Web bengali.cri.cn   
 চীনা ফুটবল অনুরাগী ছাং উ ই
  2014-08-13 13:22:56  cri

তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নিয়ে লা মু জেলা ছাং মু উপজেলার লি সিন গ্রামে বসবাস করেন শেরপা জাতির ৭০০ মানুষ। চীন ও নেপালের সীমান্তে খাড়া পাহাড়ের পাদদেশের প্রাচীন বনগুলোতে গ্রামটি অবস্থিত। গ্রামবাসী সাধারণত কৃষি কাজ করে অথবা সীমান্তে ব্যবসা-বাণিজ্য করে।

২০১১ সাল থেকে তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গ্রামগুলোর উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মদলের গ্রামে থাকার নিয়ম চালু হয়। এরপর লাসার একটি কর্মদল লি সিন গ্রামে যায় এবং সেখানে গ্রামবাসীদের সেবা দেয়া শুরু করে। তাদের প্রধান দায়িত্ব হল গ্রামবাসীদের সমস্যা সমাধান করা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তিন বছর একটানা কাজের পর, লি সিন গ্রাম ও গ্রামবাসীদের ধারণা পরিবর্তন হয়। এখন শুনুন বিস্তারিত প্রতিবেদন।

সাংবাদিকদের গাড়ি ছাং মু জেলা থেকে ত্রিশ মিনিটের পর লি সিন গ্রামে পৌঁছায়। গ্রামে প্রবেশ করলেই প্রথমেই দেখা যায় ইউরোপীয় ধাঁচের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। সেখানে দাঁড়িয়ে পানি ও পাখির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। দেখা যায় বিস্তৃত আদিম বন, উপত্যকা ও সীমান্তের অন্য পাশের নেপালি গ্রাম।

পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের কাছাকাছি মেই তো'র বাড়ি। তিন তলা বিশিষ্ট এ বাসাটি খুব সুন্দর।

আপনি হয়তো ভাবতেও পারবেন না, এখন যেখানে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার দেখতে পাচ্ছেন ছয় মাস আগে সেখানে ছিলো একটি আঁস্তাকুড়, মেই তো'র বাড়ি ও ছোট একটি কাঠের বাসা।

মেই তো বলেন, "আগে এখানে ছিল একটি আঁস্তাকুড় এবং খুব দুর্গন্ধ। কর্মদলের সাহায্যে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার তৈরি হয়, এবং আমরা নতুন একটি বাসাও তৈরি করেছি। আমি খুব খুশি ও আনন্দিত। আমি কখনও এত সুন্দর বাসা চিন্তা করতে পারি না। এছাড়া, তাদের সাহায্যে আমরা একটি রেস্টুরেন্ট ও পারিবারিক হোটেল খুলি। আমি খুবই আনন্দিত ও অভিভূত এবং তাদের জানাই আমার অনেক অনেক ধন্যবাদ।"

মেই তোর বাসা নতুন নির্মিত পারিবারিক হোটেলগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভবিষ্যতে লি সিন গ্রামে পর্যটন শিল্প উন্নত হবে এবং এ উপলক্ষে কর্মদল সরকারি সহায়তার অর্থ নিয়ে পুরোনো বাসাগুলো ঠিক করবে। তারা ১০টি পরিবারকে সৌর শক্তির সাহায্যে পানি গরম করার সরঞ্জাম দেয়। গ্রামবাসী এগুলো ব্যবহার করে আবার পারিবারিক হোটেলের ব্যবসার কাজেও ব্যবহার করে। তবে তাদের অর্থ সহায়তা দেয়া কর্মদলের প্রধান কাজ নয়। তারা চায় গ্রামবাসী তাদের সাহায্যে ব্যবসা করতে শিখবে। তারা পারিবারিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করবে এবং গ্রামবাসী হবে এ রেস্টুরেন্টের শেয়ার হোল্ডার। রেস্টুরেন্টের মাধ্যমে যে আয় হবে তা গ্রামবাসীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

পু এর পা লি সিন গ্রামের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র। তিনি সরকারি বিভাগে কাজ করতেন, পরে ব্যবসা শুরু করেন। এখন তার নেতৃত্বে লি সিন গ্রামবাসী কাজ করছে। তিনি একটি মিনিবাস কিনেছেন এবং যাত্রী পরিবহনের কাজ করেন। কর্ম দলের সাহায্যে তিনি একটি হোটেল খুলেছেন। এ হোটেলের নাম 'ওক তালুক'।

পু এর পা বলেন "হোটেল সাজানোর সব সরঞ্জাম কর্মদল সরবরাহ করেছে। এ হোটেলের মাধ্যমে গ্রামবাসী অর্থ উপার্জন করবে। আশা করি সব পরিবার এ ব্যবসায় অংশ নিতে পারবে এবং ধীরে ধীরে উচ্চবিত্ত হবে।"

 সাংবাদিকরা দেখেছেন যে, লি সিন গ্রাম থেকে ছাং মু জেলা যাওয়ার পথেও তৈরি হচ্ছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এ সড়কও চালু হবে। গ্রাম সুন্দর হলে এবং অবকাঠামোও উন্নত হবে। গ্রামবাসীদের ধারণাও পরিবর্তন হবে। পু এর পা বলেন, আগে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কৃষি কাজ ও পশুপালন করতো। শুধু বৃদ্ধ মানুষগুলো গ্রামে বসবাস করে। এখন গ্রামের উন্নয়ন দেখে যুব সমাজও গ্রামে ফিরে আসতে চায়।

পু এর পা আরো বলেন, "নতুন নির্মিত পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও হোটেলে তাদের আগ্রহ বেশি। তারা আমাকে বলে, আমি এখানে কাজ করতে চাই বা পুঁজি বিনিয়োগ করতে চাই। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাদের ধারণা পরিবর্তন হচ্ছে।"  

জনগণের সমস্যা সমাধান করা কর্মদলের আরেকটি দায়িত্ব। পা সাং ছোটবেলা থেকে যক্ষ্মার রোগী। এবং পরিবারের সব আয় তার চিকিত্সার জন্য বায় হয়ে থাকে। নেপালে কয়েক বছরের চিকিত্সার পর তার আবারো রোগ দেখা দেয়। দিন দিন তা বেড়েও যায়। এক দিন পা সাংয়ের মা সাহায্যের জন্য কর্মদলের কাছে আসেন। কর্মদল পা সাং লা সাকে শহরের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

কর্মদলের সদস্য পিং ছুও চুও কা বলেন, "চেক করার পর ডাক্তার জানান, সময়মত চিকিত্সা না হলে তার ক্ষতি হতো। লাসার হাসপাতাল তার যক্ষ্মার চিকিত্সা করছে। পরে তাকে সাংহাই হাসপাতালে পাঠানোর কথা। ওখানে চিকিত্সার মানও ভাল।"

এ ঘটনা পা সাংয়ের পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। অথচ কর্মদলের জন্য এটি খুবই সাধারণ কাজ। ফু চুন পঞ্চম কর্মদলের প্রধান। তিনি বলেন, লি সিন গ্রামে থাকায় গ্রামবাসীর উন্নতি হয়েছে তা নয় বরং কর্ম দলের অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে।

তিনি বলেন "তৃণমূলে কীভাবে কাজ করা যায় তা নিয়ে আমরা অনেক গবেষণা করেছি। আগে আমি প্রচার বিভাগে কাজ করতাম। অফিসে আমি হয়ত সারা জীবন একই রকম কাজ করতাম। তৃণমূলে কাজ না করলে আমরা বড় হতে পারবো না। গ্রামে কাজ করা আমার জন্য বিশেষ একটি অভিজ্ঞতা। আমিসহ আমার সব সদস্য এ অভিজ্ঞতার জন্য ধন্যবাদ জানাই। কারণ আমরা অনেক শিখেছি।"

২০১১ সাল থেকে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ২০ হাজার ক্যাডার বাছাই করে এবং প্রতি ৫ হাজার গ্রামে পাঠানো হয়। এ কর্মদলের সাহায্যে তিব্বতের প্রতিটি অংশে পরিবর্তন হচ্ছে, উন্নয়ন হচ্ছে।


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040