0305lvyou
|
আলিম. হিমালয় পর্বতমালার কোলে অবস্থিত বলে, নেপালকে ডাকা হয় 'হিমালয় দুহিতা' বা 'হিমালয় কন্যা' বলে। নেপাল দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ। দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর অন্যতম সদস্যও নেপাল। দেশটির উত্তর দিকে চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং অন্য তিন দিকে ভারত। বিশ্বের ১০টি সর্বোচ্চ পর্বতের মধ্যে ৮টিই নেপালে অবস্থিত। বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টও এদেশেই অবস্থিত।
খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে নেপালিরা কাঠমাণ্ডুর কাছে বসবাস করতো। পরে ভারত থেকে অনেক অভিবাসী নেপালে চলে আসে। দেশটির ৮০ শতাংশেরও বেশি লোক কৃষিকাজ করেন। রাজধানী কাঠমাণ্ডুর আয়তন ৫০.৬৭ বর্গকিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। জুলাই মাসে দেশটিতে সবচে বেশি গরম পড়ে। তখন তাপমাত্রা ওঠে ২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত। অন্যদিকে, জানুয়ারি মাসে এখানে সবচে বেশি ঠাণ্ডা পড়ে। তখন তাপমাত্র নেমে আসে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে।
১৭৬৮ সাল থেকে কাঠমাণ্ডু নেপালের রাজধানী। কাঠমাণ্ডুর চারপাশে সবুজ পাহাড়। এখানে চার ঋতুতে ফুল ফোটে। তাই, অনেকে একে 'পাহাড়ি দেশের চির বসন্তের শহর' বলে ডাকেন। এদেশে প্রচুর মন্দির আছে। বিশেষ করে রাজধানী কাঠামান্ডুতে প্রচুর মন্দির দেখা যায়। কাঠমাণ্ডুকে 'মন্দিরের শহর' বলা হয়। নেপালের বিভিন্ন রাজবংশ আমলে এ শহরে প্রচুর মন্দির, প্যাগোডা ও হল নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রতি বছরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকরা এখানে এসে মন্দিরগুলো পরিদর্শন করেন এবং নেপালের বিশেষ সংস্কৃতি উপভোগ করেন।
সুবর্ণা. নেপালের আরেকটি নাম 'পাহাড়ের দেশ'। কারণ, এখানে অনেক পাহাড় দেখা যায়। আগেই বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচে উঁচু ১০টি পর্বতের মধ্যে ৮টি নেপালে অবস্থিত। এসব পর্বতের সবগুলোর উচ্চতা ৮০০০ মিটারের বেশি। প্রতিদিন সুর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের সময় দূর থেকে তুষারাচ্ছন্ন পর্বত দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। তখন পর্বতগ্রাত্র থেকে সূর্যালোক প্রতিফলিত হয়। ধার্মিকদের মনে এসময় পবিত্র অনুভূতি সৃষ্টি হয়। তারা এসব পর্বতকে 'দেবতাদের সাদা আসন' বলে ডাকেন। এসব পর্বতের মধ্যে মাউন্ট এভারেস্ট হচ্ছে বিশ্বের সবচে উঁচু পর্বত। নেপালে এই পর্বতের নাম 'সাগরমাথা'। তিব্বতি ভাষায় একে ডাকা হয় 'চুমুলাংমা'। এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৮৪৮ মিটার। পর্বতটি চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের চেংতিং জেলা ও নেপালের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত। চীনের সীমান্তে চুমুলাংমা পর্বতের উত্তর অংশ এবং নেপালে দক্ষিণ অংশ পড়েছে। ১৯৬০ সালের ২৫ মে চীনের তিনজন পর্বতারোহী চুমুলাংমা পর্বতের উত্তর দিক থেকে সফলভাবে এর শিখরে আরোহণ করেন। উত্তর দিক থেকে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ ছিল সেটিই প্রথম।
আলিম. কাঞ্চনযঙ্ঘা পর্বতের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫৮৬ মিটার। এটি বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত। নেপাল ও ভারতের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত। ১৯৫৫ সালের ২৫ মে বৃটেনের পর্বতারোহী দল প্রথমবারের মতো এ পাহাড়ের শীর্ষে আরোহণ করে। লোত্সে (Lhotse) পর্বতের উচ্চত ৮৫১৬ মিটার; এটি বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ পর্বত। তিব্বতি ভাষায় 'লোত্সে' অর্থ 'দক্ষিণ শৃঙ্গ'। চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তিংরি জেলা ও নেপালের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত এই পাহাড়ের চূড়ায় ১৯৫৬ সালের ১৮ মে সুইজারল্যান্ডের পর্বতারোহী দলের দু'জন সদস্য নেপালের পশ্চিম তীর থেকে প্রথমবারের মত আরোহণ করেন। তা ছাড়া, মাকালু (makalu) পাহাড়, চোওইউ (chooyu) পাহাড়, ধলাগিরি (dhaulagiri) পাহাড়া, মানাসলু (manaslu) পাহাড় ও অন্নপূর্ণা (annapurna) পর্বত নেপালের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, ও জাপানের পর্বতারোহী এসব পর্বতের শিখরে আরোহণ করেছেন।
সুবর্ণা. আমরা আগেই বলেছি, নেপালে মন্দিরের সংখ্যা প্রচুর। এর মধ্যে কাঠমাণ্ডুর 'পশুপতিনাথ' পবিত্র মন্দির বিশ্ববিখ্যাত। 'পশুপতিনাথ' বিশ্বের সবচে পবিত্র হিন্দু মন্দির হিসেবে গণ্য হয়। মৃত্যুর পর এখানে হিন্দুদের দেহ দাহ করা হয়। মন্দির প্রাঙ্গনে দাঁড়ালে গোটা কাঠমাণ্ডু শহর দেখা যায়। মন্দির প্রাঙ্গনের আয়তন ২৬০ হেক্টর। মন্দিরের প্রধান স্থাপত্যটি হচ্ছে নেপালি স্টাইলে নির্মিত একটি প্যাগোডা মন্দির। এর চারপাশে আছে অনেক ছোট ছোট মন্দির। সোনালী ছাদ, রুপালী কক্ষ এবং কাঠে খোদাই করা ছবিতে সাজানো মন্দিরটি দেখতে দারুণ সুন্দর। দেখলে মনে পবিত্র ভাবের উদয় হয়।
আলিম. মন্দিরটি কাঠমাণ্ডুর কেন্দ্রীয় এলাকা থেকে ৫ কিলোমিটার পুবে অবস্থিত। এটি বাগমাতি নদীর তীরে অবস্থিত। এ মন্দিরে দেবতা শিবের পূজো করা হয়। নেপালের চারটি প্রধান শিব মন্দিরের একটি এটি। চতুর্থ শতাব্দীতে মন্দিরটি নির্মিত হয়। গত দেড় হাজার বছর ধরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ মন্দিরে এসে শিবের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছেন। তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে, এ মন্দিরে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রবেশ করতে পারেন। তাই, পর্যটকদের দূর থেকেই মন্দির দর্শন করতে হয়। মন্দিরের বাইরে বাগমাতি নদীর তীরে ছয়টি পাথর দিয়ে তৈরি 'দাহন প্ল্যান্ট' আছে, যেখানে মৃতদেহ পোড়ানো হয়। দাহ করার পর মৃতের দেহাবশেষ নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন যে, এভাবে মৃতের আত্মা মুক্তি পায়।