Web bengali.cri.cn   
পেইচিংয়ে বসবাসকারী শ্রীলংকা তরুণ উইশ-গ্যামেজ
  2013-09-18 15:45:51  cri


শ্রীলংকা থেকে আগত উইশ এখন পেইচিংয়ে একজন ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। ১০ বছর ধরে তিনি এ কাজ করছেন। তবে প্রথমে যখন তিনি পেইচিংয়ে আসেন তখন তিনি ব্যবসা করতে পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি বলেন:

"প্রথমে আমি ব্যবসা করতে চেয়েছিলাম। তবে এটা সহজ কাজ নয় এবং তখন আমি ভালভাবে চীনা ভাষা বলতেও পারতাম না।"

বড় ভাইয়ের উত্সাহে ২০০২ সালে চীনে আসেন উইশ। তার বড় ভাই চীনা কুংফু পছন্দ করেন এবং ১৯৯৮ সালে ছাত্রবৃত্তি নিয়ে চীনে লেখাপড়া করেন। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তার বড় ভাই এখন শাংহাইয়ে গায়ক ও অভিনেতা হিসেবে কাজ করেন।

চীনে বড় ভাইয়ের সাফল্য দেখে উইশ চীনে আসতে চান। প্রথমে তিনি চীনে ব্যবসা করেন এবং পরে আবিষ্কার করেন যে, তিনি চীনা ভাষা বুঝতে পারেন না, যেটা তার ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই তিনি ব্যবসা ছেড়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। উইশ বলেন, তার পরিবারের প্রভাবে তিনি শিক্ষক হতে চান। তিনি বলেন:

"আমার নানা-নানী শিক্ষক এবং আমার দাদাও একজন অধ্যাপক। আমার মা একটি স্কুলের প্রধান এবং বাবাও স্কুলে কাজ করেন। আমি শিক্ষক হতে পছন্দ করি এবং স্কুলে আমার চেয়ে ছোট ছাত্রছাত্রীদের শেখাতাম আমি।"

ছোটবেলায় উইশ মা-বাবার সাথে কানাডায় বাস করতেন। তাই তিনি ভাল ইংরেজি বলতে পারেন। নিজের ইংরেজি মানের ব্যাপারে উইশ আত্মপ্রত্যয়শীল। তিনি বলেন:

"যখন স্কুলে ছিলাম, সারা ক্লাসে আমার ইংরেজি সবচেয়ে ভাল ছিল এবং প্রতিবার পরীক্ষায় আমি পূর্ণ নম্বর পেতাম।"

ইংরেজির ওপর তার দখল ও আগ্রহে তিনি পেইচিংয়ে একটি ইংরেজি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে কাজ পান। অনেক বছর ধরে চীনা শিশুদের ইংরেজি শিখানোর অভিজ্ঞতার ওপর আলোকপাত করেন উইশ। তার আগ্রহ সবচেয়ে ভাল শিক্ষক হওয়ার। ইংরেজির প্রতি শিশুদের আগ্রহ গড়ে তোলার জন্য তিনি অনেক প্রচেষ্টা চালান। উইশ বলেন:

"আমি ক্লাসে সবসময় গেমস, বিতর্ক ও অভিনয়ের আয়োজন করি। এর মাধ্যমে শিশুরা খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়া করতে পারে। যতক্ষণ তাদের আগ্রহ থাকে ততক্ষণ তারা দ্রুত শিখতে পারে।"

স্কুলে উইশের পেশাদারি মনোভাব, হাস্যরস ও অনর্গল চীনা ভাষায় কথা বলার কারণে তার ছাত্রছাত্রী ও তাদের মা-বাবারা তাকে খুব পছন্দ করে। তার প্রতিষ্ঠানের মালিকও তাকে বিশ্বাস করেন বলে তিনি এখন নতুন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেন। উইশ বলেন:

"আমি শিশু পড়ানো ছাড়া আমাদের নতুন শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণ দেই। তারা যে দেশ থেকেই আসুন না কেন, আমি তাদেরকে শিখাই কীভাবে একজন ভাল শিক্ষক হওয়া এবং কীভাবে শিশুদের প্রিয় হওয়া যায়।"

উইশ বলেন, গত কয়েক বছরে চীনে ইংরেজি শিক্ষায় দ্রুত উন্নতি হয়েছে। প্রথম দিকে নানা পর্যায়ের অনেক ইংরেজি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় অনেক নিম্নমানের প্রতিষ্ঠান সরে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে, তবে প্রশিক্ষণের মান বেড়েছে। উইশ বলেন:

"আগে যে কোনো একজন বিদেশি চীনে ইংরেজি শিখাতে পারতেন। তবে বর্তমানে তুমি যদি একজন বিদেশি ইংরেজি শিক্ষক হতে চাও, তাহলে আন্তর্জাতিক শিক্ষকের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তাছাড়া অভিজ্ঞতাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগের চেয়ে এখন এ বিষয়টি অনেক কঠোর হয়েছে।"

ইংরেজি প্রশিক্ষণ খাতের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে শিশু ও তাদের মা-বাবারা প্রতিষ্ঠানের মানের ওপর গুরুত্ব দেয়। উইশ মনে করেন, পেইচিংয়ে ইংরেজি শিক্ষা ভাল পর্যায়ে রয়েছে।

এ খাতের উন্নয়ন দেখে ভবিষ্যতের ব্যাপারে উইশের আস্থাও বেড়েছে। গত জানুয়ারি মাসে তিনি চীনের সামাজিক নিশ্চয়তা-বিধান ব্যবস্থায় যোগ দেন। এর ফলে চিকিত্সা বিষয়ে তিনি নিশ্চয়তা পাবেন। গত বছর তার মেয়ের জন্ম হয়েছে এবং তার প্রতিষ্ঠান তার মেয়েকে উপহার হিসেবে একটি সামাজিক বিমার গ্রাহক করে দিয়েছে। উইশ বলেন:

"সামাজিক বিমার গ্রাহক হওয়ার পর যদি আমার মেয়ে কোনো চিকিত্সা নেয়, তাহলে ৫০ শতাংশ খরচ সামাজিক বিমা থেকে পাবে।"

মেয়ের বাবা হওয়ায় উইশ অত্যন্ত আনন্দিত। সামাজিক বিমার কল্যাণে পেইচিংয়ে তিনি ও তার পরিবার ভালভাবে বসবাস করতে পারবে। উইশের স্ত্রী মেং হাও ইউয়ু একজন চীনা এবং তিনি রত্নমণি-বিষয়ক কাজ করেন। মেং হাও ইউয়ু বলেন, স্বামীর কাজকে সমর্থন করেন তিনি। শিক্ষক হিসেবে উইশের কাজ বেশ স্থিতিশীল এবং মেয়ের সঙ্গে অনেক সময় থাকতে পারেন তিনি।

মেং হাও ইউয়ু জানান, ভবিষ্যতে তিনি স্বামীর সঙ্গে শিক্ষা-বিষয়ক কাজ করতে চান। তারা নিজেরা প্রশিক্ষণ-প্রতিষ্ঠান গড়তে চান এবং মেং হাও ইউয়ু নিজেও বিদেশি ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক বলে স্বামীকে সাহায্য করতে পারবেন।

যে ক্ষেত্রেই কাজ করেন না কেন, উইশ ও তার পরিবার পেইচিংয়ে থাকবেন। কারণ পেইচিংয়েই তার স্বপ্ন শুরু হয় এবং তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে এখানেই নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন।

প্রিয় শ্রোতা, এখন যে গানটি আপনারা শুনছেন সেটির শিরোনাম 'চীনা স্বপ্ন'। ২০১১ সালে উইশের বড় ভাই একটি চীনা অ্যালবাম প্রকাশ করেন এবং এটা সে অ্যালবামের প্রধান গান। উইশের বড় ভাই নিজেই গানের কথা রচনা করেন।

চীনা স্বপ্ন শুধু উইশ বা তার বড় ভাইয়ের নয়। চীনে সংগ্রাম চালাচ্ছেন এমন প্রতিটি ব্যক্তির মনে চীনা স্বপ্ন আছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক