Web bengali.cri.cn   
তরুণ শিক্ষিকা লি সি ইউয়ান
  2013-12-11 15:46:56  cri


কুই চৌ প্রদেশের কুই ইয়াং শহরের ইউয়ুন ইয়ান এলাকার ফু ফেং স্কুলের একটি ক্লাসরুমে একজন তরুণ শিক্ষিকার নেতৃত্বে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা খেলা করছে। এই শিক্ষকের নাম লি সি ইউয়ান এবং তিনি এখানে দেড় বছর যাবত্ কাজ করেন। লি সি ইউয়ান সংবাদদাতাকে জানান, তিনি একটি জনকল্যাণ-সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন দেখে শিক্ষক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন:

"আমি জনকল্যাণ-সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন দেখতে পছন্দ করি এবং প্রতিবার আমি এ রকমের বিজ্ঞাপন দেখে খুব অভিভূত হই। এমনকি কখনো কখনো কেঁদে ফেলি। উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় থেকে আমি শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন লালন করতাম।"

লি সি ইউয়ান সি ছুয়ান নোর্মাল্ ইউনিভার্সিটির উপস্থাপনা বিভাগে লেখাপড়া করেছেন এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি টিভি স্টেশনে কাজ করার সুযোগ পান। কিন্তু সে সুযোগ ত্যাগ করে তিনি শিক্ষকতায় আসেন। প্রথম ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর কথা স্মরণ করে লি সি ইউয়ান বলেন:

"প্রথম দিন আমি প্রথম শ্রেণীর শিশুদের পড়াই এবং ক্লাস শেষ হওয়ার পর ছাত্রছাত্রীরা আমাকে বলে শিক্ষক লি আমরা আপনাকে পছন্দ করি। আমি তাদের চোখ দেখে বুঝি যে, তারা আমার সহায়তা চায়। তাই আমি এখানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।"

ফু ফেং স্কুল গ্রামীণ শ্রমিকদের শিশুদের পাঠ দেওয়া একটি বেসরকারি বিদ্যালয় এবং বর্তমানে এর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৪ শতাধিক। একটি নির্মাণস্থলের পাশে অবস্থিত এ স্কুলের পরিবেশ ভাল নয় এবং অর্থ অভাবের কারণে ভাল শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক থান চুং ওয়ে প্রথম দিকে ভেবেছিলেন, লি সি ইউয়ান দীর্ঘসময়ে এখানে থাকতে পারবেন না। তিনি বলেন:

"আমি শুনেছি লি সি ইউয়ান একটি ভাল পরিবারে বড় হয়েছেন এবং ভেবেছিলাম তিনি এ পরিবেশে কাজ করতে পারবেন না।"

তবে লি সি ইউয়ানের আচরণ দেখে থান চুং ওয়ের চিন্তার অবসান হয়। লি সি ইউয়ান শিক্ষক হিসেবে বিনামূল্যে এ স্কুলে কাজ করেন।

ফু ফেং স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে বয়সে লি সি ইউয়ান সবার ছোট। প্রতিদিন তিনি সবার আগে স্কুলে আসেন এবং সবার শেষে স্কুল ত্যাগ করেন। তিনি প্রথম ও চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের চীনা ভাষা ও সংগীত শিখান এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে চতুর্থ শ্রেণীর ৭১জন ছাত্রছাত্রীর দেখাশোনা করেন। প্রতিদিন দুপুরের বিশ্রামের সময়েও তিনি কোনো কোনো ছাত্রছাত্রীকে পড়ান এবং তাদের হোমওয়ার্ক দেখেন। প্রতিদিন কাজ শেষ করার পর তিনি এত ক্লান্ত হয়ে পড়েন যে কথাও বলতে চান না।

লি সি ইউয়ান কেন এ চাকরিতে এসেছেন, তা তার পরিবার ও বন্ধুরাও প্রথমে বুঝতে পারে নি। লি সি ইউয়ান মনে করেন, তিনি শিশুদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং তাকে এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন:

"ভবিষ্যতে আমিও টাকা রোজগার করার জন্য কাজ করবো। তবে তার আগে আমি এই কাজ করতে চাই। এ কাজে ক্লান্ত হলেও আনন্দ পাই।"

ফু ফেং স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা গ্রামীণ শ্রমিকদের শিশু। তারা মা-বাবার সঙ্গে গ্রাম থেকে শহরে এসেছে এবং তাদের জীবন বেশ কষ্টকর। লি সি ইউয়ান বলেন:

"এটা শহর হলেও গ্রামের মতো। শহরের কাছাকাছি অবস্থিত হলেও শহর নয় এবং জীবনযাপনের মান গ্রামের মতো। আসল কথা হলো শহরের ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় আমার শিশুদের জ্ঞান এবং লেখাপড়ার সামর্থ্য কম। আমি এ সমস্যা বুঝতে পারি এবং এ সমস্যা সমাধানের জন্য এক একটি বিষয় আমি ছাত্রছাত্রীদের বার বার পড়াই।"

প্রতি মাসে লি সি ইউয়ান মা-বাবার কাছ থেকে ২ হাজার ইউয়ান পান এবং তিনি সবসময় এ টাকা দিয়ে তার ছাত্রছাত্রীদের জন্য উপহার কিনেন। দশ বছর বয়সী ছাং রোং চুন আরেকটি স্কুল থেকে ফু ফেং স্কুলে এসেছে। প্রথম দিন লি সি ইউয়ানের কাছ থেকে উপহার পায় সে। ছাং রোং চুন বলে:

"স্কুলে আসার প্রথম দিন শিক্ষক লির কাছ থেকে পেন্সিল বক্স, পেন্সিল এবং পেন্সিল শার্পনার উপহার পাই আমি এবং পরে আমি জানতে পারি ক্লাসের প্রত্যেক সহপাঠি একই উপহার পেয়েছে।"

ছাত্রছাত্রীদের প্রতি ভালবাসার বিনিময়ে সমান ভালবাসা পান শিক্ষণ লি সি ইউয়ান। তারা নিজস্ব উপায়ে শিক্ষকের প্রতি তাদের ভালবাসা প্রকাশ করে। লি সি ইউয়ানের টেবিলে রয়েছে নানা রকমের উপহার। যেমন রাস্তার পাশের ফুল, ছাত্রছাত্রীদের আকা চিত্র ও লেখা চিঠি। প্রতিদিন কয়েকজন ছাত্রছাত্রী স্বেচ্ছায় লি সি ইউয়ানের কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে এবং পরে তাকে বাস স্টপেজ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। ছাত্রছাত্রীর বিশুদ্ধ ভালবাসায় লি সি ইউয়ান অভিভূত হন। তিনি বলেন:

"প্রথমে আমি অনুরাগ ও স্বপ্ন থেকে এ কাজ করেছি। তবে বর্তমানে ছাত্রছাত্রীরা আমার চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। তারা আমকে শিক্ষক বলে ডাকে এবং প্রতিবার তাদের কথা শুনে আমার মনে হয় আমি আরও ভালভাবে তাদেরকে পড়াবো।"

নিজের ছাত্রছাত্রীদেরকে আরও ভালভাবে জানার জন্য লি সি ইউয়ান তাদের বাড়িতে যান। এমন একটি সফর তার মনে গভীর ছাপ ফেলে। শীতকালে তার এক ছাত্র ও তার পরিবার একটি ছোট বাসায় বাস করে, যে বাসার কোনো জানালা নেই। এ অবস্থা দেখে লি সি ইউয়ান মনে করেন, এমন পরিবারগুলোর জন্য তাকে কিছু একটা করতে হবে। মাইক্রোব্লগিংয়ে ওই দরিদ্র পরিবারগুলোকে সাহায্য করার আহবান জানান তিনি। তিনি 'মনের বাসা' শীর্ষক একটি সহায়তা প্রকল্প করেন। এ প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে প্রতিটি পরিবার মাসে ১০০ ইউয়ান সহায়তা পায়। এজন্য লি সি ইউয়ান প্রতি মাসে ৬ হাজার ইউয়ান অনুদান পান। ৯ বছর বয়সী সিং হুয়া লি সি ইউয়ানের সহায়তা পেয়েছে। সে বলে:

"১০০ ইউয়ান দিয়ে আমি পরিবারের জন্য চাল ও তেল কিনতে পারি এবং কিছু বই কিনতে পারি।"

লি সি ইউয়ানের মা-বাবাও মেয়ের কাজকে সমর্থন করেন। তার মা 'মনের বাসা' প্রকল্পে যোগ দিয়েছেন। লি সি ইউয়ান বলেন, মা-বাবার সমর্থন তার জন্য সবচেয়ে ভাল উত্সাহ। একজন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক হিসেবে লি সি ইউয়ান অনেক আনন্দ পান। তিনি আশা করেন, তার আচরণ তার প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর ওপর প্রভাব ফেলবে এবং তারা একটি সুখী বাল্যকাল পাবে। তিনি বলেন:

"যদিও আমি তাদের গোটা জীবন বদলে দিতে পারবো না, তবে তাদের স্মৃতিতে যুক্ত করতে পারবো একটি চমত্কার অভিজ্ঞতা। তাদের মনে থাকবে তাদের এমন একজন শিক্ষক আছে এবং প্রতিবার আমার কথা মনে পড়লে তাদের আনন্দ লাগবে।"

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক