0326lvyou
|
আলিম. স্পেন ইউরোপের দেশ। যারা ফুটবল পছন্দ করেন এবং দেশ-বিদেশের ফুটবলের খবর রাখেন, তাদের কাছে স্পেন পরিচিত বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদের দেশ হিসেবে। অবশ্য পর্যটকদের কাছে স্পেন একটি আকর্ষণীয় জায়গা এর অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য। দেশটিতে দেখার মতো ঐতিহ্যবাহী জিনিসেরও অভাব নেই। স্পেনের সংস্কৃতিও সমৃদ্ধশালী। মাদ্রিদ জাদুঘর, বার্সেলোনার গাওদি (gaudi) স্থাপত্য, কোর্ডোভা (cordova) মসজিদসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পর্যটকদের আকর্ষণ করে থাকে। অনেক পর্যটক এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের ছুটি নিয়ে গোটা স্পেন ঘুরে দেখতে চান। কিন্তু বাস্তবে সময় আরো বেশি লাগবে। বিলবাও (bilbao) বাস্ক (basque) এলাকার গুরুত্বপূর্ণ শহর; এখানকার লোকসংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। পর্যটকদের জন্য এ শহরের দুটি বিষয় খুবই আকর্ষণীয়: এক. চমত্কার গুগেনহাইম (Guggenheim) জাদুঘর; দুই. বিলবাও ফুটবল ক্লাব। এ ক্লাব ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্পেনের সবচে পুরনো ফুলটব ক্লাবগুলোর মধ্যে এর স্থান দ্বিতীয়। এ ক্লাব স্পেনের 'লা লিগায়' খেলে আসছে সেই ১৯২৮ সাল থেকে। আরেকটি আশ্চর্য্য ব্যাপার হল, বিলবাও ফুটবল ক্লাবে শুধু বাস্ক এলাকার খেলোয়াড়ই খেলে থাকেন। ক্লাবটি যেন বাক্স জাতীয়বাদের প্রতীক।
সুবর্ণা. গুগেনহেইম জাদুঘর বিলবাওয়ের আরেকটি আশ্চর্য্য নিদর্শন। ১৩০০ সালে বিলবাও শহরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। স্পেনের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর হিসেবে বিলবাও শহর অতি সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু সপ্তদশ শতাব্দী থেকে শহরটি তার সমৃদ্ধি হারাতে থাকে এবং ১৯৮৩ সালে বন্যা ও দুর্যোগের কারণে এ শহরের পুরনো নগর গুরুতরভাবে বিধ্বংস্ত হয়। গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকে এটি ইউরোপের একটি পুরনো ও দুর্বল শহরে পরিণত হয়। স্থানীয় অঞ্চলের পৌর সরকার শহর উন্নয়নের জন্য পর্যটন শিল্প উন্নয়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। ইউরোপের শিল্পরসিকদের আকর্ষণ করার জন্য ১৯৯৭ সালে গুগেনহেইম জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। এ জাদুঘরের স্থাপত্য ডিজাইন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এর আকার, কাঠামো ও এটি তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল অসাধারণ বলে বিশ্বের সবচে সুন্দর জাদুঘর হিসেবে আখ্যায়িত। এর ডিজাইনার হলেন মার্কিন স্থাপত্য শিল্পী ফ্রান্ক গেরি (frank gehry)। প্রতি বছর দশ লক্ষাধিক লোক জাদুঘর পরিদর্শন করেন। বাস্ক প্রদেশের পর্যটন আয় আগের চেয়ে ৫ গুণ বেড়েছে। এই জাদুঘর শহরের অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
আলিম. সুন্দর জাদুঘর ও ঐতিহ্যিক ফুটবল ক্লাব ছাড়া, স্পেনের স্থানীয় অঞ্চলের লোকরা বাস্ক এলাকার সুস্বাদু খাবার বেশ পছন্দ করে। চীনারা যেমন সিছুয়ান প্রদেশের খাবার খেতে পছন্দ করে, তেমনি স্প্যানিশরা বাস্কের খাবার অতি পছন্দ করে। বাস্কের বিখ্যাত হাল্কা ধরনের খাবার হল টাপাস (tapas)। তবে বাস্ক এলাকায় এ খাবারের আরেকটি নাম আছে, তা হল 'পিনটোস' (pintxos)। কাঠির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খাবার গেথে তৈরি করা এক ধরনের হাল্কা খাবার এটি। স্থানীয় অঞ্চলের লোকরা বিয়ার বা মদের সাথে নানা স্বাদের 'পিনটোস' খায়।
