Web bengali.cri.cn   
চীনের ছিং রাজবংশ আমলের রাজা খ্যাংশি সম্পর্কে
  2013-10-08 19:28:30  cri
চীনের ছিং রাজবংশের শাসন শুরু হওয়ার পর একজন অত্যন্ত যোগ্য রাজার উদ্ভব ঘটে। তার নাম খ্যাংশি। পরে তিনি 'খ্যাংশি রাজা' নামে আখ্যায়িত হন। যখন তার বছর ৮ বছর তখন তাকে সিংহাসনে বসানো হয়। তিনি ৬০ বছর দেশ শাসন করেছেন। চীনের ইতিহাসে তিনিই সবচে দীর্ঘ সময় ধরে রাজা ছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে দেশের ঐক্য রক্ষা করতেন। বিদেশের আক্রমণ প্রতিরোধ করা এবং দেশকে সমৃদ্ধ করে তোলার জন্য তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। তিনি একজন বিজ্ঞানমনষ্ক লোক ছিলেন। জীবনে তিনি অনেক বই পড়েছেন। উত্পাদন ও সংস্কৃতির উন্নয়নে তার সেই জ্ঞান কাজে লেগেছিল।

ছোটবেলা থেকে খ্যাংশি বই পড়তে পছন্দ করতেন। তিনি নানা ধরনের বই পড়তে আগ্রহী ছিলেন। তিনি কেবল বই পড়তেন তা নয়, পড়ার পাশাপাশি চিন্তাও করতেন। তার দু'জন গৃহশিক্ষক ছিলেন। একজন গৃহশিক্ষক তাকে পড়াতেন, আরেকজন শিক্ষক কেবল তার লেখাগুলো চেক করতেন। অবশ্যই দু'জন গৃহশিক্ষকের শিক্ষাদান পদ্ধতিও ছিল কড়াকড়ি। খ্যাংশি ছিলেন একজন মেধাবী ছেলে। যে কোন কিছু তিনি খুব তাড়াতাড়ি শিখতে পারতেন। কোন বিষয় মুখস্ত করতে চাইলে দু' তিন বার পড়লে সব মুখস্ত করে ফেলতে পারতেন।

যখন খ্যাংশির বয়স মাত্র ৮ বছর তখন তাকে সিংহাসনে বসানো হয়। তার বাবা শিয়েনজি মারা যাওয়ার আগে চারজন মন্ত্রীকে তার রোগশয্যার সামনে ডেকে পাঠালেন। তিনি চারজন মন্ত্রীকে খ্যাংশি রাজাকে সাহায্য করার অনুরোধ করলেন। শিয়েনজি মারা যাওয়ার পর আসলে এ চারজন মন্ত্রীই ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতেন। কিন্তু চার জনের মধ্যে তিনজনের বয়সও বেশী । সুতরাং কেবল আওবেই নামক মন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতেন। তিনি একসময় সেনাবাহিনীতে ছিলেন। একজন জেনারেল হিসেবে তিনি অনেক বার যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন এবং অনেক বার জয়লাভ করেছেন। সুতরাং তিনি অত্যন্ত অহংকারী ছিলেন। তার কথা না-শুনলে তিনি ক্ষেপে যেতেন। এমনকি ক্ষেপে গিয়ে কখনো কখনো হত্যাকাণ্ডও ঘটাতেন। তখন খ্যাংশি রাজার বয়স কম। আওবেইর ওপর তার কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আওবেই খ্যাংশি রাজাকে অবজ্ঞার চোখে দেখতেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যাহার করতেন। যেমন, তিনি অনেক সেকেলে নীতি আবার চালু করতে শুরু করলেন।

সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছিল। খ্যাংশি রাজার বয়স ১৪ বছর হল। সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী, তিনি নিজেই দেশের সকল ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। কিন্তু আওবেই আগের মতোই রাজাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেন। তবে খ্যাংশির বয়স অল্প হলেও সাহস বেশী ছিল। তিনি আওবেইয়ের কথা শুনলেন না। সুতরাং আওবেই মনে মনে খ্যাংশিকে ঘৃণা করতে শুরু করেন। তিনি এমনকি খ্যাংশি রাজাকে গোপনে হত্যার পরিকল্পনাও করলেন। খ্যাংশি রাজা আওবেইর মতলব টের পেলেন। তিনি তার সমবয়সী বেশ কয়েকজন যুবককে তার রক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলেন। সময় পেলে তিনি তাদের সঙ্গে উসু চর্চা করতেন। কয়েক মাস পর তারা সবাই খুব স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠলেন। খ্যাংশি তার মনের কথা তাদেরকে খুলে বলে দিলেন। আওবেইকে গ্রেফতার করার পরিকল্পনার কথা শুনে তার রক্ষকরা খুশী হলেন। তারা প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে শুরু করলেন।

একদিন খ্যাংশি রাজা আওবেইকে ডেকে পাঠালেন। আগের মত আওবেই অহংকারের সঙ্গে মাথা উঁচু করে খ্যাংশি রাজার সামনে আসলেন। কিন্তু খ্যাংশি রাজার রক্ষকরা আওবেইকে ধরে ফেললেন। আওবেই চিত্কার করে বললেন: 'তোমরা কী করতে চাও?'। রক্ষকরা একসঙ্গে বললেন: 'রাজার নির্দেশে তোমাকে গ্রেফতার করছিল।' রাজদরবারের অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এ খবর শুনে তার প্রশংসা করলেন। তারা রাজাকে আওবেইকে মেরে ফেলার অনুরোধ করলেন। কিন্তু খ্যাংশি রাজা বললেন: 'আওবেই নিশ্চয়ই বড় অপরাধ করেছেন। কিন্তু তিনি একসময় যুদ্ধে বেশ কয়েক বার জয়লাভ করেছেন। দেশের জন্য তার অবদানও ছিল। সুতরাং তিনি মৃত্যুদন্ড থেকে রেহাই পেতে পারেন।' খ্যাংশি আওবেইকে কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ দিলেন। দেশের ওপর খ্যাংশি রাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ কায়েম হল।

কিন্তু কিছুদিন পর, কুখবর আসল। উ সেন গুয়েই নামক একজন জেনারেল বিদ্রোহ ঘোষণা করল। এই খবর রাজদরবারে পৌছার পর তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হল। কোন কোন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মনে করেন, বিদ্রোহী দলকে দমন করার জন্য সৈন্য পাঠানো উচিত। কোন কোন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা মত প্রকাশ করলেন যে, বিদ্রোহী দল খুব শক্তিশালী। বিদ্রোহী দলের সঙ্গে আপস করা ভাল। বিশ বছর বয়স্ক রাজা খ্যাংশি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিতর্ক শুনলেন। তাদের বিতর্ক শোনার পাশাপাশি তিনি মনে মনে ভাবছিলেন। অবশেষে তিনি বললেন: 'উ সেন গুয়েইয়ের বিদ্রোহী দল শক্তিশালী তা আমি জানি। তিনি এক সময় দেশের জন্য কিছুটা অবদান রেখেছেন তাও বটে। কিন্তু এখন তিনি একজন বিদ্রোহী দলের নেতা। তার সঙ্গে আমরা কোন দিন আপস করবো না। একমাত্র উপায় হল তার বিদ্রোহী দলকে দমন করা।'

বিদ্রোহী দলকে দমন করার জন্য রাজা নিজেই লড়াইয়ের পরিকল্পনা প্রণয়ন করলেন। তারপর তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সৈন্য পাঠালেন বিদ্রোহী দলকে দমন করার জন্য। খ্যাংশি রাজা কড়াকড়ি নিয়মও ঘোষণা করেন। তিনি রাজদরবারের সৈন্যদের জন্য কড়াকড়ি নিয়মবিধান প্রণয়ন করলেন। এই নিয়ম অনুযায়ী বিদ্রোহী দলের সঙ্গে লড়াই করার সময় যারা জনসাধারণের ধন-সম্পদ দখল করবে তাদের মারাত্মক শাস্তি পেতে হবে। ছিং রাজবংশের সেনাবাহিনী অবশেষে উ সেন গুয়েইয়ের বিদ্রোহী বাহিনীকে পরাজিত করল। বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই চলেছিল প্রায় আট বছর ধরে।

প্রাচীনকাল থেকেই হুওয়াংহো ও হুয়ে নদীর পানিতে বন্যার সৃষ্টি হত। সুতরাং খ্যাংশি রাজা হুওয়াংহো নদীতে সংস্কার কাজের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি মাঝে মাঝে নদীর দু'পার পরিদর্শন করতেন। তার নির্দেশে সারা দেশে জলসেচের কাজ শুরু হল। রাজার মনোযোগের কারণে হুওয়াংহো ও হুয়ে নদীর দু'পারের সংস্কার কাজ ঠিক মতো বাস্তবায়িত হল। এই সংস্কার কাজে অযোগ্য স্থানীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই তিনি পদচ্যুত করেন।

তার শাসনামলে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি ঘটেছিল। দেশের ঐক্য রক্ষা করা, বিদেশের আক্রমণ প্রতিরোধে এবং অর্থনীতির উন্নয়নে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। চীনের ইতিহাসে তিনি ছিলেন সবচেয়ে সফল রাজা। তিনি ৬১ বছর ধরে সিংহাসনে ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক