Web bengali.cri.cn   
জার্মানির প্রবীণ নাগরিক অটো মায়ার
  2013-10-30 10:20:22  cri


 

প্রথমবারের মতো তালিতে এসেছিলেন। এসেছিলেন তালি কলেজের একজন শিক্ষক হিসেবে; পরে নিজেই একটি রুটির দোকান খুলে বসেন। তালির বহুমুখী সংস্কৃতি তাকে আকর্ষণ করে। তিনি বলেন

 

"আমি মনে করি তালি একটি স্পেশাল স্থান। এখানে বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির মানুষ বসবাস করে। বিদেশিও কম নয়। বলা যায়, সব বিদেশি মিলে এখানে আরেকটি সংখ্যালঘু জাতি সৃষ্টি করেছে। আমাদের জন্য এখনে বসবাস খুব সহজ একটি ব্যাপার। বিদেশিদের জন্য তালি একটি উন্মুক্ত জায়গা।"

হান, পাই, ই, হুই, লিসু, তিব্বত ও না সিসহ ২৬টি জাতির মানুষ তালিতে বসবাস করে এবং এখানকার লোকসংখ্যার মধ্যে ৫০ শতাংশ সংখ্যালঘু জাতির মানুষ। তিন ভাগের মধ্যে এক ভাগ মানুষ পাই জাতির মানুষ বলে তা লি পাই জাতির একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল।

তালি ইমিগ্রেশন বিভাগের সূত্র থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ১০০০ বিদেশি এক বছর ও তার চেয়ে বেশি সময় ধরে তালিতে বসবাস করে আসছে ১২০জন ওটো মায়ারের মতো ব্যবসা করে।

ওটো মায়ারের রুটিরদোকানের নাম '৮৮ নম্বর রুটির দোকান'। ছোট হলেও দোকানটি তালিতে খুব জনপ্রিয়। প্রতিদিন তালির বাসিন্দাদের অনেকে এ দোকান থেকে লাইন দিয়ে রুটি কেনে। পর্যটকরাও আসেন তার দোকানে। মাদাম ওয়াং তেমনই একজন পর্যটক। তিনি ইন্টারনেট থেকে '৮৮ নম্বর রুটির দোকান' সম্পর্কে জানতে পারে এবং রুটি কেনার জন্য এখানে আসেন। তিনি বলেন:

 

"আমি ভ্রমণের জন্য তালিতে এসেছি এবং আমি দেখেছি এ দোকানে অনেক মানুষ ভীড় জমায়। ইন্টারনেটে এ দোকান সম্পর্কিত তথ্য পড়েছি; আমিও তাই রুটি কিনতে চাই। গতকাল আমি এসেছিলাম, তবে মানুষ খুব বেশি ছিল বলে কিনতে পারিনি। আজ আমি আবার এসেছি।"

সি তে মিং একজন জার্মান গাইড এবং তালিতে ওটো মায়ারের দোকানের কল্যাণে তিনি জার্মান রুটি খেতে পারেন খুব সহজে। তিনি বলেন

 

"তাদের রুটি খুব সুস্বাদু। চীনা খাবার পছন্দ করলেও, এখানে জার্মান রুটি খাওয়া খুবই আনন্দের একটি ব্যাপার। আমি প্রথমবরের মতো চীনে আসল জার্মান রুটি খেলাম।"

'৮৮ নম্বর রুটি দোকান' চলছে ৫ বছর ধরে। এক বছর আগে ওটো মায়ার তা লির সা সি জেলায় আসেন। গাড়ি দিয়ে সা সি থেকে তা লি যেতে ৩ ঘন্টা লাগে। তা লির চেয়ে সা সি আরও শান্ত এবং এখানে ওটো মায়ার স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেন

 

"সা সি আসার পর আমি পাই জাতির ভাষা শিখতে আগ্রহী হই। কারণ, সা সিতে পাই জাতির ভাষা খুব মর্যাদা পায়। সা সিতে পাই জাতির ভাষা ও অন্য জায়গার পাই জাতির ভাষার মধ্যে পার্থক্য আছে। আমি পাই জাতির ভাষা খানিকটা বুঝতে পারি, তবে বলতে পারি না। আমি পাই জাতির সংগীতও শিখতে চাই এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে শিখছিও। পাই জাতির সংগীতও বিশেষ ধরনের। সাধারণত চীনে সংগীতে ৭ স্বর ব্যবহার করা হয় তবে পাই জাতির সংগীতে রয়েছে শুথু ৫টা স্বর।"

সা সিতে ওটো মায়ার একটি বাসা ভাড়া করে নিজের ইচ্ছামতো সাজিয়ে নিয়েছেন। তিনি বন্ধুদের নিয়ে স্থানীয় সংগীত চর্চার জন্য বিশেষ একটি কক্ষ ঠিক করেছেন। সা সির সংস্কৃতি পছন্দ করেন ওটো মায়ার। তিনি স্থানীয় মানুষকে জার্মানির রুটি তৈরির কৌশল শেখাতে চান। তিনি বলেন

 

"ভবিষ্যতে আমি সা সিতে একটি প্রশিক্ষণ-কেন্দ্র খুলবো। তবে, প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি ব্যবসা করতে চাই না। আমি চাই স্থানীয় মানুষ জার্মানির রুটি তৈরির কৌশল শিখুক।"

বর্তমানে ওটো মায়ার সা সিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। অন্যদিকে তা লিতে তার স্ত্রী তাদের রুটি দোকান দেখাশোনা করেন। সা সির শান্ত ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন অনেক উপভোগ করেন ওটো মায়ার। তিনি প্রতিদিন রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করেন; স্থানীয়দের সঙ্গে কার্ড খেলেন। তিনি স্থানীয় ভাষায় কথা বলা শিখছেন এবং স্থানীয় খাবার রান্নার ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

ওটো মায়ারের বয়স এখন ৭২ বছর। জন্মস্থানের প্রসঙ্গ এলে তিনি বলেন যে, চীনই তার জন্মস্থান। তিনি বলেন

"আমি অনেক অনেক বছর আগে জার্মানি ত্যাগ করি এবং গত ২০ বছর ধরে আমি বিভিন্ন দেশে বসবাস করে আসছি। আমি মনে করি চীনই আমার জন্মস্থান।"

অধিকাংশ মানুষের জন্য তা লি হচ্ছেন ভ্রমণের একটি জায়গা। কিন্তু ওটো মায়ারের কাছে তা লি হচ্ছে তার ঠিকানা। সা সিতে তিনি তার জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাতে চান। তিনি বলেন

"আমি জার্মনিতে ফিরে যেতে চাই না এবং চীনে আমি একটি আই ডি কার্ড পেতে চাই। আমি জানি চীনে বিদেশিদের জন্য আই ডি কার্ড অর্জন করা খুব কঠিন একটি ব্যাপার; তবে আমি আবেদন করেছি। আশা করি আমার স্বপ্ন পূরণ হবে।"

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক