Web bengali.cri.cn   
চীনের মিং রাজবংশ আমলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হাই রি সম্পর্কে
  2013-09-24 16:44:23  cri
হাই রি চীনের মিং রাজবংশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেন বতর্মান হাইনান প্রদেশের হুই জাতির এক পরিবারে। তিনি একসময় চীনের ছিং রাজবংশ আমলের কর্মকর্তাও ছিলেন। তিনি সরল জীবনযাপন করতেন। তিনি কখনও তার ওপরওয়ালাদেরকে তোষামোদ করতেন না। তিনি বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনে যেতেন। স্থানীয় জনসাধারণের ওপর তার মনোযোগ অত্যন্ত বেশী ছিল। পরে তিনি সরাসরি তত্কালীন রাজার সমালোচনা করায় তাকে পদচ্যুত করা হয় এব দেওয়া হয় কারাদণ্ড। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তিনি আগের মতো জনসাধারণের কল্যাণে কাজ করতে লাগলেন। তা ছাড়া তিনি কৃষির উত্পাদন বৃদ্ধির দিকে বেশী মনোযোগ দিতেন। একসময় তিনি একটি জায়গার স্থানীয় কর্মকর্তার পদে নিয়োগ পান। স্থানীয় কর্মকর্তা হিসেবে তিনি স্থানীয় জলসেচের দিকে গুরুত্ব দিতেন। চীনের সং রাজবংশ আমলের প্রধানমন্ত্রী বাও জেনের সঙ্গে অনেকে তার তুলনা করেন।

ছোটবেলায় হাই রি মেধাবী ছেলে। যখন তার বয়স ৬ বছর তখন তিনি বই পড়তে শুরু করেন। এতে তার জ্ঞান আস্তে আস্তে সমৃদ্ধ হয়। যখন তার বয়স ১৯ বছর তখন তিনি রাজদরবারের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। ফলে তিনি তত্কালীন ফুজিয়েনের নানপিন জেলার কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। তার দায়িত্বে ছিল এ জেলার শিক্ষাব্যবস্থা তদারক করা। তার কার্যমেয়াদে তিনি প্রত্যেক স্কুল ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি মাঝেমাঝে শিক্ষার্থীদের সামনে বলতেন: 'দেশকে সমৃদ্ধ করে তোলার জন্য তোমাদের নিষ্ঠার সঙ্গে পড়াশুনা করা উচিত। সবসময় মনে রাখতে হবে যে, কোনোদিন দেশের ক্ষতি করা যাবে না। তা ছাড়া, মনে রাখতে হবে কোনোদিন অকারণে অন্যদের সামনে মাথা নিচু করা যাবে না।' একদিন জেলার গভর্নর ও তার সঙ্গিরা তার এলাকার শিক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করতে আসলেন। হাই রির পাশে দু'জন শিক্ষার্থী হাঁটু গেড়ে বসল। অন্যারাও হাঁটু গেড়ে বসতে শুরু করল। কেবল হাই রিই তাদেরকে ভদ্রভাবে সালাম করলেন। গর্ভনর হাই রির আচরণ দেখে মনে মনে অসন্তুষ্ট হলেন। তার পাশের একজন কর্মকর্তা তাকে হাই রির নাম বললেন। গভর্নর সঙ্গে সঙ্গে হাই রিকে জিজ্ঞেস করলেন: 'তুমি কোথা থেকে এসেছ?। মনে হয় তোমার হাঁটুর অসুবিধা আছে। নইলে তুমিও তাদের মতো আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে। তাড়াতাড়ি তোমার হাঁটুর চিকিত্সা করাও।' হাই রি গভর্নরের কথা বুঝতে পারলেন। কিছুদিন পর তিনি পদত্যাগ করেন।

