


1029 SOS Alim Final
|
প্রাচীন যুগের ধ্রুপদি সংস্কৃত ভাষার শ্রেষ্ঠ ভারতীয় কবি ও নাট্যকার ছিলেন কালিদাস। তাকে অনেকে ডাকেন সংস্কৃত ভাষা সাহিত্যের উইলিয়াম শেক্সপিয়র বলে। কালিদাসের কবিতা ও নাটকে হিন্দু পুরাণ ও দর্শনের প্রভাব আছে।"মেঘদূত" এই কালিদাসরচিত একটি কাব্যগ্রন্থ। প্রাচীন টীকাকারদের মতে, এটি কেলিকাব্য, ক্রীড়াকাব্য, খণ্ডকাব্য বা মহাকাব্য। আধুনিক গবেষকগণ এটিকে "বর্ষাকাব্য", "বিরহকাব্য" বা "গীতিকাব্য" নামে অভিহিত করেন। মন্দাক্রান্তা ছন্দে রচিত এই কাব্য কালিদাসের সবেচে জনপ্রিয় এবং সম্পূর্ণ মৌলিক রচনা। আবার, "শুদ্ধ বিরহকে অবলম্বন করে সংস্কৃত সাহিত্যের প্রথম ও পূর্ণাঙ্গ কাব্য এই মেঘদূত।"
রামগিরি পাহাড়ে নির্বাসিত এক অভিশপ্ত যক্ষের প্রিয়াবিরহ এই কাব্যের মূল উপজীব্য। কাব্যটি "পূর্বমেঘ" ও "উত্তরমেঘ" নামে দুটি অংশে বিভক্ত। অবশ্য কালিদাস নিজে তার কাব্যগ্রন্থকে এই দুটি অংশে ভাগ করে যাননি। এটি করেছেন পরবর্তীকালের পন্ডিতেরা। "পূর্বমেঘ" ও "উত্তরমেঘ" অংশের শ্লোকসংখ্যা যথাক্রমে ৬৩ও ৫৪। "পূর্বমেঘ" অংশের আলোচ্য বিষয় নিসর্গ-বর্ণনা; অন্যদিকে "উত্তরমেঘ" অংশের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কুবেরপুরী অলকার বিলাসবৈভব ও যক্ষপ্রিয়ার সৌন্দর্যের বর্ণনা। একদল পাঠক "পূর্বমেঘ" অংশটিকে কাব্যের ভূমিকামাত্র মনে করে "উত্তরমেঘ"অংশটিকে মূল কাব্যের মর্যাদা দেন; অপর এক শ্রেণীর পাঠকের মতে, "উত্তরমেঘ"কৃত্রিম রচনা, তাই "পূর্বমেঘ"-ই শ্রেষ্ঠ।"মেঘদূত" সম্পর্কে ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, "কালিদাসের মেঘদূত অতি প্রাচীনকালেই জনপ্রিয়তার শিখরে স্থান পেয়েছিল। একদিকে পঞ্চাশটির অধিক টীকা, বহু প্রক্ষিপ্ত শ্লোক, অন্যদিকে এর অনুকরণে পঞ্চাশাধিক দূতকাব্যের রচনা এর জনপ্রিয়তার প্রমাণ।... আধুনিক প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংস্কৃত রসিকেরা এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।"
"মেঘদূত" কাব্যের সারবস্তুটি মোটামুটি এমন: কর্তব্যকর্মে অসাবধানতার কারণে প্রভুর অভিশাপে যক্ষকে রামগিরি পর্বতের নির্জন আশ্রমে নির্বাসিত হতে হয়। সেখানে বসে আষাঢ়ের প্রথম দিবসে নববর্ষার মেঘ দেখে, তারই মাধ্যমে অলকাপুরীর রম্যপ্রাসাদে তাঁর বিরহী প্রিয়ার উদ্দেশ্যে চিঠি পাঠাবেন বলে মনস্থির করেন যক্ষ। বিরহের আতিশয্যে তার জড় ও জীবের ভেদাভেদজ্ঞান লুপ্ত হয়। তিনি আকাশে ভেসে-যাওয়া-মেঘকে অলকায় পৌঁছানোর পথ বাতলাতে থাকেন। কাব্যের এই অংশে প্রাচীন ভারতের এক অসামান্য ভৌগোলিক বিবরণ ফুটে উঠেছে। এরপর যক্ষ কুবেরপুরী অলকা ও তাঁর বিরহী প্রিয়ার রূপলাবণ্য বর্ণনা করেছেন মেঘের কাছে। অবশেষে মেঘকে অনুরোধ করেছেন, তার দূত হয়ে প্রিয়তমার কাছে খবর পৌঁছে দিতে।
মেঘদূত কাব্যের অনুকরণে সংস্কৃত সাহিত্যে পরবর্তীকালে অর্ধশতাধিক "দূতকাব্য" রচিত হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: পবনদূত, পদাঙ্কদূত, হংসদূত, ভ্রমরদূত, বাতদূত, কোকিলদূত ইত্যাদি।জৈন পুরোহিতগণ এই কাব্যের অনুকরণে মহাপুরুষদের জীবনী ও ধর্মীয় কাহিনী অবলম্বনে কাব্য রচনা করেছেন।
(তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য)




