Web bengali.cri.cn   
চীন-মার্কিন কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সংলাপ
  2014-07-29 16:21:25  cri

গত ১০ জুলাই পেইচিংয়ে শেষ হয় 'চীন-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সংলাপ'-এর ৬ষ্ঠ দফা আলোচনা। এবারের সংলাপে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা, গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিভিন্ন বিষয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক হট ইস্যু ইত্যাদি নিয়ে দু'দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা শতভাগ সফল হয়েছে বলে উভয় পক্ষ থেকেই দাবি করা হয়। বিশেষ করে, সংলাপে দু'দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি সম্পর্কিত আলোচনায় ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।

সংলাপ শুরুর আগে একটি প্রশ্ন অনেকের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। প্রশ্নটি হচ্ছে: চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির আলোচনায় অগ্রগতি অর্জিত হবে কি? বিগত ২০ বছরে, বেশকিছু মার্কিনি শিল্প-প্রতিষ্ঠান চীনের বাজারে প্রবেশ করেছে এবং আরো কিছু উচ্চ-প্রযুক্তির শিল্পপ্রতিষ্ঠান চীনের বাজারে প্রবেশ করতে চাচ্ছে। অন্যদিকে, চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বহির্মূখী প্রবণতা লক্ষণীয়। এ পটভূমিতে, একটি সার্বিক ও পদ্ধতিগত দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করা দু'দেশের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবারের সংলাপে দু'পক্ষ চুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে একমত হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে নেতিবাচক তালিকা নিয়ে আলোচনা করেছে।

চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ওয়াং ইয়াং বলেন- "দু'পক্ষ একমত হয়েছে যে, ২০১৪ সালেই দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির কেন্দ্রীয় সমস্যা ও প্রধান বিধি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাবে এবং ২০১৫ সালের শুরুতে নেতিবাচক তালিকা নিয়ে দরকষাকষি শুরু করবে। ইতোমধ্যেই মার্কিন সরকার যুক্তরাষ্ট্রে চীনা শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।"

দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি ছাড়া, অন্যান্য আলোচনায়ও আসে শতভাগ সফলতা। উচ্চপ্রযুক্তির পণ্যের রপ্তানি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, এ ব্যাপারে ওবামা প্রশাসন চীনকে ন্যায্য ট্রিটমেন্ট দেবে এবং চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অসামরিক উচ্চপ্রযুক্তির পণ্যের রপ্তানিকে উত্সাহ যোগাবে।

বিশ্বের প্রধান জ্বালানি ভোক্তা ও কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। এবার সংলাপ চলাকালে চীন-যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সম্পর্কিত একটি সম্মেলনের আয়োজন করে। দু'পক্ষ বায়ুদূষণ প্রতিরোধ ও প্রতিকার, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এ আলোচনার উচ্চ মূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন-

"পরিচ্ছন্ন জ্বালানিসম্পর্কিত বেশ কয়েকটি প্রকল্পে আমরা পরস্পরকে সাহায্য করবো এবং আমাদের উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তন ও বনসম্পর্কিত একটি নতুন প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি, এর মাধ্যমে আমরা একটি স্পষ্ট বার্তা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি যে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুটি বৃহত্তম গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ হিসেবে যৌথভাবে 'নিম্ন কার্বন অর্থনীতি' উন্নয়ন ও গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।"

সাম্প্রতিক সময়ে নানান কারণে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে টানাপড়েন চলছিল। সংলাপের মাধ্যমে সে টানাপড়েন কতোটা দূর হবে, সে নিয়েও অনেকে সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, ইন্টারনেট নিরাপত্তা, চীন-মার্কিন নতুন ধরনের সামরিক সম্পর্ক, পূর্ব চীন সাগর ও দক্ষিণ চীন সাগরসহ নানা স্পর্শকারত বিষয় নিয়েও দু'পক্ষ গঠনমূলক আলোচনা করতে সক্ষম হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলার ইয়াং চিয়ে ছি বলেন- "সংলাপে দু'পক্ষ একমত হয়েছে যে: দু'দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতা বাড়ানো হবে; নতুন সামরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা হবে; সামুদ্রিক অনুসন্ধান ও উদ্ধার, জলদস্যু দমন ও মানবিক ত্রাণকার্যে দক্ষতা অর্জনের জন্য সামরিক মহড়া আয়োজন করা হবে; পরস্পরের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অভিযান সম্পর্কে পরস্পরকে অবহিত করার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে, ইত্যাদি। সংলাপে পূর্ব চীন সাগর ও দক্ষিণ চীন সাগর সমস্যায় চীনের অবস্থান আবার ব্যাখ্যা করেছি আমরা এবং আশা করি যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকবে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে যাবে।"

সংলাপে অংশগ্রহণকারী মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেন, চীনের চলমান নতুন দফার সংস্কার কার্যক্রম দু'দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যাকব লিউ বলেন- "চীন সরকার আমাদের জানিয়েছে যে, সংস্কারে বাজার আরও প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করবে এবং একে যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানায়। এবার সংলাপে যে মতৈক্য অর্জিত হয়েছে তা শুধু চীনের সংস্কারের জন্য উপকারী তা নয়, এতে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। দেয় প্রতিশ্রুতি অনুসারে, চীন সরকার বাজারের ওপর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কমাবে এবং রেনমিনপির বাজারায়নের শর্ত পূরণ করবে। এসব সিদ্ধান্ত ও প্রতিশ্রুতি চীন-মার্কিন সম্পর্ককে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।"


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040