পরে হাই রি জেচিয়াং প্রদেশের ছিংআন জেলার গর্ভনর হিসেবে নিয়োগ পেলেন। এ খবর শুনে বিদায়ী গর্ভনর হাই রির জন্য ভোজসভা ও উপহারের প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। যেদিন হাই রি আসার কথা ছিল, সেদিন বিদায়ী গভর্নর তার পাশের একজন কর্মকতাকে জিজ্ঞেস করলেন: 'তুমি কি জান নতুন গভর্নর কখন আসবেন?' এই কর্মকর্তা উত্তর দিলেন: 'নতুন নভর্নরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আপনার নির্দেশ অনুযায়ী আমি কয়েক জন লোককে রাস্তায় পাঠিয়েছি।' কিন্তু এই বিদায়ী গভর্নর মনে মনে ভাবছিলেন: 'এতক্ষণে তো তার চলে আসার কথা। এখনো আসছেন না কেন?' হাই রির চরিত্র বিদায়ী গভর্নর ভালভাবে জানতেন। কিন্তু চাইছিলেন বিদায় নেওয়ার আগে হাই রির সামনে ভাল কিছু করে দেখাতে। তিনি অন্যদের বললেন: 'তোমরা ভালভাবে ভোজসভার প্রস্তুতিমূলক কাজ চেক কর। তা ছাড়া আমার পক্ষে হাই রির জন্য একটি মূল্যবান উপহার কিনবে। আমি বাইরে একটু বেড়াতে যাবো।' ঠিক সে-সময় একজন লোক গভর্নরের সামনে এসে খবর দিল: " নতুন গভর্নর হাই রি আসছেন।" " আহা, কেন আগে থেকে কিছু না-জানিয়ে তিনি হুট করে চলে এলেন!?" গভর্নর একটু অবাক হয়ে গেলেন। আসলে হাই রি দু'দিন আগেই জেলায় এসেছিলেন। তিনি প্রথমে কয়েকটি জায়গা পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি জেনেছিলেন যে, বন্যার কারণে গ্রামাঞ্চলে অনেক কৃষকের বাড়িঘর ধসে পড়েছে। অনেক মানুষ জীবিকার জন্য জন্মস্থান ত্যাগ করে অন্য জায়গায় যেতে বাধ্য হয়েছে। তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন যে, স্থানীয় কর্মকর্তারা ত্রাণসামগ্রী দখল করছে। এ দৃশ্য দেখে হাই রি খুব ক্ষেপে গেলেন। তিনি তার পাশের সঙ্গীদের বললেন: 'স্থানীয় জনসাধারণের জীবন এত শোচনীয়। কিন্তু স্থানীয় কর্মকর্তারা তাদের জন্য কিছু করেননি। এই সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের অবিলম্বে জেলার দফতরে যাওয়া উচিত।' হাই রিকে দেখে জেলার বিদায়ী গভর্নর সালাম করলেন। কিন্তু তার সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করার মন হাই রির ছিল না। তিনি বিদায়ী গভর্নরকে সব ব্যাপার খুলে বললেন। তারপর তিনি আবার বললেন: 'অবিলম্বে দূর্গত এলাকায় খাদ্য পাঠাতে হবে। কাউকে খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করতে দেওয়া হবে না। যারা অন্যত্র চলে গেছে, তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। পতিত জমি আবাদ করতে হবে।' বিদায়ী নগর্নর হাই রির পরামর্শ গ্রহণ করলেন। হাই রির নাম দ্রুত স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। সবাই তাকে খুব শ্রদ্ধা করতে শুরু করলেন।

পরে হাই রি রাজদরবারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পদে নিয়োগ পান। একবার তিনি যখন দক্ষিণ চীনের একটি জায়গা পরিদর্শন করছিলেন, তখন সেখানে বন্যা দেখা দিল। তিনি স্বচক্ষে দেখলেন বন্যার তাণ্ডব। এ দৃশ্য দেশে তিনি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। তিনি মনে মনে জলসেচ প্রকল্প গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। পরে তার পরামর্শে সারা দেশে জলসেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হল। সে সময় হাই রি একটানা বেশ কয়েক মাস রাজদরবারের বাইরে থাকলেন। তিনি কেবল বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করে বেড়ালেন। তিনি মাঝেমাঝে শ্রমজীবিদের সঙ্গে খেতেন ও ঘুমাতেন। তার আচরণ ব্যাপকভাবে জনসাধারণকে উত্সাহিত করল। আট মাসের মধ্যে দেশের জলসেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ সম্পন্ন হল। এতে হাই রির অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

মিং রাজবংশ আমলের শেষ দিকে রাজা জু হো ছন বার্ধক্যে উপনীত হন এবং এসময় তিনি রাজদরবারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তেমন একটা পরামর্শ করতেন না। তিনি সারাদিন আমোদ-প্রমোদে লিপ্ত থাকতেন। এ দৃশ্য দেখে হাই রির মন অত্যন্ত খারাপ হয়ে গেল। তিনি রাজাকে একটি চিঠি লিখলেন। চিঠিতে তিনি রাজার আচরণের সমালোচনা করলেন। রাজা চিঠি পেয়ে ক্ষেপে গেলেন। তিনি হাই রিকে কর্মকর্তার পদ থেকে সরিয়ে কারাগারে পাঠালেন। কিন্তু রাজদরবারের অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হাই রির সাহসের খুব প্রশংসা করলেন। রাজাকে সমালোচনা করে লেখা চিঠির কথা দ্রুত জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। সবাই তাকে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিছুদিন পর রাজা মারা গেলেন; হাই রিও মুক্তি পেলেন। নতুন রাজা আবার হাই রিকে রাজদরবারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পদে নিয়োগ দিলেন।

তার কার্যমেয়াদে হাই রি দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে লড়াই করেছেন। জনসাধারণের জীবিকার কথাই তিনি সবচে বেশি চিন্তা করতেন। চীনের সামন্ততান্ত্রিক সমাজে হাই রির মতো কর্মকর্তা খুবই কম ছিল। সারা জীবনে তিনি জনসাধারণের জন্য অনেক ভাল কাজ করেছেন। (চিয়াং/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক