

তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চীনের ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে অবস্থিত। প্রচুর পানিসম্পদের কারণে একে দেশের 'পানি টাওয়ার' বলে ডাকা হয়। গোটা চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তিব্বত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃত্রিম বন উন্নয়নে তিব্বতের স্থানীয় সরকার অনেক কাজ করেছে।
তিব্বতের রাজধানী লাসার ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত শিকাজে অঞ্চলের নান মু লিন জেলার আই মা উপজেলা। তিব্বতি ভাষায় 'আই মা' মানে 'বড় ভূমি'। এ অঞ্চলটি ইয়া লু চাং পু নদীর কাছে অবস্থিত। কিন্তু তীব্র সূর্যালোক ও কম বৃষ্টিপাতের কারণে এখানে মরুকরণ চলছে।
এই প্রতিকূল পরিবেশেই তিব্বতি মানুষ এতদঞ্চলের মরুভূমিতে কৃত্রিম বন সৃষ্টির লক্ষ্যে চারাগাছ রোপণ করেন। ৩৮ বছর বয়সী লুও পু, আই মা উপজেলার একজন বাসিন্দা এবং তিনি এখানে ৪ মাস ধরে চারগাছ রোপণ করছেন। তিনি মূলত চাষবাস করেন। মূল কাজের ফাঁকে তিনি মরুভূমিতে চারাগাছ রোপণের কাজ করেন। আর এ কাজ করে তিনি প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০ ইউয়ান করে আয় করতে পারেন। চারাগাছ রোপণের মাধ্যমেই বছরে তার আয় দাঁড়ায় ১০ হাজার ইউয়ান। নান মু লিন জেলা বনজ ব্যুরোর প্রধান সি রেন চিয়া পু জানান, কৃত্রিম বন সৃষ্টির আগে এতদঞ্চলে ছিল কেবল বালি আর পাথর। কোনো গাছপালা ছিল না। তিনি বলেন-
"আগে এখানে মরুকরণ পরিস্থিতি গুরুতর ছিল। তখন বাতাস ছুটলেই প্রতিটি বাড়ির সামনে বালির পাহাড় জমে যেত। কৃত্রিম বন সৃষ্টির পর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে।"
২০১১ সাল থেকে নান মু লিন জেলা কর্তৃপক্ষ ইয়া লু চাং পু নদীর উত্তর তীরে পতিত জমিতে কৃত্রিম বন সৃষ্টির কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের ৭ কোটি ইউয়ান অর্থের সাহায্যে ৭২২ একর কৃত্রিম বন এবং ১০ কিলোমিটার লম্বা গ্রীন করিডোর নির্মিত হয়েছে; প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে পতিত জমি।
নান মু লিন জেলার উপ-প্রধান মেং সিয়াং থাও বলেন, তিব্বতে কৃত্রিম বনের গাছগুলো দীর্ঘকাল বেঁচে থাকতো না। এটা একটা বড় সমস্যা ছিল। এ ক্ষেত্রে সমস্যা দ্বিমুখী: একদিকে অনাবৃষ্টি এবং অন্যদিকে যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাব। তাই এ সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় সরকার তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন-
"প্রথমত গাছ রোপণের আগে জলসেচ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গাছ রোপণ করা হয়; যেমন, রোপণের আগে বাছাই করা হয়, পোকা ও পতঙ্গের আক্রমণ রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং ও যথাযথ পরিমাণে সার প্রয়োগ করা হয় ইত্যাদি। তৃতীয়ত, বন ব্যবস্থাপনার জন্য ৩০ জন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।"
এর ফলে, চলতি বছর ৭২২ একর কৃত্রিম বনের ৯৫ শতাংশ গাছ বেঁচে আছে এবং আগামী তিন বছর পরও ৮৫ শতাংশ গাছ বেঁচে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিব্বতের জন্য এটা বিস্ময়কর ঘটনা।
কৃত্রিম বন স্থাপনের পর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এতদঞ্চলে বালুঝড় ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং বায়ুর আর্দ্রতা ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে গ্রামবাসীদের জন্য কর্মসংস্থান। গ্রামবাসীরাও এ প্রকল্পের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে। তাদের মতে, কৃত্রিম বন বালিঝড় প্রতিরোধ করে, পরিবেশ সুন্দর করে এবং জলবায়ুর আর্দ্রতা বাড়ায়, যা ফসল উত্পাদনের জন্য ভালো।




