140326china.m4a
|
প্রিয় শ্রোতা,আপনার প্রিয় শখ কী? যদি চীনে আপনি কাউকে এ প্রশ্ন জিজ্ঞাস করেন তাহলে ৯০ শতাংশ মানুষের উত্তর হবে 'সারা বিশ্ব ভ্রমণ করা'। বিশেষ করে তরুণ তরুণীর মধ্যে 'বিশ্ব ভ্রমণ করা ' খুবই জনপ্রিয় একটি শব্দ। এ কারণে বিশ্বের প্রতি তাদের কৌতুহল বেশি এবং তারা জানতে চায় বিশ্ব দেখতে কেমন?
তবে 'বিশ্ব ভ্রমণের' স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারার লোকের সংখ্যা কিন্তু খুব বেশি নয়।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা একটি দম্পতির সঙ্গে পরিচিত হব। তাদের বয়স ৬০ বছরেরও বেশি। তবে তারা কিন্তু সারা বিশ্ব ভ্রমণে যাওয়া সেই অল্প কয়েক জন মানুষেরই একজন। এ পর্যন্ত এই দম্পতি লিউ চি মিং ও চাই সুং মেই গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল, ফিলিস্তিন, ইসরাইল, হাইতিসহ ইউরোপ, এশিয়া,আফ্রিকা ও আমেরিকার ৫১টি দেশ ও অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন।
প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় লিউ চি মিংয়ের শিক্ষক বলেছিলেন যে, ভালভাবে লেখাপড়া করলে সারা বিশ্ব ভ্রমণের কোনো চিন্তা নেই। তখন থেকেই বিশ্ব ভ্রমণ তার একটি স্বপ্নে পরিণত হয়। তার স্ত্রী চাই সুং মেইও ভূগোলকে পছন্দ করেন এবং সবসময় মানচিত্র দেখে গবেষণা করেন। গত শতাব্দীর ৯০'র দশকে আকস্মিক একটি সুযোগে তারা পিপিসি প্রচারিত '৮০ দিনে সারা বিশ্ব ভ্রমণ' নামে একটি তথ্যচিত্র দেখেন এবং প্রথম বারের মতো সারা বিশ্ব ভ্রমণে যাওয়া নিয়ে চিন্তা শুরু করেন।
চাকুরি থেকে অবসর নেওয়ার আগে প্রতি ছুটির সময়ে তারা দু'জন প্রায় সারা চীনে ঘুরে বেড়াতেন এবং এসময়ে তারা ভ্রমণ বিষয়ে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। তবে অবসরগ্রহণের পর তারা বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পান।
দু'জনেই পুলিশ ছিলেন বলে অন্য মানুষের চেয়ে সাহসী এবং এ কারণে তারা গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলকে প্রথম গন্তব্যস্থান হিসেবে বাছাই করেন। থাইল্যান্ড, মায়ানমার ও লাওস এতিনটি দেশের সীমান্তে অবস্থিত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলে আফিমসহ মাদকদ্রব্য উত্পাদিত হয়। আর একারণে মানুষের মনে এ ট্রায়াঙ্গল একটি রহস্যময় ও বিপজ্জনক জায়গা হিসেবে পরিচিত।
লিউ চি মিং ও চাই সুং মেই গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলে যেতে চান এবং এ জায়গা সম্পর্কে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেন।
সেখানে যাওয়ার আগে দু'জন অনেক চিন্তা করেন। তারা জানেন না যে, সেখানে কিভাবে তারা খাবার পাবেন বা কিভাবে তারা সেখানে বাস করবেন। এসব বিষয় নিয়ে চিন্তিত হলেও তারা কিন্তু সেখানে যাওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন।
তারা এক ধরণের অস্বস্তিকর মন নিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১০০ মিটার উঁচু গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল অঞ্চলের মায়ি স্যালং নামের একটি গ্রামে পৌঁছান। এ গ্রামটি গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল অঞ্চলের থাইল্যান্ডে অবস্থিত। ওখানে যে দৃশ্য তারা দেখেন তা পরিকল্পনার চেয়ে একেবারে ভিন্ন। মায়ি স্যালং শান্ত ও সুন্দর একটি গ্রাম। লিউ চি মিং বলেন,(রে)
"প্রাপ্তবয়স্ক বা শিশু যাদেরই আমরা দেখি তারা সবাই খুব হাসিখুশি এবং আনন্দিত। যখন আমরা মায়ি স্যালং গ্রামটিতে ছিলাম তখন থাইল্যান্ডের পানি বিচ্ছুরণ উত্সব চলছিল। মানুষ আমাদের গাড়ি দেখে আমাদের প্রতি পানি বিচ্ছুরণ করে শুভেচ্ছা জানান। পরে আমরা তাদের দলে যোগ দেই এবং একসাথে পানি বিচ্ছুরণ করি"।
মায়ি স্যালং গ্রামে কুওমিনটাং পার্টির সদস্যদের অনেক বংশধর বসবাস করেন এবং তারা চীনা ভাষা বলতে পারে। লিউ চি মিং ও তার স্ত্রী যে গেস্ট হাউসে থাকতেন তার মালিক একজন চীনা । তিনি এ গ্রামের পরিস্থিতি ও ইতিহাস লিউ চি মিং ও তার স্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন এবং উপভোগ করেন তার অভিজ্ঞতা ও মাতৃভূমির প্রতি ভালবাসা।
নিজ চোখে না দেখলে হয়তো লিউ চি মিং ও তার স্ত্রী বিশ্বাস করতে পারতেন না যে, এ জায়গাটি এত সুন্দর ও শান্ত।
লিউ চি মিং বলেন, তাদের জন্য ভ্রমণ কেবল দৃশ্য উপভোগ করা নয়, স্থানীয় মানুষের জীবনযাপন ও আচার ব্যবহার দর্শনও তাদের ভ্রমণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে তারা একটি ফরাসি পরিবারের সঙ্গে পরিচিত হন এবং এ পরিবার তাদের মনে গভীর ছাপ ফেলে। একদিন লিউ চি মিং ও তার স্ত্রী গাড়ি দিয়ে হ্যানয় থেকে সিগনে গেলেন। সকালে রেস্তোঁরায় নাস্তা খাওয়ার সময় তারা এক মেয়েকে দেখেন। লিউ চি মিংয়ের স্ত্রী এ মেয়েকে জিজ্ঞাস করেন, তিনি কার সঙ্গে এখানে এসেছেন এবং তিনি কি করেন। এ মেয়ে বলেন, তার বাবা মা চার জন শিশু নিয়ে এক বছরের জন্য বিশ্ব ভ্রমণে বের হয়েছেন। এসময় মেয়েটির কোলে তিন মাসের একটি শিশু ছিল এবং এ শিশুটি তার ছোট ভাই।
লিউ চি মিং ও তার স্ত্রী অবাক হন যে, এমন একটি পরিবার তাদের মতই বিশ্ব ভ্রমনে বের হয়েছেন। লিউ চি মিং ও তার স্ত্রীর পরিস্থিতি চেয়ে এ পরিবারটিকে ভ্রমনের সময় নিশ্চয় অনেক বেশি কষ্টের সম্মুখীণ হতে হয়।
লিউ চি মিং ও তার স্ত্রীর এ ফরাসি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর অভিভূত হয়ে পড়েন। চাই সুং মেই তার স্বামীকে বলেন, আমাদের দু'জনের কোন চিন্তা নেই, ওই পরিবারের চেয়ে আমাদের ভ্রমণ আরও সহজ। তাছাড়া, ভ্রমণে লিউ চি মিং ও চাই সুং মেইর অনেক অভিভূত অভিজ্ঞতা আছে। যেমন ৭০ বছর বয়সী এক দম্পতির শারীরিক অবস্থা ভাল নয় এবং হাতে বেশি টাকাও নেই, কিন্তু তারা ভ্রমণ পরিত্যাগ করেন নি। যুক্তরাষ্ট্রে তারা ৯৩ বছর বয়সী একজন প্রবীণের সঙ্গে পরিচিত হন। এই মানুষটিকে দেখার পর লিউ চি মিং ও চাই সুং মেইর বিশ্ব ভ্রমণের মন আরও দৃঢ় হয়।
কয়েক বছরের ভ্রমণে এ বিশ্ব সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারেন লিউ চি মিং ও চাই সুং মেই। বিভিন্ন দেশের জনগণের অনুরাগ ও বন্ধুত্ব তাদের মনে গভীর ছাপ ফেলে। লিউ চি মিং বলেন, পথে যেসব মানুষ তারা দেখেছেন তাদের মুখে সবসময় মৃদু হাসি ছিল এবং যখনই তারা সাহায্য চেয়েছেন তখনই অপরিচিতরা তাদেরকে সাহায্য করেছেন।
লিউ চি মিং বলেন, প্রথমে এ মৃদু হাসি দেখে তাদের কাছে তা অপরিচিত লাগে তবে ধীরে ধীরে তারা উষ্ণ ও আন্তরিকতা অনুভব করেন। তারা আমাদের প্রতি বন্ধুত্ব জানায়। তাই আমরাও তাদের প্রতি মৃদু হাসি বিনিময় করি। এটা আমাদের ভ্রমণের বিশাল একটি সাফল্য।
বন্ধুরা, আপনারা বলতে পারেন, ভ্রমণের অর্থ কি? হয়তো সারা জীবনে এ বিশ্ব ভ্রমণ করা আমাদের অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। তারপরও বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে দেখা হওয়ার অনুভূতি ও অভিজ্ঞতাই কিন্তু আমাদের সম্পদ। লিউ চি মিং ও চাই সুং মেইর কাহিনীর মতো ভ্রমণ বিষয়ে জানার জন্য আপনি যদি আরো বেশি পড়ালেখা করেন, তাহলে দেখবেন যে, এ বিশ্ব আপনার কল্পনার চেয়ে আরও অনেক সুন্দর।
প্রিয় শ্রোতা, এতক্ষণ আপনারা লিউ চি মিং ও চাই সুং মেই দম্পতির বিশ্ব ভ্রমণ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন শুনলেন। আশা করি এ প্রতিবেদনটি আপনাদের মধ্যে ভ্রমণ পিপাসা জাগিয়ে তুলবে,তাই না?