0319lvyou
|
সুস্বাদু খাবার সবার জন্যই একটি আকর্ষণীয় ব্যাপার। বিশেষ করে ভ্রমণের সময় স্থানীয় অঞ্চলের সুস্বাদু খাবারের স্বাদ নেওয়া একটি দারুণ মজার ব্যাপার। স্থানীয় খাবারের ধরন-ধারণ দেখে সেখানকার লোকজনের সংস্কৃতির একটা দিক সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদের জন্য কয়েকটি দেশের সুস্বাদু খাবার এবং এ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রীতিনীতি তুলে ধরবো। বলতে গেলে, আজকের অনুষ্ঠানটি হবে একটু ভিন্নধর্মী।
আলিম. হ্যা শুধু খাবার নিয়ে 'চলুন বেড়িয়ে আসি' অনুষ্ঠান। আপনারা আজকের অনুষ্ঠানটিকে 'চলুন খেয়ে আসি' নামকরণও করতে পারেন প্রিয় শ্রোতা! তবে, এটাতো ঠিক যে, কোনো দেশের খাবার সেদেশের নিজস্ব পরিবেশে বসে উপভোগ করতে চাইলে, আপনাকেতো সেদেশে যেতেই হবে, তাই না? চলুন তাহলে, আমারা বেড়িয়ে পড়ি ভিন্ন স্বাদের খাবারের সন্ধানে। সুবর্ণা: শুরুতেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত প্রসঙ্গ। জনসংখ্যার দিক দিয়ে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। চীনের পরেই দেশটির স্থান এক্ষেত্রে। প্রিয় শ্রোতা, ভারতের খাবার সম্পর্কে আপনারা কমবেশি অবগত আছেন। আমাদের পশ্চিমবঙ্গের শ্রোতারাতো বটেই, বাংলাদেশের শ্রোতারাও নিশ্চিতভাবেই ভারতীয় খাবার সম্পর্কে কমবেশি ধারণা রাখেন। হিন্দুপ্রধান ভারতে নিরামিশ জাতীয় খাবারের আধিক্য স্বাভাবিকভাবেই বেশি লক্ষ্যণীয়। শাক-শবজি দিয়ে ভারতের মানুষ শত শত প্রকাশের সুস্বাদু খাবার তৈরি করে থাকেন। আমিষজাতীয় খাবারও ভারতে অনেক হয়। বাংলাদেশের মানুষও ভারতীয় ঢঙের রান্না খেয়ে অভ্যস্ত। তবে, আজ আমরা এখানে ভারতীয় খাবার নিয়ে নয়, মূলত আলোচনা করবো, মুম্বাইয়ের 'ডাব্বাওয়ালাদের' নিয়ে। আলিম: হ্যা, আমি জানি শ্রোতাদের অনেকেই 'মুম্বাইয়ের ডাব্বাওয়ালাদের' সম্পর্কে জানেন না। তো, কে এই ডাব্বাওয়ালা? সহজ করে বললে, যে ব্যক্তি টিফিন ক্যারিয়ার বহন করেন, তিনিই ডাব্বাওয়ালা। শুনে হয়তো আপনাদের অনেকেই অবাক হবেন যে, মুম্বাইয়ে চিঠিপত্রের মতো খাবারভর্তি টিফিনক্যারিয়ার বিভিন্ন বাসা থেকে বিভিন্ন অফিসে পৌঁছে দেওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা আছে। আপনি আপনার বাসা থেকে অনেক দূরের অফিসে কাজ করেন? আবার বাইরের তথা রেস্টুরেন্টের খাবার আপনার মুখে রোচে না? লাঞ্চ ব্রেকে পাওয়া সময় বাড়িতে ফিরে খেয়ে আবার অফিসে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়? তাহলে মুম্বাইয়ে আপনার ভরসা ডাব্বাওয়ালা। ডাব্বাওয়ালাদের সাথে যোগাযোগ করুন। ওরা প্রতিদিন আপনার বাসা থেকে খাবারভর্তি টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার অফিসে পৌঁছে দেবে। আপনি লাঞ্চ শেষ করলে, খালি টিফিনবক্স আবার পৌঁছে দেবে আপনার বাড়িতে। বিনিময়ে ওরা একটা নির্দিষ্ট অর্থ চার্জ করবে। ব্যস আপনার সমস্যা মিটে গেল।
সুবর্ণা: হ্যা, মুম্বাইয়ের ডাব্বাওয়ালাদের ইতিহাসও কিন্তু বেশ লম্বা। আসুন একটু পিছন ফিরে তাকাই। ১৮৯০ সালে মহাদেও হাভাজি বাছেছে নামক এক ব্যক্তি প্রায় একশত ডাব্বাওয়ালা নিয়োগ দিয়ে মুম্বাইয়ে শুরু করেছিলেন লাঞ্চ বিতরণের কাজ। ডাব্বাওয়ালাদের কাজকে প্রাতিষ্ঠানিকিকরণের সেই শুরু। তারপরতো ১৯৬৮ সালে 'মুম্বাই টিফিনবক্স সাপ্লায়ারর্স অ্যাসোসিয়েশন' পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই সংস্থার প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন রঘুনাথ মেদগে।
আলিম: প্রিয় শ্রোতা, প্রায় দেড় কোটি লোকসংখ্যা অধ্যুষিত মুম্বাইয়ে বর্তমানে প্রতিদিন পাঁচ হাজার ডাব্বাওয়ালা প্রায় দুই লাখ টিফিনবক্স বিলি করে। ভাবছেন, এতো টিফিনবক্স নিয়ে বিলি করার সময় ওরা একজনের বক্স আরেকজনকে দিয়ে দেয় কি না? তাহলে শুনুন, এক হিসেব অনুসারে, প্রতি ৬০ লক্ষ বিলির ক্ষেত্রে ওরা মাত্র একবার এ ধরনের ভুল করে। এ হিসেবে ১৯৯৮ সালের। স্বাভাবিকভাবেই, ওরা প্রতিটি ডাব্বা বা টিফিনবক্সের গায়ে বিশেষ চিহ্ন ও ঠিকানা ব্যবহার করে। সাইকেল, ট্রেন, বাস যখন যে ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা সুবিধাজনক, সেটাই তারা ব্যবহার করে। ওদের প্রতিদিনকার কাজ অনেকটা ক্যুরিয়ার সার্ভিসের মতো। সকালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডাব্বা সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় অফিসে; সেখান থেকে একেক এলাকায় ডাব্বা নিয়ে চলে যায় এক একাধিক ডাব্বাওয়ালা। বিলি করে বিভিন্ন অফিসে অফিসে। বিকেলে খালি ডাব্বা সংগ্রহ করে দিয়ে আসা হয় যার যার বাড়িতে। বিনিময়ে যে ফি দিতে হয় তা খুব বেশি নয়।
সুবর্ণা: প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, ২০১৩ সালে মুম্বাইয়া চলচ্চিত্র 'দি টিফিনবক্স'-এর কাহিনী আবর্তিত হয়েছে এই ডাব্বাওয়ালাদের একটি বিরল ভুলকে কেন্দ্র করে। মুম্বাইয়ের এই ডাব্বাওয়ালাদের নিয়ে বিবিসি একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শন করেছিল একবার। বৃটেনের প্রিন্স চালর্স এবং ক্যামেলিয়া পার্কারের বিয়েতে ডাব্বাওয়ালাদের প্রতিনিধিদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, ভারতের কোনো কোনো নামকরা বিজনেস স্কুলে ডাব্বাওয়ালারা অতিথি হিসেবে লেকচারও দিয়েছেন। আর দি নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর ২০০৭ সালের রিপোর্ট অনুসারে, ১২৫ বছরের পুরাতন এই ডাব্বাওয়ালা শিল্প প্রতিবছর ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে বেড়ে চলেছে।
আলিম: মুস্বাইয়ের ডাব্বাওয়ারা যেসব টিফিনবক্স প্রতিদিন বিলি করে, সেগুলোতে কী ধরনের খাবার থাকে? খাসির মাংস, রুটি, ডাল, সবজি ইত্যাদি। অবশ্য, ডাব্বাওয়ালারা যে শুধু বাড়ির তৈরি খাবারই যার যার অফিসে বিলি করে তা কিন্তু নয়। বাড়ির বাইরে কোনো রেস্টুরেন্ট বা অন্যকোনো নির্দিষ্ট স্থানে রান্না হওয়া খাবারও টিফিনবক্সে করে তারা অফিসে অফিসে বিলি করে। সেসব খাবারের জন্য ক্রেতাকে নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধ করতে হয়। বাংলাদশেও এই ধরনের লাঞ্চবক্স বিভিন্ন অফিসে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে অবশ্য এদেরকে কোনো বিশেষ নামে ডাকা হয় না বা এ পেশা তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত।
সুবর্ণা: আচ্ছা, ভারতের ডাব্বাওয়ালাদের চমকপ্রদ গল্প শোনার পর এখন আমরা ভিয়েতনামের খাবার সম্পর্কে কিছু তথ্য শ্রোতাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। ভিয়েতনামের সবচে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত খাবার হল গরুর মাংসের রাইস নুডলস। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে অবশ্য এ খাবারের স্বাদ ভিন্ন রকমের। উত্তরাঞ্চলের রাইস নুডলসে ঝাল কম দেওয়া হয়; মধ্যাঞ্চলে ঝাল বেশি এবং দক্ষিণাঞ্চলের রাইস নুডুলস খেতে মিষ্টি।