Web bengali.cri.cn   
একদিনে সাংহাই ভ্রমণ
  2014-05-14 19:57:02  cri

হুয়াং ফু নদী

এরপর আমরা যেতে পারি হুয়াং ফু নদী দেখতে। সাংহাই শহরের বুকের মাঝদিয়ে প্র্রবাহমান হুয়াংফু নদী যে শুধু সাংহাই শহরের মাতৃ নদী তাই নয়। এই নদী শহরকে পূর্ব এবং পশ্চিমে বিভক্ত করেছে। এই হুয়াং ফু নদীর পূর্বতীরে যে বিশাল বাঁধ এলাকা তাকে বলা হয় সাংহাইয়ের অন্যতম প্রতীক। কারণ উনবিংশ শতাব্দীর ৩০ এর দশকে এই বাঁধ এলাকা কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে ইউরোপিয়ান ঘরানার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিশাল বিশাল ভবনগুলো। রাতের বেলায় এ এলাকায় যখন সোনালী বাতিগুলো জ্বলে উঠে তখন নদীতীরে এই বাঁধ ঘিরে ঘুরে বেড়ানো পর্যটকদের মাঝে এক সুখী ও আনন্দময় আবহ তৈরি হয়। রাতের আলো ঝলমলে হুয়াংপু নদীর দুই তীরের দৃশ্য না দেখলে আপনার সাংহাই ভ্রমণ অপূর্ণ রয়ে যাবে। বাঁধে দাড়িয়ে নদীর ওপারে ওরিয়েন্টাল পার্ল টিভি টাওয়ারের রঙ বদলের দৃশ্য দেখতে দেখতে আপনি হারিয়ে যেতে পারেন অন্য এক জগতে।

ওরিয়েন্টাল পার্ল টিভি টাওয়ার

আর বন্ধুরা, আপনারা "ওরিয়েন্টাল পার্ল টিভি টাওয়ার" এ আরোহণ করতে চাইলে "হুয়াং ফু" নদীর 'বাঁধ' থেকে জাহাজে করে চলে যেতে পারেন নদীর ওপারে। এই জাহাজ ভ্রমণও কিন্তু খুবই আনন্দদায়ক। সাংহাই এর "হুয়াং ফু" নদীর তীরে অবস্থিত এই "ওরিয়েন্টাল পার্ল টিভি টাওয়ার" হচ্ছে, ৪৬৭.৯ মিটার উঁচু, এটি এশিয়ার চতুর্থ উঁচু টাওয়ার এবং পৃথিবীর উচ্চতম টিভি টাওয়ারগুলোর মাঝে এর অবস্থান ষষ্ঠ। এই টাওয়ার সাংহাই শহরের অনেক পরিবর্তন ও আধুনিকায়নের সাক্ষী। এই টাওয়ারের উপর থেকে দূরে তাকালে সাংহাই শহরের পুদোং এলাকার সব আধুনিক ও পাশ্চাত্য ঘরানার সব স্থাপনা দেখা যায় আর নীচে তাকালে আপনারা দেখতে পাবেন হুয়াং ফু নদীর পুরো বাঁধ এলাকার দৃশ্য, যা খুবই সুন্দর। দিনের বেলা এই দৃশ্য একরকম আর রাতে একদমই অন্যরকম। রাতের বেলা হুয়াং ফু নদীর দু' তীরের আলোগুলো যখন জ্বলে উঠে সে দৃশ্য এতো সুন্দর যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এই ওরিয়েন্টাল পার্ল টিভি টাওয়ারে আছে একটি ঘূর্ণায়মান রেস্তোরাঁ যা পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ঘূর্ণায়মান রেস্তোরাঁ। তো বন্ধুরা বেড়াতে বেড়াতে ক্লান্ত হয়ে গেলে এই পার্ল টাওয়ারের ঘূর্ণায়মান রেস্তরাঁয় বসে হুয়াং ফু নদীর চমত্কার রাতের দৃশ্য উপভোগ করতে করতে সেরে ফেলতে পারেন রাতের খাবারের পর্বটি। তবে এর জন্য একটু বেশিই পয়সা গুনতে হবে।

সাংহাই এর ভাষা, সাংহাইবাসীদের ব্যক্তিত্ব পেইচিংবাসীদের চেয়ে আলাদা। খাবারের স্বাদ ও ভিন্ন।

আচ্ছা, খাবারের প্রসঙ্গ যখন আসলো তো আমাদের বন্ধুদের একটু জানিয়ে দেবে নাকি সাংহাই বেড়াতে আসলে আমরা কোথায় কোথায় খেতে পারি।

শহরের প্রতিটি কোনেই আছে নানা ধরণের, নানা দেশী রেস্তোরাঁ। তবে স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে চলে যেতে পারেন পুরনো শহরের মন্দির এলাকায়। এখানকার নানা ধরণের মুখরোচক খাবারে আপনার অবশ্যই তৃপ্তি হবে।

এছাড়া, সাংহাইতে কিন্তু কিছু বিশেষ ধরণের রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে আছে।

যেমন, মিস্টার বিন থিমের কফি শপ।

টয়লেট থিমের রেস্তোরাঁ

স্কুল থিমের ক্যাফে যার নাম হচ্ছে "হোপ প্রাইমারি স্কুল"

শার্লক হোমস থিমের রেস্তোরাঁ

এরোপ্লেন আবহের রেস্তোরাঁ , যার নাম হচ্ছে A390 ।

আর সাংহাই শহরে যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই সুবিধাজনক। শহরের প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে আছে মেট্রো ষ্টেশন, তাই কোন রকম ট্রাফিক জ্যাম ছাড়াই, খুব সল্প ভাড়ায় আপনারা ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এছাড়া ও আছে বিশেষ ধরণের টুরিস্ট বাস যা শহরের প্রধান প্রধান দর্শনীয় এলাকাগুলোতে বিশেষ সার্ভিস দেয়।

আচ্ছা, যাতায়াত প্রসঙ্গ যখন উঠলো, এই ফাঁকে আমাদের বন্ধুদের জানিয়ে দিচ্ছে এক বিশেষ ধরণের ট্রেনের কথা। সাংহাই পুদোং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শহরের কেন্দ্রে যাওয়ার একধরনের বিশেষ অত্যন্ত দ্রুতগতির ট্রেন আছে। যাকে বলা হয় "ম্যাগ্লেভ ট্রেন" । এটি বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত বিশ্বের প্রথম ম্যাগ্লেভ ট্রেন। আর বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে মাত্র তিনটি ম্যাগ্লেভ ট্রেন লাইন পরিচালিত হচ্ছে। এবং বন্ধুরা এর গতি হচ্ছে ঘণ্টায় ৪৩১ কিলোমিটার।

একবার ভেবে দেখুনতো বন্ধুরা বাংলাদেশে এরকম একটি ট্রেন থাকলে মাত্র ২ ঘণ্টায় টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া চলে যাওয়া যেত!!!তাই সুযোগ হলে অবশ্যই এই ট্রেনে ভ্রমণের অভিজ্ঞটা নিতে ভুলবেন না যেন।

আচ্ছা এতক্ষন তো আমরা একদিনে সাংহাই ভ্রমণের কথা বললাম। আমাদের শ্রোতা বন্ধুদের হাতে যদি বেশি সময় থাকে তাহলে উনারা আর কোথায় কোথায় বেড়াতে যেতে পারেন বলতো?

বন্ধুরা আপনাদের হাতে যদি একদিনের বেশি সময় থাকে তাহলে ঘুরে আসতে পারেন 'ইউ ইউয়ান বাগান' থেকে। মিং ও ছিং রাজবংশের স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত এই বাগান বাড়িটি হচ্ছে সাংহাই এর প্রাচীন বাগানগুলোর মধ্যে বৃহত্তম। ১৫৫৯ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত এই বাগানবাড়িটি ছিল রাজপরিবারের ব্যক্তিগত বিশ্রাম ও বিনোদন কেন্দ্র। এই বাগানটি ছয়টি অংশে বিভক্ত এবং প্রতিটি অংশের রয়েছে বিশেষ ধরণের বৈশিষ্ট্য। বর্তমানে এই বাগান বাড়িটি সাংহাই ভ্রমণে আসা দেশিবিদেশি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এই উদ্যানের পাশেই রয়েছে সাংহাই এর বিখ্যাত অনেক বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁ।

এছাড়া আমরা যেতে পারি সাংহাই শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দূরে শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত "চু চিয়া চিয়াও"প্রাচীন শহরে। পানির উপর নির্মিত এই শহরকে বলা হয় "সাংহাই এর ভেনিস"। ৪৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই প্রাচীন শহরটির ইতিহাস প্রায় ১৭০০ বছরের পুরনো। এটি সাংহাই এর সংরক্ষিত চারটি প্রাচীন শহরের মাঝে অন্যতম।

তাই বন্ধুরা সুযোগ হলে ঘুরে ঘুরে আসতে পারেন "সাংহাই এর ভেনিস" থেকে।


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040