সুবর্ণা. বিলবাওয়ের সুস্বাদু খাবার অনেকটা শিল্পকলার মতো। স্থানীয় অঞ্চলের অনেক বিখ্যাত রেস্তোরাঁয় বা পাবে ঐতিহ্যিক আর নতুন স্টাইলের পিনটক্স পাওয়া যায়। বাস্ক এলাকার মিশেলিন (michelin) রেস্তোরাঁ ও বাবুর্চির সংখ্যা অনেক বেশি। যদি আপনারা বিলবাওয়ে বেড়াতে যান, তাহলে কয়েকটি বৈশিষ্ট্যময় রেস্তোরাঁয় যেতে ভুলবেন না। 'গ্রান হোটেল ডোমিন বিলবাও' (gran hotel domine bilbao) একটি পাঁচ তারা হোটেল। এটি গুগেনহেইম জাদুঘরের পিছনে অবস্থিত। zortziko রেস্তোরাঁ এক তারার রেস্তোরাঁ। এর বাবুর্চি Daniel Garcia বাস্ক এলাকার লোক। তিনি উত্তর স্পেনের টাটকা সামুদ্রিক খাবার ও বাস্ক এলাকার সবজি দিয়ে সুস্বাদু খাবার রান্না করতে পারেন।
আলিম. বাস্কের টাপাস ও মিশেলিন বাবুর্চি শুধু স্পেনের একটা দিক। উত্তর স্পেন থেকে দক্ষিণ স্পেনে গেলে এ দেশের সবচে বিখ্যাত মদ উত্পাদনের এলাকা 'লা রিওহা'-য় (la rioja) পৌঁছানো যায়। এটি স্পেনের সবচে ছোট এলাকাগুলোর অন্যতম। তবে, এখানেই উত্পাদিত হয় বিশ্বের সবচে ভালো মদ। যারা লাল মদ বা রেড ওয়াইন পছন্দ করেন, তারা স্পেনে এলে এখানকার বিভিন্ন মদের কারখানা পরিদর্শন করতে ভুলবেন না। স্পেনের মদের দাম ফ্রান্সের চেয়ে অনেক সস্তা।
সুবর্ণা. মার্কিন স্থাপত্যশিল্পী ফ্রান্স গেরি গুগেনহেইম জাদুঘর ছাড়া লা রিওজায় একটি বৈশিষ্ট্যময় হোটেলও ডিজাইন করেছেন। এ হোটেলটি গুগেনহেইম জাদুঘর থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হোটেলটি মধ্য শতাব্দীর একটি আঙ্গুর বাগানে অবস্থিত। চমত্কার গোলাকার ডিজাইন, সোনালী রঙের ছাদ ও দেয়াল। বিশ্বের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি এ হোটেলে অবস্থান করেছেন। তাদের মধ্যে আছেন চলচ্চিত্র তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও ব্রাড পিট।
আলিম. গরম বেলুনে চড়ে আকাশে ভেসে বেড়ানো লা রিওজা এলাকার একটি মজার অভিজ্ঞতা। 'আরকোইরিস' (arcoiris) স্থানীয় অঞ্চলের একটি অতি বিখ্যাত গরম বেলুন কোম্পানি। বেলুনের চালক একজন অভিজ্ঞ লোক। তিনি চমত্কারভাবে বেলুন উড়িয়ে নিতে সক্ষম। বেলুনে বসে আকাশে উড়ে আঙ্গুর বাগান ও সুন্দর স্থাপত্যের দৃশ্য উপভোগ করা একটি দারুণ মজার ব্যাপার। পর্যটকরা যেন পাখির মতো ভোরবেলার কুয়াশা ভেদ করে উড়ে বেড়ান এবং পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করেন।
সুবর্ণা. বেলুনে বসে লা রিওজা এলাকার দৃশ্য উপভোগ করার পর এখন স্থানীয় অঞ্চলের একটি বিখ্যাত মদ সেলার 'মুগা' (muga) সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরি। মুগা মদ সেলার লা রিওজা এলাকার ইতিহাসিক সেলার, যা নির্মিত হয়েছে ১৯৩২ সালে। সাধারণত মদ সেলার পরিদর্শন করার সময় আপনি কয়েকটি ধাপে কিছু বিষয় লক্ষ্য করবেন; যেমন, আঙ্গুর বাগানে আঙ্গুর বাছাই প্রক্রিয়া, আঙ্গুরের রস সংগ্রহ করা, বড় বালতিতে আঙ্গুরের রস মজুত করা, কারাখানায় প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি। তবে মুগা সেলার পরিদর্শনের বিষয়টা একটু ভিন্ন রকম। এখানে ঐতিহ্যিক পদ্ধতিতে ওক কাঠের বালতি তৈরী করা হয়। আপনারা সেলার পরিদর্শন করার সময় কর্মীদের হাত দিয়ে ওক কাঠের বালতি তৈরীর প্রক্রিয়াও স্পষ্টভাবে দেখতে পারেন।