Web bengali.cri.cn   
চলুন বেড়িয়ে আসি চীনের মহাপ্রাচীর
  2014-04-02 16:53:20  cri

পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মু থিয়ান ইউ গ্রেট ওয়াল। বেইজিং শহর থেকে ৭৩ কিলোমিটার দূরে হুয়াইরোউ জেলায় এর অবস্থান। এর বিশেষত্ব হচ্ছে, এর ৯০ ভাগ অংশই পাহাড় এবং বনভূমি ঘেরা, যা এর সৌন্দর্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। গ্রেট ওয়ালের এ অংশের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ছিন ডাইনেস্টিতে (৫৫০-৫৭৭)। এর পর কয়েক দফা পুনঃনির্মাণের পর ১৯৫৮ সালে এটি বর্তমান চেহারা পায়। আর সংস্কারের পর ট্যুরিস্টদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ১৯৮৮ সালে। এর রয়েছে ২২টি ওয়াচ টাওয়ার, যেগুলো প্রতি এক কিলোমিটার পরপর অবস্থিত। এ ছাড়াও রয়েছে তিনটি পরস্পর সংযুক্ত ওয়াচ টাওয়ার। তবে বন্ধুদের জানিয়ে রাখছি, প্রাণ জুড়ানো প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্যে ভরপুর মহাপ্রাচীররের এই এলাকাটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনাকে বাইতে হবে অনেক সিঁড়ি। কিন্তু কষ্ট করে মহা প্রাচীরে আরোহণ করার পর যে বিস্ময়কর অনাবিল সৌন্দর্য আপনি দেখতে পাবেন তার কোন তুলনা হয় না। এর নিরিবিলি শান্ত মনোরম পরিবেশ এবং অনন্য নির্মাণশৈলীতে মুগ্ধ হয়েছেন আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন,বর্তমান ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গ। এই মু থিয়ান ইউ গ্রেট ওয়ালে পর্যটকদের ভিড় পাতালিং গ্রেট ওয়ালের চেয়ে কম।

প্রাচীন নির্মাণ শৈলী এখনও সংরক্ষিত আছে মহা প্রাচীরের যে অংশটিতে তা হচ্ছে সি মা থায় গ্রেট ওয়াল। এর অবস্থান পেইচিং শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে মি ইয়ুন কাউন্টিতে। এর আছে ৩৫টি বাতিঘর টাওয়ার যা নির্মিত হয়েছিল মিং সাম্রাজ্যের একজন বিখ্যাত সেনানায়ক Qi Jiguang এর তত্ত্বাবধানে এবং এই অংশটি ম্যান্ডারিন ডাক নামক হ্রদ দ্বারা পূর্ব এবং পশ্চিম অংশে বিভক্ত। ই হ্রদটি দুটো ঝর্নার সাথে সংযুক্ত। এই ঝর্ণা দুটোর একটি উষ্ণ এবং অন্যটি শীতল। এ কারণে এই হ্রদটিতে প্রচণ্ড শীতেও বরফ জমাট বাঁধতে পারে না। প্রাচীরের পূর্বাংশে রয়েছে ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার বা নজরঘাঁটি, যা তৈরি করা হয়েছে পাহাড়ের খাড়া অঞ্চলে। দেখে মনে হয় যেন একটি ড্রাগন লেক থেকে লাফিয়ে বেরুচ্ছে। এবং পশ্চিম দিকে এটি যুক্ত হয়েছে চিন শান লিং গ্রেট ওয়ালের সাথে। এটিই মহা প্রাচীরের একমাত্র অংশ যা এখনো মিং সাম্রাজ্যের আদি বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে। কিন্তু আমাদের শ্রোতাবন্ধুদের জানিয়ে রাখছি,সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কারনে সি মা থায় গ্রেট ওয়ালে ২০১০ সালের জুন মাস থেকে পর্যটক পরিদর্শন বন্ধ আছে।

চীনে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে চীনের মহা প্রাচীর। প্রতি বছর দেশিবিদেশি পর্যটক মিলে গড়ে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ  পর্যটক গ্রেট ওয়াল ভ্রমণ করতে পারেন। উল্লেখ্য, বর্তমান চীনে পর্যটকদের মধ্যে একটি বিশাল অংশ খোদ চীনা নাগরিক। অর্থনীতির সাথে সাথে তাদের মূল্যবোধও পাল্টে যাচ্ছে, উন্নত জীবনযাত্রার সাথে সাথে ভ্রমণের প্রতি চীনাদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার পর্যটক গ্রেট ওয়াল পরিদর্শন করে থাকেন। আগে প্রতিদিন গড়ে ৭০হাজার পর্যটক মহা প্রাচীর পরিদর্শন করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে এর যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে, পর্যটকদের সংখ্যা সীমিত করা হয়। ১৯৮৭ সনে UNESCO গ্রেটওয়ালকে World HeritageSite ঘোষণা করার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। পর্যটকদের কাছ থেকে প্রবেশ ফি এবং সুভ্যনির বিক্রিবাবদ চীন সরকার প্রতি বছর ২০০০ কোটি ইউয়ান আয় করে থাকে।

এবারে আমাদের ভ্রমণপিপাসু বন্ধুদের জানিয়ে দিচ্ছি গ্রেট ওয়াল ভ্রমণের কিছু মুল্যবান তথ্য।

• প্রবেশ মুল্যঃ ২৫ থেকে ৪৫ ইউয়ান।

• পরিদর্শনের সময়ঃ ঋতুভেদে সকাল ৬.৩০ থেকে বিকেল ৬.০০ টা পর্যন্ত।

• বেড়াতে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময়ঃ মার্চের মাঝামঝি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত।

• কেবলকারেচড়ে মহাপ্রাচীরে ওঠার মুল্য ৩০-৮০ ইউয়ান।

• টুরিস্ট বাসগুলোতে ভ্রমণের প্যাকেজ মুল্যঃ ১২০ থেকে ৩০০ ইউয়ান।

• ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করলে তার মুল্য সাধারণত ১০০০ ইউয়ানের বেশি হয়ে থাকে!

আমাদের পর্যটকবন্ধুদের জন্য একটি সুখবর হচ্ছে, চীন সরকারের নতুন ভ্রমণ নীতিমালা অনুযায়ী আগের মতো কেনাকাটাভিত্তিক ভ্রমণ প্যাকেজের বিলুপ্তি ঘটেছে। তাই পর্যটকদের আর আগের মতো বাধ্য হয়ে শপিং মলগুলোতে সময় ব্যয় করতে হবেনা। পুরো সুময়টা জুড়ে ভ্রমণের আনন্দ উপলব্ধি করতে পারবেন।

আরো কিছু টিপস:

‌১. শীতকালে চীনের মহাপ্রাচীর এ বেড়াতে আসলে অবশ্যই প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার উপযোগী শীতের পোশাক নিয়ে আসতে হবে। কারণ, শহর থেকে দূরে হওয়ায় এবং সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় এখানে শহরের চেয়ে বেশি ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। শীতকালে মহাপ্রাচীর এলাকায় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায়। তাই বেড়াতে যাওয়ার আগে অবশ্যই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে।

২. অবশ্যই আরামদায়ক জুতো পড়তে হবে। কেডস অথবা নরম কাপড়ের জুতো হলে সবচেয়ে ভালো হয়।

৩. মধ্যবয়সী ও প্রবীণ পর্যটকদের খুব বেশি উপরে না-ওঠা ভালো। কারণ,ওঠার সময় খুব বেশি কষ্ট না-হলেও,নামাটা অনেক সময় বিপদজনক হতে পারে।

৪. সঙ্গে কিছু হালকা খাবার ও পানীয় নিয়ে আসা ভালো। নইলে দ্বিগুণ দাম দিয়ে সেখানে খাবার কিনতে হবে। তবে পানি বা পানীয় একটু কম খাওয়াই ভালো,কারণ যদিও কিছুদূর পর পর টয়লেটের সুব্যবস্থা আছে,কিন্তু পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় প্রায়শই দীর্ঘ লাইন ধরতে হয়।

৫. গ্রেট ওয়ালের বাইরে সুভ্যনির শপগুলোতে কেনাকাটা করার সময় ভালোভাবে দরদাম করে নিতে হবে; নইলে ঠকে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।

৬. যাদের জন্য উপরে ওঠা কষ্টকর, তারা কেবলকারে উপরে উঠতে পারেন এবং পায়ে হেঁটে ধীরে ধীরে নামতে পারেন।

৭. একটু সকাল সকাল গিয়ে দুপুরে রোদ খুব বেশি চড়া হওয়ার আগেই ফিরে আসা ভালো। তাহলে বাকি দিনটি বিশ্রাম নিয়ে পরবর্তী দিনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া যায়। কারণ, গ্রেট ওয়ালে ভ্রমণ আমাদের মতো সমতল অঞ্চলে বসবাসকারী পর্যটকদের জন্য বেশ পরিশ্রমসাধ্য ও ক্লান্তিকর।

প্রিয় শ্রোতা, চীনের একটি বিখ্যাত কথা প্রচলিত আছে,এর মানে হচ্ছে: যিনি কখনো চীনের মহাপ্রাচীরে আরোহণ করেননি, তিনি একজন সত্যিকারের পুরুষ নন! এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, চীনের মানুষের হৃদয়ে এই মহা প্রাচীরের অবস্থান কতো গভীর,কতো মহিমান্বিত! কালের বিবর্তনে বিশ্ব স্থাপত্যশৈলীর এই অনন্য নিদর্শন ও চীনের সভ্যতা এবং ইতিহাসের উত্থান-পতনের সাক্ষী এ মহাপ্রাচীরের অনেক অংশ আজ হুমকির সম্মুখীন। চীন সরকার ইতোমধ্যে এ প্রাচীর রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। আশা করছি একজন পর্যটক হিসেবে আমরাও আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবো। এ প্রত্যাশা জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি; সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। সবাইকে শুভেচ্ছা, যাই চিয়ান! (জান্নাত/আলিম)


1 2
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040