Web bengali.cri.cn   
কুয়াংচৌ শহরে বসবাসরত আরবদের জীবন
  2013-09-30 20:00:11  cri

দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশে ব্যবসায়ে নিযুক্ত আরবদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আরবি-শৈলী রেস্তোঁরা, মিষ্টির দোকান আর কফিখানার সংখ্যাও যথাক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরবরা প্রধানত কুয়াংচৌয়ের সিয়াওপেই রোডে থাকে। ফলে এখন স্থানীয় লোকেরা সিয়াওপেই রোডকে 'আরব সড়ক' বলে ডাকে।

কুয়াংচৌ থেকে চল্লিশ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত কুয়াংতোং প্রদেশের তৃতীয় শহর ফোশান হচ্ছে চীনের ঐতিহ্যবাহী ইয়ু অপেরার জন্মস্থান। ইয়েমেন থেকে আগত যুবক ২১ বছর বয়সী খালিফা বাবার সঙ্গে ফোশানে সিরামিক টাইলসের ব্যবসা করেন। তাঁর বাবা ফোশানে ১৫ বছর ধরে আছেন এবং এখানকার আরবদের মধ্যে 'সিরামিকের রাজা' বলে গণ্য হন। প্রতি বছর তাঁরা দশ বারো-টন চীনা সিরামিক টাইলস ইয়েমেনে রপ্তানি করেন।

ইয়েমেনের যুবক খালিফা

ব্যবসার জন্য ফোশানকে বাছাই করার কারণ ব্যাখ্যা করতে খালিফা বলেন, "যদি আপনি ইলেকট্রনিক দ্রব্যের ব্যবসা করতে চান, শেনচেন খুব কাছে। যদি আপনি নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসা করতে চান, তোংকুয়ান পাশেই আছে। যদি আপনি পোশাকের ব্যবসা করতে চান, এখান থেকে কুয়াংচৌ যেতে গাড়িতে মাত্র আধা ঘন্টা সময় লাগে। ফোশান হচ্ছে কুয়াংতোং প্রদেশের কেন্দ্র। এখান থেকে সব জায়গায় যাওয়া খুব সুবিধাজনক।"

ফোশানে আসার প্রথম দিকে খালিফার জন্য সবচেয়ে কঠিন বিষয় ছিল ক্যান্টনিজ ভাষা। তবে মেধাবী খালিফা শিগগির স্থানীয় জীবনযাত্রায় মিশে যেতে পেরেছেন এবং অনেক চীনার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছেন।

খালিফা কেবল বাবার কোম্পানিতে কাজ করে তৃপ্ত নন। তিনি ফোশানে নিজের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে, নিজের গাড়ি ও বাড়ি কিনতে চান। এমন কি তিনি চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘটক অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠতে চান। যদি সুযোগ পান, তিনি একজন সুন্দরী চীনা মেয়ের হাত ধরে একসঙ্গে সুন্দর ভবিষ্যত সৃষ্টি করতে চান।

সময় থাকলে খালিফা ফোশানের উপাসনালয়ে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে পথপ্রদর্শক হন। তিনি বলেন, এ কাজ করার সময় চীনাভাষা চর্চা করার পাশাপাশি নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়।

আপনি যদি কখনো ফোশানে ভ্রমণ করতে যান, তাহলে একজন কালো, লম্বা, হাসিমুখের ইয়েমেনি পথপ্রদর্শকের সঙ্গে আপনার দেখা হতে পারে। তিনি চীনা ভাষায় আপনার কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে বলবেন, "আপনি ভালো আছেন? আমার নাম খালিফা।"

শেনচেন হচ্ছে চীনের প্রথম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের জানালা। দ্রুতগতিতে বিকশিত এ আন্তর্জাতিকায়ন শহরটি আরো বেশি আরবদের আকর্ষণ করছে।

'চীনের 'ইলেকট্রানিক দ্রব্যের প্রথম সড়ক' নামে সুপরিচিত শেনচেনের হুয়াছিয়াংপেইতে কয়েক শ' আরব ব্যবসায়ী থাকেন। তারা চীনের মোবাইল ফোন মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করেন। তাদের প্রচেষ্টায় শেনচেন আর মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে এক নতুন 'রেমশপথ' প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

খালিফা বলেন, শেনচেন চীনের যে কোনো শহরের চেয়ে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। এখানকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজের দক্ষতা বেশি। এখানে আসলে অল্প সময়ের মধ্যে কোনো না কোনো নতুন প্রকল্প ও নতুন ধারণা আসে।

ভালোভাবে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে শেনচেনে বসবাসরত আরব ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে শেনচেন আরব ব্যবসায়ীরা ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিবীয় আদেল আলতালবি। তিনি ১৫ বছর ধরে শেনচেনে বাস করছেন। আলতালবি বলেন, এখানকার আরবরা চীনাদের সাথে ভালো মিশে গেছেন। চীনারা বিদেশিদের সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ আর জীবনযাপনের পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। তাঁরা চীনাদের সঙ্গে ভাইয়ের মতো ব্যবহার করেন।

আলতালবি বলেন, "এখানকার মসজিদে প্রতি শুক্রবার আরবদের জন্য জুমার নামাজ আয়োজন করা হয়। এ শহরে অনেক আরব রেঁস্তোরায় আছে। এখানকার জনগণ দয়ালু আর বন্ধুভাবাপন্ন। ২০০৮ সালে সিয়ানছুয়ানের ভূমিকম্পের পর এখানকার আরব ব্যবসায়ীরা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে দুর্গতদের জন্য অনুদান সংগ্রহ করেন। তাঁরা ৫০ বিলিয়ন ইউয়ান দুর্গতদেরকে অনুদান হিসেবে দিয়েছেন। আমরা নিজের কাজের মধ্য দিয়ে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।"

অসম্পূর্ণ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন কুয়াংতোং প্রদেশে প্রায় ১ বিলিয়ন আরব থাকেন। তাঁরা কুয়াংতোংয়ের জন্য সুন্দর বাসা নির্মাণের পাশাপাশি কুয়াংতোংকে নিজের জন্মস্থান হিসেবে গণ্য করছেন। তারা এ জন্মস্থানে নিজের অবদান রেখে চলেছেন। (ইয়ু/এসআর)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক