1009china
|
"আমার নাম জশুয়া এবং আমি ব্যান্ডের প্রধান গায়ক ও গিটারবাদক। "
২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনশাস্ত্র বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর জশুয়া চীনে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তিনি চীন সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার চীনের আসার কারণ তিনি ব্যাখ্যা করলেন এভাবে:
"আমি দর্শনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেছি। আমি জানি যে, মার্কিনিদের মতো অন্য দেশের মানুষও তার নিজের দেশকে বড় মনে করে। ...আমি অপরিচিত একটি দেশের সংস্কৃতি জানতে চাই। তবে শুধু ভ্রমণ বা ছবির মাধ্যমে একটি দেশের মানুষের অন্তরলোকের অবস্থা উপলব্ধি করা যায় না। কোন দেশকে জানতে হলে, সে-দেশে বসবাস করতে হয়।"
যখন ছেংতু আসেন তখন প্রথমে জশুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০২ সালে তিনি চীনের চি লিন প্রদেশের ছাং চুন শহর ভ্রমণ করেন এবং সেখানে কানাডার মেয়ে হিদারের সঙ্গে পরিচিত হন। তার মতো হিদারও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। জশুয়া সি ছুয়ানে ক্যাম্পিংয়ের ছবি হিদারকে দেখান। তিনি হিদারকে জানান যে, ছেং তু একটি অবকাশশহর এবং সেখানকার সংস্কৃতি ও ঝাল খাবার খুবই আকর্ষণীয়। জশুয়ার রসিকতা ও সংগীতে তার সহজাত প্রতিভা হিদারকে আকর্ষণ করে এবং শেষে তিনি জশুয়ার সঙ্গে ছেংতুতে ফিরে আসেন। হিদার এ প্রসঙ্গে বলেন:
"জশুয়াকে আমার খুবই রসিক মানুষ মনে হয়েছে। তিনি গিটার বাজাতে পছন্দ করেন এবং তার লেখা গানও খুব সুন্দর। এতো সুন্দর গান সৃষ্টি করতে পারা মানুষ আমি প্রথমবারের মতো দেখেছি।"
জশুয়া ও হিদারের অভিন্ন সখ সংগীত। দু'জন দু'জনের প্রেমে পড়ার পর তারা চাইলেন একটি ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে। ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে তারা প্রক্সিমিটি বাটারফ্লাই নামক একটি ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। জশুয়া হন ব্যান্ডের প্রধান গায়ক ও গিটারবাদক এবং হিদার বাসগিটার বাদক।
ব্যান্ডের আরেকজন গিটারবাদক নিউ নিউ ব্যান্ডের নাম কেন প্রক্সিমিটি বাটারফ্লাই রাখা হয়েছে তার কারণ ব্যাখ্যা করেন এভাবে:
"আমাদের সংগীতরীতি বহুমুখী। বাটারফ্লাই শব্দ দিয়ে আমরা বুঝিয়েছি মুক্তিকে এবং সাইকেডেলিক সুরের ভিত্তিতে আমরা নানা রকমের সংগীত সৃষ্টি করি বলে ও প্রতিটি সংগীতের নিজস্ব রঙ আছে বলে আমরা প্রক্সিমিটি শব্দটি ব্যবহার করেছি।"
জশুয়া ও তার ব্যান্ডের প্রতিটি গান শ্রোতাদেরকে একটি গল্প বলে। তারা সংগীতের মাধ্যমে অন্তর্জগতের কথা প্রকাশ করেন। জশুয়া ও হিদার তাদের সংগীতে চীনা উপাদানও যোগ করতে চান।
এখন যে সংগীত আপনারা শুনছেন তার নাম 'রাজা'। এ গানে প্রাচীনকালে চীনা অশ্বারোহী সৈন্যের জীবন ও যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্য বনর্ণা করা হয়েছে।
চীনে আসার আগে জশুয়া একজন আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে গুয়াতেমালায় কাজ করেছেন। চীনেও তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। ২০০৮ সালে সি ছুয়ান প্রদেশের ওয়েন ছুয়ান জেলায় ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। তখন জশুয়া ও তার ব্যান্ডের সদস্যরা ভূমিকম্পকবলিত অঞ্চলে খাদ্য, কাপড় ও তাঁবু পাঠিয়েছিলেন।
২০০৯ সালে প্রক্সিমিটি বাটারফ্লাই নতুন অ্যালবাম প্রকাশ করে এবং ভূমিকম্পে নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশে একটি চীনা ভাষার গান গায়।
প্রক্সিমিটি বাটারফ্লাই গত ১০ বছরে ৬টি অ্যালবাম প্রকাশ করেছে এবং তাদের আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলো দর্শক-শ্রোতাদের কাছে বেশ সমাদৃত হয়ে আসছে। জশুয়া মনে করেন ছেং তু একটি ধীর ছন্দের শহর। এখানে তার ভালো লাগে। তিনি মনে করেন ছেং তুর পরিবেশ ব্যান্ড সংগীতের জন্য অনুকূল। তিনি বলেন
"পেইচিং ও ছুং ছিংসহ বড় শহরে মানুষ খুবই বেশি এবং সবাই মানুষ খুব ব্যস্ত। তবে ছেং তুতে মানুষ জীবন উপভোগ করে। তারা নাঁচে, মাচিয়াং খেলে। জীবনের প্রতি ছেংতু মানুষের মনোভাব আমার মনের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে এবং আমি এ জীবন পছন্দ করি।"
জশুয়া ও হিদার ছেং তুতে ১০ বছরের মতো বসবাস করছেন এবং এটি এখন তাদের দ্বিতীয় জন্মস্থান। তাদের একটি মেয়ে এবং দুটি যমজ ছেলে আছে। পাঁচ জনের এ পরিবার সুখী জীপন যাপন করছে। জশুয়া জানালেন, তারা সারা জীবন ছেনতুতে বসবাস করতে চান। তিনি বলেন:
"আমি চাই মানুষ আমাদের গান শুনুক। এর থেকে কতো আয় হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। আমার মনে হয়, সংগীতের পথে চলাই আমার জন্য সবচেয়ে ভাল একটি ব্যাপার।"