0402china.m4a
|
রাজধানী পেইচিংয়ে থিয়ান আন মেন মহা চত্বরের পূর্ব দিকে অবস্থিত চীনা জাতীয় যাদুঘর। পুরো যাদুঘরের আয়তন ২ লক্ষ বর্গকিলোমিটার । আর এখানে যে ৪৮টি প্রদর্শনী ভবন রয়েছে তার আয়তন ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার।
এ মহা ভবনে দর্শকদের প্রবেশের জন্য রয়ছে প্রশস্ত সিঁড়ি । ভাবগম্ভীর, মহিমাময় ও বিশাল এ ভবন চীনা জাতীয় যাদুঘরের প্রতীক। চীনা জাতীয় যাদুঘরের প্রচার বিভাগের প্রধান হুয়াং চেন যাদুঘরের পরিচয় তুলে ধরে বলেন,"যাদুঘর একটি সাংস্কৃতিক ভবন। আমারা আশা করি, যে দর্শকরা এ যাদুঘরে আসে তারা চাইলে এ ভবনে থাকতে পারবে। তা ছাড়া, আমরা তাদের মনে শান্তি এনে দিতে চাই এবং তারা তখন শান্তি মনে প্রদর্শনী উপভোগ করতে পারবে। এ ধারণা নিয়ে আমরা পশ্চিম হল নির্মাণ করি'।
পূর্বে চীনা জাতীয় যাদুঘরের নাম ছিল জাতীয় ইতিহাস যাদুঘর যা ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। গত শতাব্দীর ৮০'র দশকে এটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যথাক্রমে চীনা জাতীয় যাদুঘর ও চীনা বিপ্লবী যাদুঘর নাম ধারণ করে। ২০০৩ সালে দুই যাদুঘর আবার একত্রিত হয়ে চীনা জাতীয় যাদুঘর হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং ২০০৭ সালে শুরু হয় ৪ বছর মেয়াদি এর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ।
নতুন করে সাজানো জাতীয় যাদুঘর ২০১১ সালে বিনামূল্যে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। নতুন যাদুঘরের আয়তন আগের চেয়ে তিন গুণ বৃদ্ধি পায় এবং বিশেষ করে আগে যেসব বিষয় প্রদর্শন করা হতো তার অনেক পরিবর্তন হয়।
যেমন আগে প্রদর্শনীর অধিকাংশ বিষয়ই ছিল চীনের বিপ্লব সম্পর্কিত, এখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ইতিহাস ও সংস্কৃতি এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রদর্শন করা হয়। হুয়াং চেন বলেন,প্রথমত যাদুঘরে রয়েছে প্রাচীন চীন এবং পুনরুত্থান পথ নামে পরিচিত দুটি নিয়মিত প্রদর্শনী এবং প্রদর্শনীতে মানবজাতির উত্পত্তি থেকে আধুনিক সমাজের উন্নয়নের প্রক্রিয়া প্রদর্শন করা হয়। অন্য দিকে জাদুঘরে রয়েছে সংগ্রহ বস্তু এবং বিভিন্ন বিভাগ অনুযায়ী আয়োজিত সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী, যেমন, ব্রোঞ্জসংস্কৃতি,মুদ্রাসংস্কৃতি, বুদ্ধমূর্তি সংস্কৃতি এবং প্রাচীন হস্তলিপিশিল্প ও চিত্র। তাছাড়া, প্রতি বছর আমরা অন্য যাদুঘর বা সাংস্কৃতিক সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে ৩০-৪০টি অস্থায়ী প্রদর্শনী আয়োজন করি।"
বর্তমানে চীনা জাতীয় যাদুঘরে সংগৃহীত বস্তুর সংখ্যা ১২ লাখ। এর মধ্যে যেমন রয়েছে নতুন প্রস্তরযুগের আঁকা মৃত্শিল্প ও চীনের বৃহত্তম ব্রোঞ্জ তেপায়া, তেমনি রয়েছে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পরিস্থিতি বর্ণনার বিশাল তৈলচিত্র। এ বিশাল প্রদর্শিত বস্তুর মাধ্যমে আমরা ৫ হাজার বছরের চীনা সংস্কৃতি এবং চীন দেশের পরিবর্তন জানতে পারি। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে চীনা জাতীয় যাদুঘর যথাক্রমে পাবলো পিকাসোর ধারাবাহিক চিত্র, লিওনার্দো দা ভিঞ্চির চিত্রসহ বিশ্বের শিল্পকর্ম চীনা দর্শকদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
যাদুঘরের বৈশিষ্টপূর্ণ এ প্রদর্শনী অনেক দর্শককে আকর্ষণ করে এবং এ দৃশ্য দেখে টীকাকার হিসেবে হাও সুয়াং চুন খুব খুশি হন। তিনি প্রতিদিন মন দিয়ে দর্শকদের কাছে প্রদর্শিত বস্তুর ইতিহাস ও অর্থ পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন,"প্রতিদিন যখন আমি এ বিশাল ও মহা প্রদর্শনী ভবনে আসি এবং দশর্কদের মুখে লাগা মৃদুহাসি দেখি, তখন আমিও খুব খুশি ও গর্বিত হই।"
পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ পার্সন টাইমস চীনা জাতীয় যাদুঘরে আসে এবং প্রতি বছর এ সংখ্যা ২০ লাখ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা পৌঁছেছে ৭৪ লাখ ৫০ হাজারে। আর তাই, বিশ্বব্যাপী দর্শকদের মনে রয়েছে চীনা জাতীয় যাদুঘরের চেহারা। মার্কিন নাগরিক মেকান বলেন,"এটা খুব সুন্দর একটি অট্টালিকা এবং যে সব যাদুঘরে আমি ছিলাম, তার মধ্যে এটা সবচেয়ে সুন্দর। এ যাদুঘর আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে বলে আমার খুব ভাল লাগছে।"
চীনা নাগরিক ব্রোঞ্জ সংস্কৃতি প্রদর্শনীকে অনেক পছন্দ করেন। তিনি বলেন,"আমি অনেক বার এখানে এসেছি এবং প্রতিবারই আমার নতুন অনুভব তৈরি হয়েছে। এ ব্রোঞ্জ প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমি জানতে পারি ৩ হাজার বছর আগে মানুষ কীভাবে জীবনযাপন করতেন এবং আমি অবাক হয়েছি তখকার মানুষ এত সুন্দর ব্রোঞ্জ তৈরি করতে পারতেন।"
অবসরপ্রাপ্ত মিঃ সির জন্য জাতীয় যাদুঘরে আসা একটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন,"আমরা মাঝে মাঝে এখানে আসি এবং এখানকার সব প্রদর্শনী দেখি। আমি চিত্র পছন্দ করি তাই প্রতিবার আমি নিশ্চয়ই চিত্র প্রদর্শনী দেখি।"