। মাও সিয়াও ইউয়ু বলেন, নিয়ম অনুযায়ী অপেরা রচনা করাটা যেনো ছন্দের তালে নৃত্য করার মতো।
তাছাড়া, সংস্কৃত নাটক খুব লম্বা বলে তা চীনা মঞ্চের জন্য উপযুক্ত নয়। ওয়াং থুং বলেন "দুটি অপারার মধ্যে পার্থক্য অনেক বেশি। সংস্কৃত নাটকের অনুষ্ঠান কয়েক দিনেও শেষ হতো না, বর্তমানে আড়াই ঘণ্টার একটি নাটক করলে তা থেকে অনেক কেটে ফেলে দিতে হতো।"
পেশাদার মানুষের সহায়তায় ১৫ বার সংশোধনের পর ক্যান্টনিজ অপেরার লিপি তৈরি শেষ হয়।
মঞ্চে প্রদর্শনের জন্য ভারত নৃত্যের বিশেষজ্ঞ চিন সান সানকে আমন্ত্রণ জানায় দলটি। তিনি বলেন, "দুটি অপেরা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলেও বাস্তবায়ন সহজ নয়। কারণে সবাই জানে, ভারত ও চীনের সংস্কৃতি প্রাচ্য সংস্কৃতি হলেও প্রত্যেকেরই ভিন্ন এবং নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। কীভাবে চীনা নাটকের গান ভারত নৃত্যে যোগ দেয়া যায় এবং কস্টিউমসহ নানা বিষয় নিয়ে আমি চিন্তা করেছি। আমাদের প্রথম সংস্করণ দেখে সবাই অসন্তুষ্ট কারণে গান ও নৃত্য আলাদা আলাদাভাবে এবং সঙ্গীতও ভালো নয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করেছি।"
সঙ্গীত ছাড়া নৃত্য প্রশিক্ষণও একটি সমস্যা। ক্যান্টনিজ অপেরার অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের ভারত নৃত্যের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। অনুশীলনের জন্য চিন সান সান চার বারের মতো পেইচিং ও নান নিংয়ের মধ্যে আসা –যাওয়া করেন এবং প্রতিবার তিনি এক মাসে নান নিংয়ে থাকেন। প্রত্যেক সকালে অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের মৌলিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। একটি সহজ কসরতও এক মাস ধরে প্রতি সকালে ৩০ মিনিটের মতো প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
ভাল কস্টিউম তৈরির জন্য চিন সান সানও ভারতের নানা শহরে বেড়াতে যান এবং পোশাক তৈরি করেন। পরে তার ভারত বন্ধু কস্টিউম নিয়ে বিমান যোগে নান নিং আসেন এবং অভিনেতা ও অভিনেত্রীর হাতে তা তুলে দেন।
লিপি, সঙ্গীত, নৃত্য ও কস্টিউম ও একটি ধারণা থেকে একটি নাটক তৈরি করায় এক বছর লেগে যায়। সব প্রচেষ্টা ২৪ অক্টোবর রাতে ওই মঞ্চ থেকে নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করা হয়। ঝকঝকে মঞ্চে শিল্পীরা ভারতের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন। তাদের গাওয়ায় আমরা দেখি রত্নাবলী ও রাজা উদয়নের ভালবাসার গল্প। আড়াই ঘণ্টার অনুষ্ঠানে বার বার শোনা যায় দর্শকদের সাধুবাদ। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর অভিনেতা ও অভিনেত্রীর সঙ্গে দর্শকরাও নাচতে থাকেন।
নান নিংয়ের দর্শকরা এ নাটক অনেক পছন্দ করে। ম্যাডাম ছাং একজন ক্যান্টনিজ অপেরার অনুরাগী এবং তিনি মাঝে মাঝে ক্যান্টনিজ অপেরা দেখার জন্য থিয়েটারে যান। এবার অনুষ্ঠান তার অনেক ভাল লেগেছে। তিনি বলেন,
"ভারতের সংস্কৃত নাটক ও ক্যান্টনিজ অপেরার সংযোগ খুবই আকর্ষণীয়। পোশাক, প্রজ্বলন খুব সুন্দর। দেখে বা শুনে তো নতুন একটা অনুভব। আমি এটি অনেক পছন্দ করেছি এবং জানতে পেরেছি যে, সবাই এ নাটকটি পছন্দ করেছে।
ভারত থেকে আসা দর্শক সঞ্জয় গৌতমও ভাবেননি যে এবারের অনুষ্ঠানটি এতো মজার হবে। তিনি বলেন,
'আমি কখনও ভাবিনি নান নিংয়ে এরকমের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবো। চীনা শিল্পী ভারতের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি চীনে বয়ে এনেছেন খুব চমৎকারভাবে। আশা করছি, ভবিষ্যতে আরও বেশি এরকমের অনুষ্ঠান হবে এবং দু'দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়বে। দু'দেশের জনগণ পরস্পরকে আরও জানতে পারবে এবং বাড়বে দু'দেশের মৈত্রী।"
ওই রাতে কুয়াং তুংতে ভারতের কন্সুলার জেনারেল কে নাগারাজ নাইডু এ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। কুয়াং তুংতে তিনিও বহুবার ক্যান্টনিজ অপেরা দেখেছেন। ক্যান্টনিজ অপেরার মাধ্যমে সংস্কৃত নাটকের প্রশংসা করেন তিনি। তিনি বলেন
"আজকের অনুষ্ঠান চমত্কার হয়েছে। চীনা অপেরায় দেখা যায় ভারতের সংস্কৃত নাটক। দু'দেশের সংস্কৃতির মধ্যে ব্যবধান নেই। সবাই এ অনুষ্ঠান পছন্দ করে এবং সব ভারত ও চীনা মানুষ এখানে একত্রিত হয়।"
শিল্প ও সংস্কৃতিতে কোনো সীমান্ত নেই। প্রাচীন সংস্কৃত নাটক চীনা শিল্পীর মাধ্যমে নতুন জীবনীশক্তি পায়। দুটি বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যেনো, দুটি তারার মতো আলো বিচ্ছুরণ করে সারা প্রাচ্য উজ্জ্বল করে তোলে।