131113china.m4a
|
২৮ অক্টোবর 'আজকের চীন' শিল্প-সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাইল্যান্ডে চীনের সাংস্কৃতিক কাউন্সিলার ছিন ইউয়ু সেন বলেন, 'আজকের চীন' শিল্প-সপ্তাহ চীনা সাহিত্য ও শিল্পকলা ফেডারেশনের একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে এবং কয়েকটি ইউরোপীয় ও আমেরিকান দেশে সাফল্য অর্জন করেছে। সেকারণে তিনি এটিকে একটি আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী অনুষ্ঠান মনে করেন। তিনি বলেন:
"আজকের চীন' শিল্প-সপ্তাহ প্রথম বারের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। লোকশিল্প প্রদর্শনী ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও রয়েছে এ সপ্তাহে এবং এ আয়োজনের মাধ্যমে থাইল্যান্ডের বন্ধুদের সঙ্গে সার্বিকভাবে চীনের আধুনিক সংস্কৃতি ও শিল্পকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।"
থাইল্যান্ডে 'আজকের চীন' শিল্প-সপ্তাহের প্রথম দিনের প্রথম অনুষ্ঠান ছিল ছিং হাই লোকশিল্প প্রদর্শনী। ছিং হাই প্রদেশের সাহিত্য ও শিল্পকলা ফেডারেশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছাং মিন বলেন, তারা ৮০টি বৈশিষ্টপূর্ণ ও প্রতিনিধিত্বশীল শিল্পকর্ম বাছাই করে প্রদর্শন করছেন। তিনি বলেন:
"এ শিল্পকর্মগুলোতে স্থানীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। শিল্পকর্মগুলোর অসাধারণ শিল্পরীতি ও থিম দেখে দর্শনার্থীরা লোকশিল্পীদের শিল্পশৈলী এবং তাদের নবায়ন ও উদ্ভাবন উপলব্ধি করতে পারবে। আমরা বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করি, যাতে থাইল্যান্ডের দর্শনার্থীরা প্রদর্শনী-ভবনে চীনা শিল্পীদের কাজ করার দৃশ্য দেখতে পারে।"
ছাং ফেং ছিং হাই থেকে আগত একজন শিল্পী, যিনি কাগজ কেটে ছবি বানান। তিনি বলেন, চীনে কাগজ কেটে ছবি তৈরি করা শিল্পের ইতিহাস খুব দীর্ঘ। উত্সব, বিয়ে অনুষ্ঠান ও সামাজিক যোগাযোগসহ বিভিন্ন আয়োজনে কদর রয়েছে এ শিল্পের। তিনি বলেন:
"ছিং হাইয়ের কাগজ কেটে বানানো ছবিতে চীনা শিল্পকলার অভিন্ন উপাদান এবং ছিং হাইর স্থানীয় বৈশিষ্ট্য দেখা যাবে। থাইল্যান্ড মানুষদের এ শিল্পে আগ্রহ আছে এবং তারা এটি খুব পছন্দ করে।"
লোকশিল্প প্রদর্শনী ছাড়া চীনা চলচ্চিত্র উত্সব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও ছিল এ শিল্প-সপ্তাহে।
যে সংগীতটি আপনারা শুনছেন সেটি হচ্ছে ৩০ অক্টোবর থাইল্যান্ডের রয়্যাল থিয়েটারে অনুষ্ঠিত 'আজকের চীন' সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ৫ জন চীনা যন্ত্রসংগীত শিল্পীর বাজানো পাঁচতারা। শ্রোতারা চীনা ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের মাতাল করা সুরে বিভোর হয়।
চীনের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী ও সুরকার একসাথে থাইল্যান্ডের দর্শকদের একটি বিস্ময়কর অনুষ্ঠান উপহার দেন। থাইল্যান্ডে চীনের রাষ্ট্রদূত নিং ফু খুই এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মনে করেন, চীন ও থাইল্যান্ডের মৈত্রী ও সাংস্কৃতিক বিনিময় এগিয়ে নিয়ে যাবে 'আজকের চীন' শিল্প-সপ্তাহ। তিনি বলেন:
"সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে চীন ও থাইল্যান্ডের জনগণ পরস্পরকে জানতে পেরেছে এবং আমাদের মৈত্রী বেড়েছে। এ আয়োজন একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে এবং দু'দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।"
এবারের অনুষ্ঠানের প্রধান পরিচালক, চীনের বিখ্যাত গায়ক ইউয়ু জুন জিয়ান বলেন, চীন বিদেশে সাধারণত ছোট শিল্পদল পাঠায়। তবে এবার তাদের দলে রয়েছেন চীনের সবচেয়ে ভাল শিল্পী ও অভিনেতারা। শিল্পদলের সদস্যরাও থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে সম্মান করেন। তাই তারা যখন অনুষ্ঠান করেন, তখন তারা 'আজকের চীন'-এর উপাদান তুলে ধরা ছাড়াও থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি ও দর্শকদের প্রতি তাদের সম্মান প্রকাশ করেন। ইউয়ু জুন জিয়ান বলেন:
'মঞ্চে আমাদের সব আচরণ চীনের মনোভাবের প্রতিনিধিত্ব করে। আমাদের মনে থাকে থাইল্যান্ডের জনগণ ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মানবোধ। এ মন দিয়ে আমরা বিশ্বাস করি, আমরা নিশ্চয়ই ভাল অনুষ্ঠান উপহার দিতে পারব।"
ইয়াও হং চীনের বিখ্যাত গায়িকা এবং চীনা অপেরা হাউজের প্রধান কুশীলব। তিনি শিল্পদলের সঙ্গে প্রথমবারের মতো থাইল্যান্ডে আসেন। থাইল্যান্ডে মানুষের প্রাণঢালা আতিথেয়তা ও অনুরাগ তার মনে গভীর ছাপ ফেলে। তিনি বলেন:
"আমি থাইল্যান্ডের মানুষের চোখে দেখি প্রাশান্তি ও দয়াশীলতা এবং আমি তাদের সঙ্গে আরও বেশি সাংস্কৃতিক বিনিময় করতে চাই।"
দুই থেকে ৮ নভেম্বর ক্যাম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে 'আজকের চীন' সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হয়। এ আয়োজন চলাকালে 'প্রেম থেকে বিচ্যুত হওয়া ৩৩ দিন' এবং 'Angkor Wat'-এর মৃদুহাসি'সহ ৬টি চীনা চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। 'Angkor Wat-এর মৃদুহাসি' চলচ্চিত্রটি ক্যম্বোডিয়ার বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান Angkor Wat-এ চিত্রায়ন করা হয়েছে এবং চলচ্চিত্রে চীন ও ক্যাম্বোডিয়ার জনগণের গল্প বর্ণিত হয়েছে।
জানা গেছে, ক্যাম্বোডিয়ার দর্শকরা যাতে ভালভাবে চলচ্চিত্রগুলো উপভোগ করতে পারে, সেজন্য সেগুলো ক্যাম্বোডিয়ার ভাষায় ডাবিং করা হয়।
চলতি বছর হলো চীন ও ক্যাম্বোডিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫৫তম বার্ষিকী। এ বছর আয়োজিত 'আজকের চীন' সপ্তাহের ধারাবাহিক অনুষ্ঠান দু'দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়কে এগিয়ে নিয়েছে।
চীনের সাহিত্য ও শিল্পকলা ফেডারেশনের উদ্যোগে ২০০৪ সাল থেকে 'আজকের চীন' শীর্ষক শিল্প-সপ্তাহ শুরু হয় এবং চলতি বছর প্রথম বারের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো।