0813
|
পয়লা মে মাসে জন্মগ্রহণের কারণে উ ইর নাম পান লি উ ই। তিনি হে নান আর্ট কলেজের একজন শিক্ষক তবে একজন ফুটবল অনুরাগী ও ফুটবল তথ্য সংগ্রাহক হিসেবে তিনি বেশি জনপ্রিয়তা পান। তিনি সব 'Soccer News' সংবাদপত্রসহ চীনের বিখ্যাত ফুটবল সাংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন সংগ্রহ করেন। ১৯৭৩ সাল থেকে ফুটবলের সম্পর্কিত যেসব প্রবন্ধ তিনি পড়েছেন তা দিয়ে অ্যালবাম তৈরি করেছেন। তথ্য সংগ্রহের জন্য তার দশ বারটি আলমারি আছে। তিনি যে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তা নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন। এ বইটিতে একজন অনুরাগীর দৃষ্টিকোণ থেকে চীনের ফুটবলের উন্নয়নের বিভিন্ন কথা বলা হয়েছে।
ছোটবেলা থেকে ছাং উ ই ফুটবল পছন্দ করতেন। তার বাসা ঠিক হে নান স্টেডিয়ামের কাছে অবস্থিত এবং হে নান প্রদেশের ফুটবল দল সেখানে প্রশিক্ষণ নেয়। তিনি সবসময় বন্ধুর সঙ্গে প্রশিক্ষণ ম্যাচগুলো দেখার জন্য স্টেডিয়ামে যান। ছাও উ ই বলেন, "তখন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের চার পাশে দেওয়াল ছিলো না তাই আমরা সহজেই ভেতরে যেতে পারতাম। প্রশিক্ষণের সময় মাঠের বাইরে যাওয়া বল আমরা কুড়িয়ে আনতাম।"
তিনি যখন প্রাথমিক স্কুলে পড়তেন তখন ছাং উ ই ফুটবল দলে যোগ দেন। প্রতিদিন বন্ধুদের সঙ্গে খেলেন ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তার ফুটবলের প্রতি ভালবাসার জন্য খেলার মানও দিন দিন উন্নত হয়। পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় হওয়া তখন ছাং উ ইর স্বপ্ন ছিলো। তবে শেষ পর্যন্ত এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয় নি। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে চীনা শহরে শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের দূরবর্তী অঞ্চলে গিয়ে কাজ করতে হতো। তখন ১৮ বছর বয়সী ছাং উ ই পাহাড়ি অঞ্চলে যান। ওখানে ফুটবলের সঙ্গে কোন সম্পর্ক ছিলো না। তাই যখন তিনি শহরে ফিরে আসেন, তখন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার সুযোগ থাকে না। তিনি বলেন "আমি ভেবেছিলাম পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় হতে না পারলেও আমি একজন রেফারি হতে পারব এবং আমিও ফুটবল খেলোয়াড়দের সঙ্গে মাঠে দাঁড়াতে পারব। ১৯৮৩ সালে ছেং চৌ রেফারি পরীক্ষায় আমি প্রথম স্থান অর্জন করি এবং অবশেষে দ্বিতীয় শ্রেণীর রেফারির যোগ্যতা অর্জন করি।"
অবশ্য পরে তার রেফারি হওয়ার স্বপ্নও ভেঙ্গে যায় কারণ তার চোখে গুরুতর সমস্যা ধরা পড়ে। তখনকার চীনে কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার না থাকায় চশমা পরে রেফারি হওয়া যতো না। তাই ১৯৮৬ সালে তিনি রেফারির পেশা পরিত্যাগ করেন এবং তখন থেকে ছাং উ ই একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে চীনা ফুটবল উপভোগ করেন। এরপর তিনি তার বন্ধুর সঙ্গে ছেং চৌ ফুটবল অনুরাগী কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি কমিটির নেতা হিসেবে চীনা ফুটবলকে সমর্থন দিয়ে যান। এর পাশাপাশি তিনি একটি অপেশাদার ফুটবল দল প্রতিষ্ঠা করেন। দলের নাম 'ভোরের তারকা'। গত শতাব্দীর ৮০ দশক থেকে এ পর্যন্ত দলটি উন্নয়নের ধারা বজায় রেখেছে। ছাং উ ই বলেন, "বিভিন্ন মহল ও সংগঠনের মানুষ নিয়ে গঠিত এ দল। আমি জানি না কবে এ দল ভেঙ্গে যাবে। ভোরের তারকা যেমন সূর্যোদয়ের সঙ্গে বিলীন হয়, তাই আমরাও যে কোন সময় বিলীন হওয়ার কথা মাথায় রেখে এ নাম দেই। ১৯৮৩ সালের দিকে চীনে পেশাদার ফুটবল দল খুবই কম ছিলো।"
ফুটবল অনুরাগী কমিটি থেকে অবসর নিলেও ফুটবলের প্রতি ছাং উ ইর ভালবাসা কমেনি। তিনি ফুটবল সম্পর্কিত স্মারক ও তথ্য সংগ্রহ করেন এবং নিজ বাড়িতে একটি যাদুঘর চালু করেন। একজন ফুটবল অনুরাগী হিসেবে চল্লিশ বছরে তিনি দশ-বারো হাজার ফুটবল সম্পর্কিত জিনিস সংগ্রহ করেন। যেমন বিভিন্ন দশকে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড়ের কার্ড, ৭০ দশক থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফুটবল প্রতিযোগিতার টিকিট, বিশ্ব ক্যাপের স্মারকবস্তু ইত্যাদি। বর্তমানে তিনি চীনা ফুটবল উন্নয়নের অবদানগুলো সংগ্রহ করছেন। তিনি এ প্রকল্পের মান দিয়েছেন 'চীনা পদচিহ্ন'। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৪ সালে চীনা পেশাগত লীগ শুরু হওয়ার আগ্ পর্যন্ত চীনা ফুটবল উন্নয়নে অবদান সংগ্রহ করেছেন। তিনি তাদের পদচিহ্ন নিয়ে একটি অ্যালবাম তৈরি করেন এবং চলতি বছর বিশ্বকাপ চলাকালে তিনি এ অ্যালবাম চীনে প্রদর্শন করেন এবং অন্য ফুটবল অনুরাগীদের কাছে চীনের ফুটবল উন্নয়ন তুলে ধরেন। তিনি বলেন,"চীনা ফুটবলের বেশ কঠিন সময় যাচ্ছে এবং এর উন্নয়নে আমাদের সবারই সহযোগিতা প্রয়োজন। চীনা ফুটবলের উন্নয়নের জন্য অনেক সময় লাগবে। আমাদের কখনও এ স্বপ্ন দেখা বন্ধ করা উচিত না। ভবিষ্যতে একদিন আমি না পারলেও আমার নাতি দেখবে যে চীনের ফুটবল বিশ্বকাপ জয় করেছে।"