আসলে তুং ইনের মতো পেশাদার টীকাকার ছাড়াও জাতীয় যাদুঘরে অনেক স্বেচ্ছাসেবক টীকাকার আছে। এখন আমরা তাদের মধ্যে একজনের সঙ্গে পরিচিত হব।
স্বেচ্ছাসেবক টীকাকার চীনা জাতীয় যাদুঘরের একটি নাম কার্ড। তারা আত্মবিশ্বাসী এবং প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দর্শকদের কাছে প্রদর্শিত বস্তুর পরিচয় তুলে ধরেন। ছাং ভেং চীনা জাতীয় যাদুঘরের ১৪২জন স্বেচ্ছাসেবক টীকাকারের অন্যতম। ২০০৩ সালে বসন্তকালের একদিনে তিনি প্রথমবারের মতো জাতীয় যাদুঘরে আসেন এবং পরে তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবক টীকাকার হন। তখন থেকে তিনি এখানে ১১ বছরের মতো কাজ করেন। তিনি বলেন, '২০০৩ সালে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে পড়ছিলাম। আমি স্বেচ্ছাসেবক টীকাকারের কাজ পছন্দ করি এবং ৪-৫ বছর পরে আমি আবিষ্কার করি যে, এ কাজ আমার জীবনের রীতিতে পরিণত হয়েছে। ছুটিতে জাতীয় যাদুঘরে কাজ না করলে আমার কাছে সবকিছু শুন্য মনে হয়। ৯-১০ বছর ধরে আমার কাজ দর্শকদের কাছে পুরাকীর্তি তুলে ধরা'।
২০০৩ সাল থেকে চীনা জাতীয় যাদুঘর সমাজে স্বেচ্ছাসেবক টীকাকার নিয়োগ করে এবং স্বেচ্ছাসেবক টীকাকার টীকাকার অভাবের সমস্যা নিবৃত্ত করে। তবে ছাং ভেংয়ের জন্য স্বেচ্ছাসেবক টীকাকার হিসেবে প্রথম বারের মতো তিনি দেখেন পেশাদার টীকাকারের সাথে তার ব্যবধান। প্রথম যে প্রদর্শনীতে ছাং ভেং টীকাকারের কাজ করেন তার নাম 'থাং রাজবংশের কবজ'এবং প্রদর্শনীতে দর্শকদের কাছে তা পরিচয় করার পর ছাং ভেংয়ের হাত ঘেমে উঠে। তিনি বলেন, "টীকাকার হিসেবে সঠিক জ্ঞান থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমি না জানি যে, থাং রাজবংশ শুরু হয় ৬১৮ খ্রিস্টাব্দে তাহলে আমি বলতে পারি ৭তম শতাব্দী। তবে যে তথ্য আমি জানাই তা অবশ্যই সঠিক হতে হবে।"
স্বেচ্ছাসেবক টীকাকার হওয়ার জন্য অনেক প্রশিক্ষণ নেয়ার পর পরীক্ষায় পাস করতে হবে। বর্তমানে সাধারণত ছাং ভেং প্রাচীন চীন,প্রাচীন চীনা ব্রোঞ্জ শিল্প ও অন্য কয়েকটি অস্থায়ী প্রদর্শনীর দায়িত্ব নেন। যদিও প্রথম সময়গুলোর মতো উত্তেজনা নেই তারপরও ছাং ভেং সব সময় মজা করে ও গভীরভাবে তা দর্শকের কাছে তুলে ধরার জন্য প্রচেষ্টা চালাছেন। ছাং ভেং বলেন, 'কিছু প্রদর্শনীর সময় দীর্ঘ নয়, প্রায় দুই মাস এবং এ দু'মাসে আমি শুধু কয়েক বার টীকাকার হিসেবে কাজ করি। তবে প্রদর্শনীর জন্য আমাকে অনেক প্রস্তুত করতে হয়। শুধু নিরন্তরভাবে লেখাপড়া করলেই এ কাজ ভালভাবে করতে পারি।'
গত ১১ বছরে ছাং ভেংয়ের চাকরি পরিবর্তন হয় তবে জাতীয় যাদুঘরের প্রতি তার ভালবাসার কখনো পরিবর্তন হয় নি। তিনি বলেন 'পুরাকীর্তি আমার বন্ধুর মতো এবং আমি সব সময় তাদের মিস্ করি। টীকাকারের কাজ না করলেও আমিও সব সময় পুরাকীর্তি দেখার জন্য যাদুঘরে আসি। অন্য দিকে দর্শকদের মনে জাতীয় যাদুঘর শুধু একটি দর্শনীয় স্থান তা নয়। কিছু মানুষ ৪ ও ৫ বারের মতো একটি প্রদর্শনী দেখেন এবং আমাদের সাথে ওই দর্শকদের সব সময় দেখা হয় এবং আমরা শুভেচ্ছা বিনিময় করি।'
ছাং ভেংয়ের মতে যাদুঘর মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়। দর্শক সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ছাং ভেং আরও ব্যস্ত হন। গত বছর তিনি যাদুঘরে ১০০ ঘন্টা কাটিয়েছেন। অবশ্য কাজের মাধ্যমে তিনি অনেক অভিভূত অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তিনি বলেন, 'এক দিন এক তরুণ আমার কাজ শুরুর আগে যাদুঘরে আসেন এবং আমার সঙ্গে দশ বারো মিনিটের মতো কথা বলেন। তিনি আমাকে জানান, যখন তিনি শিশু ছিলেন তখন তিনি অনেক বার যাদুঘরে আমার প্রদর্শনী পরিচয় করা শুনেছেন। আজ তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন এবং অন্য একটি শহরে কাজ করবেন। যাওয়ার আগে তিনি আমার কাছে থেকে বিদায় নিতে চান।'
ছাং ভেং বলেন, তিনি তার স্বপ্ন জাতীয় যাদুঘরে চাষ করেন। বন্ধুরা, আমি বিশ্বাস করি, ছাং ভেংয়ের মতো যারা জাতীয় যাদুঘর ভালবাসেন তাদের স্বপ্ন এখানে বাস্তবায়ন হবেই হবে।