131106china
|
বিকেল ৫টা, কুয়াং চৌ শহরের ইউয়ু সিউ এলাকার তেং ফেং কমিউনিটির পরিবার সেবাকেন্দ্রে অনেক আফ্রিকান চীনা ভাষা শিখছেন। তাদের অধিকাংশই কুয়াং চৌতে বসবাসরত ব্যবসায়ী।
কুয়াং চৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওয়াং লিয়াং এ ক্লাসের দায়িত্বশীল ব্যক্তি। ২০১১ সালে তেং ফেং কমিউনিটির পরিবার সেবাকেন্দ্রের আমন্ত্রণে একটি এনজিও আফ্রিকান অধিবাসীদের সেবা দেয় এবং ওয়াং লিয়াং এ এনজিওর একজন সদস্য। তাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে প্রতি বিকেলে বিনামূল্যে চীনা ভাষার ক্লাসের ব্যবস্থা করা। ওয়াং লিয়াং বলেন:
"আফ্রিকান অধিবাসীদের প্রধান চাহিদা চীনা ভাষা। তাদের অধিকাংশ ফরাসি ও আরবি ভাষা বলেন এবং ইংরেজি জানেন না বলে চীনে তারা কোনো যোগাযোগ করতে পারেন না।"
জীবনের তাগিদে আফ্রিকান অধিবাসীরা চীনা ভাষা শিখতে আগ্রহী। সর্বোচ্চ ৪০-৫০ জন ২০ বর্গমিটারের একটি ক্লাসরুমে চীনা ভাষা শিখতে বসেন। গিনির নাগরিক সুলেইমান বলেন, ব্যবসা করতে চাইলে চীনা ভাষা শিখতে হবে। তিনি বলেন:
"গিনিতে অনেক চীনা ব্যবসা করছেন বা চাকরি করছেন। আমি তাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে চাই। তাই চীনা ভাষা শিখতে হবে। কারণ তারা ফরাসি জানেন না। আমি যদি চীনা ভাষা বলতে পারি, তাহলে আমি তাদের সঙ্গে বড় ব্যবসা করতে পারব।"
ভাষা শিক্ষা দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রক্রিয়া। সাধারণ জীবনে আফ্রিকানরা বসবাস, চিকিত্সা ও তাদের শিশুদের শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হন।
চাও ওয়েন হুয়া সেবাকেন্দ্রের একজন কর্মী এবং তিনি অনর্গল ইংরেজি বলতে পারেন। কেন্দ্রে আসা আফ্রিকানদের সহায়তা দেওয়া তার দায়িত্ব। তিনি বলেন:
"আমরা আফ্রিকান নারীদের চিকিত্সা বিষয়ক সহায়তা দেই। তারা এইডস পরীক্ষা করাতে চান। তাই আমি তাদের পক্ষে হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করি।"
ছাও ওয়েন হুয়া বলেন, সেবাকেন্দ্র আইন সম্পর্কে নিয়মিত বক্তৃতা আয়োজন করে, আফ্রিকান নারীদের চিকিত্সা বা শারীরিক পরীক্ষা সেবা যোগায় এবং তাদের ছেলেমেয়েদের স্থানীয় স্কুলে ভর্তিতে সাহায্য করে। ইমিগ্রেশন বিষয়ক চীনের নীতির মতো বড় ব্যাপার থেকে নবজাতকের টিকা দেওয়ার মতো ছোট ব্যাপার - সবকিছু তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে আফ্রিকান অধিবাসীদেরকে জানানো হয়।
আমাদের সংবাদদাতা যখন সেবাকেন্দ্রে যান, তখন তার এক কোণায় ছাত্রছাত্রীরা কম্পিউটার গেমস খেলছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিল আফ্রিকান শিশু। তাদের সঙ্গে কথা বলেন সংবাদদাতা।
সিও চিয়াং নামে তাদের মধ্যের একটি শিশু ভাল চীনা ভাষা বলতে পারে। সে ৪ বছর আগে কঙ্গো-কিনশাসা থেকে চীনে এসেছে এবং বর্তমানে পঞ্চম-শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী। ব্যবসার কাজে তার মা-বাবা ব্যস্ত থাকেন এবং তার যত্ন নেওয়ার সময় পান না। তাই সেবাকেন্দ্র তার দ্বিতীয় বাসায় পরিণত হয়েছে। সি চিয়াং সংবাদদাতাকে জানায়, সে এ কেন্দ্রটি খুব পছন্দ করে। কারণ এখানকার কর্মকর্তারা তার ভাই-বোনের মতো।
শারদীয় উত্সব উপলক্ষে সেবাকেন্দ্র দেশ বিদেশের অধিবাসীদের জন্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সবাই একসাথে মিলে পূর্ণযৌবনা চাঁদের পিঠা খান এবং সুন্দর গোলাকার চাঁদ উপভোগ করেন। চীনা অধিবাসীরা তাদের আফ্রিকান প্রতিবেশীদের সঙ্গে শারদীয় উত্সবের ঐতিহ্যকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং আফ্রিকান বন্ধুরা নিজেদের দেশের ঐতিহ্যবাহী উত্সব তুলে ধরেন। ওয়াং লিয়াং বলেন, ভাষা ও আচার ব্যবহার ও রীতি-নীতি ভিন্ন বলে আফ্রিকানদের স্থানীয় সমাজে প্রবেশ করা কঠিন একটি ব্যাপার। সেবাকেন্দ্র বিভিন্ন উত্সব উপলক্ষে নিয়মিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং আফ্রিকান পরিবারগুলোতে গিয়ে তাদের মনস্তাত্ত্বিক সমর্থন দেয়। ওয়াং লিয়াং বলেন:
"আফ্রিকান বন্ধুরা অনেক দূর থেকে চীনে এসেছেন। এখানে তাদের একটি নতুন সমাজিক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে চীন ইমিগ্রেশন দেশ নয় এবং এখানে সামাজিক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা সহজ একটি ব্যাপার নয়। তাদের নিঃসংগ লাগে এবং মনঃকষ্ট হলেও কারও সাথে কথা বলতে পারেন না।"
কুয়াং চৌসহ চুচিয়াং নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে তেং ফেং সেবাকেন্দ্রের মতো বিদেশীদের সেবা প্রদানকারী কেন্দ্রের সংখ্যা ১০০। কুয়াং তুং ইমিগ্রেশন প্রশাসন বিভাগের বৈদেশিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান ইউয়ান ওয়ে বলেন, কমিউনিটির মাধ্যমে বিদেশীদেরকে সেবা দেওয়া ও ব্যবস্থাপনা করা একটি ভাল উপায়। তিনি বলেন:
"কমিউনিটিকে সেবা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সেবার মান উন্নত হবে এবং ভাল কমিউনিটির চার্জও বাড়বে। সরকারও এ সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে বিদেশীদের চাহিদা জানতে পারবে এবং নিজের কাজ ভালভাবে করতে পারবে। বিদেশীদের জন্য সেবাকেন্দ্র নিরাপদ ও সুবিধাজনক একটি সংস্থা।"
তেং ফেং পরিবার সেবাকেন্দ্রের আরেকটি রুমে কয়েকজন আফ্রিকান অধিবাসীকে কমিউনিটিতে অনুষ্ঠেয় একটি সংগীত প্রতিযোগিতার জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। গিটারের সুরে আফ্রিকান রীতিতে চীনা গান গাচ্ছিলেন তারা। ওয়াং লিয়াং বলেন, প্রত্যেক মানুষের মতো জন্মস্থান ছেড়ে চীনে আসা আফ্রিকান বন্ধুদের ভাল জীবনযাপনের অধিকার ও স্বপ্ন আছে। তারা আমাদের ভাই-বোনের মতো এবং আমাদের সহায়তা ও যত্ন তাদের জন্য প্রয়োজন। আশা করি, আমাদের কমিউনিটির প্রচেষ্টায় আমাদের আফ্রিকান ভাই-বোনেরা এখানে স্বাচ্ছন্দ্যময় ও সুখী জীবন যাপন করতে পারবে।