Web bengali.cri.cn   
চীনের তিন রাষ্ট্র আমলের প্রধানমন্ত্রী জু গো লিয়েন সম্পর্কে
  2013-10-15 16:08:31  cri
জু গো লিয়েনের আরেক নাম খং মিন। তিনি চীনের তিন রাষ্ট্র আমলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। যখন তার বয়স ২৭ বছর, তখন তিনি ছিলেন সু রাষ্ট্রের রাজা লিও বেই-এর প্রধান সহকারী। লিও বেই মারা যাওয়ার পর তিনি সু রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার পরিচালনা করতেন। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের উন্নয়ন অভিযানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি একজন জ্ঞানী ও দূরদর্শী লোক ছিলেন। চীনের ইতিহাসে তিনি একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ও সমরবিদ।

অল্প বয়সে জু গো লিয়েন অনাথ হন। তার চাচা তাকে লালনপালন করেন। কয়েক বছর পর তার চাচাও মারা যান। তখন জু গো লিয়েনের বয়স মাত্র ১৬ বছর। তিনি জমিতে চাষ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়তেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী ছেলে। বই পড়া তার বড় শখ। যে কোনো নতুন জ্ঞান জানতে তার আগ্রহ ছিল। তা ছাড়া, তিনি অন্যদের কাছ থেকে শিখতেও আগ্রহী ছিলেন। সময় পেলে তিনি প্রবীণদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। প্রবীণদের সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যমে তিনি অনেক কিছু শিখে ফেলতেন। একদিন তিনি কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। সবাইকে নিজ নিজ ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছিল। জু গো লিয়েন বন্ধুদেরকে বললেন: 'তোমরা সবাই দক্ষ ব্যক্তি। চেষ্টা করলে স্থানীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হতে পারবেন।' 'তুমি ভবিষ্যতে কী ধরনের কর্মকর্তা হতে পারবে?' বন্ধুদের মধ্যে একজন তাকে জিজ্ঞেস করলেন। জু গো লিয়েন হাসলেন, কিন্তু কোন উত্তর দিলেন না। তখন বন্ধুদের একজন বললেন: 'তোমরা জান না, তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা কী? সে দেশের জন্য বড় অবদান রাখতে চায়। সে ভবিষ্যতে একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হবেন।'

যখন জু গো লিয়েনের বয়স ২৭ বছর তখন তিনি 'পাহাড়ের শুয়ে থাকা ড্রাগন' উপাধি পান। সবাই জানতো যে, তিনি একজন অসাধারণ জ্ঞানী লোক। তার কথা একদিন সু রাজ্যের লিও বেই ও তার সঙ্গীদের কানে পৌঁছাল। একদিন লিও বেই ও তার দু'জন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী জু গো লিয়েনের বাসায় আসলেন। লিও বেই আবেগের সঙ্গে জু গো লিয়েনকে বললেন: 'আমি জানি আমার দক্ষতা কম। কিন্তু আমি দেশের জন্য কিছু করতে চাই। কিন্তু কীভাবে কী করব, সে সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই। আজ আপনার কাছে এসেছি আপনার পরামর্শ শোনার জন্য। আমি আপনার উপদেশ শুনতে চাই।' জু গো লিয়েন আস্তে আস্তে বললেন: 'বতর্মানে আপনার সামনে দু'জন প্রতিদ্বন্দ্বী আছে। একজন চাওছাও, আরেকজন সেনছুয়েন। তাদের শক্তি বেশী। এখন আপনি তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম নন।' তিনি আবার বলেন: 'কিন্তু আপনার আত্মবিশ্বাস থাকা উচিত। তিয়েহু একটি ভাল জায়গা। বর্তমানে আপনি এখানে অনেক কিছু করতে পারেন। প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক স্থাপন করুন। সুযোগ পেলে সবচেয়ে শক্তিশালী চাওছাওয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। তখন দেশের একত্রীকরণের একটি বড় কাজ হতে পারে।' জু গো লিয়েনের কথা শুনে লিও বেই মহা খুশী হলেন। পরে অল্প বয়স্ক জু গো লিয়েন লিও বেই-এর সহকারী হলেন। তার সাহায্যে অবশেষে লিও বেই চাওছাওকে পরাজিত করেন।

