বন্ধুরা, চীনের পঞ্জিকা অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ছিল চীনের চান্দ্র বর্ষের প্রথম দিন-অর্থাত চীনের ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উত্সব।

চীনাদের কাছে এ বসন্ত উত্সব হচ্ছে সারা বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ও আনন্দময় একটি উত্সব। এ কারণে বসন্ত উত্সব উপলক্ষে চীনের বিভিন্ন অঞ্চল নিজেদের মত করে এ উত্সবকে উদযাপনের জন্য বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে ।

প্রিয় বন্ধুরা, আজকের সুরের ধারা অনুষ্ঠানে আমরা বেশ কিছু আকর্ষণীয় এবং মনোরম গানের মধ্য দিয়ে চীনের ঐতিহ্যবাহী এ বসন্ত উত্সবের বিভিন্ন রীতিনীতি এবং এ সম্পর্কিত যে ঐতিহ্যিক আনন্দ তা সবাই মিলে উপভোগ করবো,কেমন?।

প্রথমেই আপনাদের জন্য 'সানন্দ'নামের একটি বিখ্যাত গান। গানটি শুনে আপনাদের মন উল্লসিত হয়ে উঠেছে, তাই না? হ্যাঁ বন্ধুরা, চীনারা প্রাচীনকাল থেকেই বসন্ত উত্সবে একধরনের উল্লাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে। কারণ, এ উত্সব চীনাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণতঃ বসন্ত উত্সবের এক মাস আগে থেকেই এ উত্সবকে বরণ করার জন্য তারা বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করে থাকে। প্রতিটি পরিবার তাদের বাড়ি-ঘর ধোওয়া-মোছা করে পরিপাটি করে তোলে। এ সময় বসন্ত উত্সবের জন্য তাদেরকে বিশেষ কিছু পণ্যও কিনতে হয়। যেমন- বিশেষ ধরণের খাবার, ভোগ্যপণ্য, সবার জন্য নতুন জামা-কাপড় ও বাচ্চাদের জন্য খেলনা ইত্যাদি। তাছাড়া কিছু কিছু অঞ্চলে দেওয়াল বা দরজার দু'পাশে বসন্ত উত্সব সম্পর্কিত বিশেষ লিপি ও ছবি লাগানোর প্রথাও প্রচলিত রয়েছে।

চীনের বসন্ত উত্সব হচ্ছে নতুন বছরের শুরু অর্থাত নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া। এ উত্সব উদযাপনের এ প্রথা সেই প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে । প্রতি বছর বসন্ত উত্সবের দিনে চীনারা দেবতার উদ্দেশ্যে অর্ঘ্য নিবেদন করে, যেন নতুন বছরের আবহাওয়া ভালো থাকে ও প্রচুর ফসল উত্পন্ন হয়।

শ্রোতাবন্ধুরা, তাহলে চলুন এখন আমরা এ বসন্ত উত্সব উপলক্ষে একটি গান শুনি। এখন আপনারা যে গানটি শুনছেন তার শিরোনাম হলো "পটকা ফাটানোর আওয়াজ" । এ গানটির সুরে সুরে বসস্ত উত্সবের আনন্দময় পরিবেশ ও উষ্ণতা ছড়িয়ে আছে। উত্সবের দিনে এ গানে সবাই আনন্দচিত্তে পটকা ফুটায় এবং পটকা ফুটানোর সে দৃশ্য উপভোগ করে।

বসন্ত উত্সব হচ্ছে আত্মীয়স্বজনের পুনর্মিলনের উত্সব। এ উত্সব মুসলমানদের ঈদ, বাঙালীদের ১লা বৈশাখ এবং খ্রিষ্টানদের বড় দিনের মতো। বসন্ত উত্সবের আগের দিন মানুষ যত দূরেই থাক না কেন, সবাই যার যার বাড়িতে বাবা-মার কাছে ফিরে আসতে চেষ্টা করে। এসময় পরিবারের সকল সদস্যরা ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার সম্মিলনে একসাথে রাতের খাবার খেয়ে থাকে।

অতীতে বসন্ত উত্সবের আগের দিন লোকজন সারা রাত জেগে থেকে গল্প গুজব করে আনন্দ ফূর্তির মাধ্যমে রাত পার করে দিত।

কিন্তু চীনাদের জীবন-যাপনের মান উন্নয়নের পাশাপাশি বিনোদনেরও নানা পদ্ধতি বের হয়, ফলে বসন্ত উত্সব উদযাপনের পদ্ধতিরও অনেক পরিবর্তন ঘটে।

যেমন- বর্তমানে এ উত্সব উপলক্ষে পরিবারের সব সদস্যরা একসাথে বসে চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত বসন্ত উত্সবের প্রীতি সম্মিলনী ও বিনোদনমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপভোগ করে।

বন্ধুরা, আবারও তাহলে গান শোনা যাক, কেমন?। এখন শুনবেন চীনের পিয়ানো বাদক লাং লাংয়ের বাজানো 'বসন্ত উত্সব' এর একটি বিখ্যাত গান।

বসন্ত উত্সবের প্রথম দিনে শিশুরাসহ পরিবারের সবাই নতুন জামা-কাপড় পড়ে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বেরিয়ে পড়ে। তারা পরিচিত কারোর সঙ্গে দেখা হলে প্রথমেই "বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা" জানায়। বিগত বছরে যদি বন্ধুদের মধ্যে কোন ভুল বোঝা-বুঝি হয়ে থাকে, তাহলে বসন্ত উত্সবে পরস্পরকে একবার শুভেচ্ছা জানালেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

প্রিয় বন্ধুরা, এখন তাহলে শুনুন "বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা জানানো" সংক্রান্ত একটি গান।আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি বসন্ত উত্সব উদযাপনের প্রথা ও বিষয়বস্তুও দিন দিন বৈচিত্রময় হচ্ছে। যেমন দেবতার কাছে প্রার্থনা করার বিষয়টি আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।

কিন্ত্ত কিছু কিছু বিষয় যেমন- জানালায় কাগজের কাটা ছবি লাগানো, বসন্ত উত্সবের বিশেষ পিঠা বানানো, দরজার দু'পাশে বসন্ত উত্সবের বিশেষ লিপি লাগানো, ডাম্পলিং খাওয়া এবং নতুন বছরকে শুভেচ্ছা জানানোসহ নানান বিষয় আজও প্রচলিত আছে।