সু রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর লিও বেই সু রাজ্যের রাজা হলেন; আর জু গো লিয়েন হলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজ্যের জন্য জু গো লিয়েন লিও বেইকে অনেক সাহায্য করেছেন। লিও বেই রাজা হলেও জু গো লিয়েনকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু দু' বছর পর, লিও বেই মারা যান । তার ১৭ বছর বয়স্ক ছেলে লিও ছান রাজা হলেন। কিন্তু জু গো লিয়েন দেশের সমস্ত ব্যাপার মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা করতেন। লিও বেই মারা যাওয়ার মাত্র এক বছর পর, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের একটি উপজাতি সু রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। বিদ্রোহী দলকে দমন করার জন্য জু গো লিয়েন নিজেই একটি সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিলেন। সু রাজ্যের বাহিনী প্রথমে হ্যান জাতির জমিদারের বিদ্রোহ দমন করল। তারপর সংখ্যালঘু জাতির প্রধান মনহুয়ের বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করল। মনহুয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তাকে ধরলে বিদ্রোহী বাহিনীর মনোবল হ্রাস পাবে। তাই জু গো লিয়েন এই বিদ্রোহী বাহিনীর প্রধানকে ধরার সিদ্ধান্ত নিলেন। পরের দিন জু গো লিয়েন একটি ছোট কৌশলে মনহুয়েকে ধরলেন। তারপর তাকে অতিথির মত আপ্যায়ন করা হল। দু'জন একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করলেন। জু গো লিয়েন মনহুয়েকে সু রাস্ট্রের সেনানিবাস দেখালেন। তারপর তিনি মেনহুয়েকে জিজ্ঞেস করলেন: 'আমাদের সেনানিবাস তোমার কেমন লাগে?' মেনহুয়ে হেসে বলল: 'এর আগে আমি তোমাদের সেনাবাহিনী সম্পর্কে খুব কম জানতাম। সুতরাং আমি তোমাদের কাছে হেরেছি। আজকে তোমাদের সেবাহিনীর অবস্থা দেখে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। যদি সুযোগ পাই, আমার বাহিনী অবশ্যই তোমাদেরকে পরাজিত করবে।' তার কথা শুনে জু গো লিয়েন মেনহুয়েকে ছেড়ে দিলেন। পরের দিন দু'পক্ষের মধ্যে আবার লড়াই হল। কিন্তু মেনহুয়ে আবার ধড়া পড়লেন। জু গো লিয়েন আবার তাকে ছেড়ে দিলেন। এ রকম ঘটনা মোট সাত বার ঘটল। সপ্তম বারে এসে মেনহুয়ে জু গো লিয়েনকে বলল: 'আপনি দেবতার মতো। আজ থেকে আমি আর বিদ্রোহ করবো না। আপনার আচরণে আমি মুগ্ধ হয়েছি।' বিদ্রোহ দমন করা হল। জু গো লিয়েন মেনহুয়েকে স্থানীয় কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিলেন।

উত্তরাঞ্চলে শক্রদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের পরাজিত করা ছিল জু গো লিয়েনের স্বপ্ন। তিনি ইয়াং রাষ্ট্রকে পরাজিত করে ঐক্যবদ্ধ হ্যান রাজবংশ পুন:প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি মনপ্রাণ ঢেলে সু রাষ্ট্রের সেবা করতে লাগলেন। তিনি শস্য উত্পাদন বাড়ানোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দিলেন। তার কড়াকড়ি ব্যবস্থাপনার ফলে সু রাষ্ট্র স্থিতিশীল হল। জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হল। অবশেষে ইয়াং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় একদিন জু গো লিয়েনের নেতৃত্বে সু রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী কয়েক বার জয়লাভ করল। কিন্তু আবার কয়েক বার পরাজিত হল। তার বাহিনীতে মাসু নামে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মারাত্মক ভুলের কারণে সু রাষ্ট্রের বাহিনী পরাজিত হয়েছিল। এই সামরিক কর্মকর্তা অত্যন্ত অহংকারী ছিলেন। যুদ্ধ চলাকালে তিনি জু গো লিয়েনের কথা ভুলে গেলেন। তিনি ঠিক মতো জু গো লিয়েনের নির্দেশ মেনে চলেননি, তা কৌশলও অনুসরণ করেননি। মাসু এর আগে যুদ্ধে অনেক বার জয়লাভ করেছিলেন। কিন্তু জু গো লিয়েন তার এই মারাত্মক ভুল ক্ষমা করলেন না। তিনি মাসুকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। জু গো লিয়েনের এই সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনীর মধ্যে তথা গোটা সু রাষ্ট্রে আলোড়ন সৃষ্টি করল। সেনাবাহিনীর অন্য কর্মকর্তারা সাবধান হয়ে গেলেন যাতে তাদের দ্বারা মাসুর মতও ভুল না হয়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক