Web bengali.cri.cn   
মুক্তার কথা-০৭ সেপ্টেম্বর
  2013-09-12 20:01:40  cri


মু: সুপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন সুদূর পেইচিং থেকে সম্প্রচারিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান 'মুক্তার কথা'। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু মুক্তা।

আ: আর সঙ্গে আছি আমি আলিমুল হক। বন্ধুরা, "আমার চীনের গল্প" প্রতিযোগিতা আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ার পর অনেক শ্রোতা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং লেখা পাঠিয়েছেন। আজকের অনুষ্ঠান থেকে আমরা আপনাদের সেই লেখাগুলো পড়ে শোনাবো। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অল ইন্ডিয়া সিআরআই লিসনার্স এসোশিয়েশনের সভাপতি বিধান চন্দ্র স্যানাল তাঁর রচনা লিখেছেন,...

মু: আমরা বন্ধু স্যানালকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, আরো বেশি শ্রোতা চীনের গল্প বা আপনাদের চোখে চীন রচনায় লেখে আমাদেরকে পাঠাবেন। এবারের প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের চীনে আসার সুযোগ হবে।

আ: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার নিউ হরাইজন রেডিও লিসনার্স ক্লাবের সম্পাদক রবিশংকর বসু "চীনের সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ" নামের একটি লেখা পাঠিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, "এই গল্প কোনো চীনা রূপকথার গল্প নয়। এই গল্প ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করা এক বেকার যুবকের বুকের মাঝে লালিত দীর্ঘ ২৭ বছরের স্বপ্ন পূরণের গল্প। আর এই গল্প যেখানে সত্যি সেইখানে আছে লাল আলোয় দেদীপ্যমান চীনের রাজধানী পেইচিং মহানগরী আর তার পথে পথে ঘুরে বেড়ানো আমার সাত দিনের চীন ভ্রমনের স্বপ্নময় স্মৃতি যা আমার জীবনের স্মৃতির পাতায় চির-অমলিন, চির-জাগরূক। আমার এই গল্পের প্রতিপাদ্য চীনের পাঁচ হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস নয়। সাত দিনের পেইচিংয়ের পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর ক্ষনিক পরিসরে পেইচিং মহানগরীর অসাধারণ বৈচিত্র্যময় চালচিত্র এবং তার সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক আবহে বেড়ে ওঠা আধুনিক চীনা জনগনের জীবন স্পন্দনের কিছু অনুভব আমি শুধু এই লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করবো আমার প্রিয় দেশ চীনের প্রতি আমার গভীর ভালবাসা ব্যক্ত করার জন্য। ২০১২ সালে চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনালের ( সিআরআই) হিন্দি বিভাগের " তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মের বিখ্যাত মঠ" শীর্ষক জ্ঞান প্রতিযোগিতায় হিন্দি বিভাগের শ্রেষ্ঠ শ্রোতা নির্বাচিত হয়ে আমি চীন ভ্রমণের আমন্ত্রণ পাই। ২৬ নভেম্বর, ২০১২ সোমবার--এই তারিখটি আমার জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে; কেননা ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টায় আমি চীনের পবিত্র ভূমিতে পদার্পণ করি। পেইচিং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই আমি টের পেলাম পেইচিংয়ের হাড় কাঁপানো শীতের কামড়। রমেশজী আমার কানের কাছে মুখ এনে জানালেন পেইচিংয়ের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে; আরো জানতে পারলাম আমার পেইচিংয়ে এসে পৌঁছানোর একদিন আগেই পেইচিংয়ে তুষারপাত হয়েছে। আর সত্যি বলতে কি, মাইনাসের নিচের তাপমাত্রায় ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা আমার আগে ছিল না। চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে আমি মাত্র সাত দিন ছিলাম। এই সাত দিনে চীনা জনগণের রীতিনীতি বিশেষ করে পেইচিংয়ের সংস্কৃতির অল্প একটু ছোঁয়া যা আমি অনুভব করতে পেরেছিলাম তা শব্দচিত্রের মাধ্যমে বর্ণনা করা সত্যিই খুব শক্ত কাজ। পেইচিংয়ে আসলে পরে তবেই উপলব্ধি করা যায় ত্রয়োদশ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত চীনের ইউয়ান, মিং ও ছিং রাজবংশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। পেইচিংয়ের রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ঘুরলে তবেই আবিষ্কার করা যায় চীনা জাতির অগ্রগতির যাত্রা এবং চীনা জাতির প্রাণশক্তির বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নানা সংস্কৃতি অনুভব করা যায়। উপলব্ধি করা যায় ইতিহাসের পথ ধরে হেঁটে যাওয়া সাতশোরোও বেশী বছর বয়সী পেইচিং শহরে আজ যৌবনের হীরক দ্যুতি। পেইচিং মহানগরীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসের নানা পুরাকীর্তি। খুব ছোটোবেলায় যখন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র ছিলাম তখন থেকেই মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম একদিন পৃথিবীর সাত আশ্চর্যের একটি চীনের মহাপ্রাচীরে উঠে মাটির এই পৃথিবীটাকে দু'চোখ ভরে দেখবো। ইতিহাস বইয়ে পড়া চীনের মহাপ্রাচীর আমার চোখের সামনে। অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ! পাহাড়ের উপর চীনের মহাপ্রাচীর যেন এঁকে বেঁকে চলা এক নদী। চীনের মহাপ্রাচীর যেন সৃষ্টির ইতিহাস, মানব জাতির ইতিহাস আর সভ্যতার ইতিহাস। সারা বিশ্বের বিস্ময় চীনের মহাপ্রাচীর--তুমি শুধু চীনা জনগণের নয়, তুমি আজ গোটা বিশ্বের অহংকার। চীনারা এই মহাপ্রাচীরকে "দশ হাজার লি'র মহাপ্রাচীর" বলে ডাকে। দশ হাজার লি মানে পাঁচ হাজার কিলোমিটার। বিশ্ববিখ্যাত চীনের মহাপ্রাচীর হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম মানুষের হাতে তৈরি প্রাচীন চীনের একটি সামরিক স্থাপনা। সিঁড়ির দুই পাশে লোহার রেলিং। কনকনে ঠান্ডায় রীতিমতো ঘামছি আর হাঁপাচ্ছি। কিন্তু মহাপ্রাচীরের শিখরে ওঠার দুর্নিবার আকর্ষণে উঠেই চলেছি। একটা সময় আমি আর রমেশজী যখন থামলাম, দেখি আমরা জনা কুড়ি দেশী-বিদেশী পর্যটক সব থেকে উঁচু জায়গায় উঠে এসেছি। রমেশজী জানালেন এরপর আর ওঠা যাবেনা তার কারণ মহাপ্রাচীরের এই অংশ খুবই বিপদজনক সীমায় আছে। বুঝতে পারলাম মহাপ্রাচীর শুধু প্রাচীনকালের চীনের সামন্ত সমাজের একটি প্রতীকি ইতিহাস নয়, কালের আবহে এই মহাপ্রাচীর চীনাদের সমাজ জীবনে জীবন্ত ভালোবাসার প্রতীকও বটে। মনের মধ্যে এলো রবীন্দ্রনাথের একটি গানের লাইন :"প্রেম বলে যে, যুগে যুগে তোমার লাগি আছি জেগে"। এই মহাপ্রাচীর আজ চীনা জনগণের জাতীয় মর্মের অন্যতম প্রতীক।

শীতের হিমেল হাওয়ায় কাঁপতে কাঁপতে চন্দ্রিমাজী আর লিলিজীর সঙ্গে পায়ে পায়ে থিয়েন আনমেন চত্বরের বিপরীত দিকের ফটক দিয়ে প্রবেশ করলাম ফরবিডেন সিটিতে ।ফরবিডেন সিটি হলো পৃথিবীর বুকে মানুষের সৃষ্টি সবচেয়ে সুন্দর স্থাপনাগুলোর অন্যতম যা প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় চীন সভ্যতার শিল্পকীর্তির প্রতীক। এটি হলো চীনের মিং এবং ছিং রাজবংশের রাজপরিবারের আবাসস্থল। রাজপ্রাসাদে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল, তাই বলা হয় নিষিদ্ধ নগরী বা 'জি চিন ছেং'। চন্দ্রিমাজী আমার কানে একটি স্বয়ংক্রিয় অডিও টেপ গাইড হিসাবে লাগিয়ে দিলেন। বাংলায় ফরবিডেন সিটির ধারাভাষ্য! আমি বেশ অবাক হলাম গলাটা শুনে। আরে,এই কন্ঠস্বর তো সিআরআই বাংলা বিভাগের প্রবীন কর্মী জনাব শি চিংউ সাহেবের! আমার মনে হয় শিল্পরসিক পর্যটকদের অন্তত একবার হলেও এই ফরবিডেন সিটি দেখতে যাওয়া উচিত।

চীনে থাকার সময় একদিন সিআরআই বাংলা বিভাগের পরিচালক মাদাম ইয়ু কুয়াং ইউয়ে এবং ছাই ইউয়ে মুক্তা সিআরআই বিল্ডিং থেকে কিছু দূরে অবস্থিত "বিগ পিত্জা " নামে একটি রেস্তোরাঁয় আমাকে দুপুরের খাবারের দাওয়াত দিয়েছিলেন। রেস্তোরাঁটি খুবই পরিচ্ছন্ন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, খোলামেলা। এতটা পরিসর নিয়ে রেস্তোরাঁটিতে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে যে বাবা-মায়ের সঙ্গে আসা শিশুরা মনের আনন্দে এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করছে, খাচ্ছে, খেলছে। তাকিয়ে দেখলাম এটা রেস্তোরাঁ হলেও, পদ্ধতিটা বুফে ধরনের। আমি যে ব্যাপারটা লক্ষ্য করি, চীনারা রেস্তোরাঁগুলিতে বেশ সময় নিয়ে খায়, তারা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে গল্প করে না বরং গল্পের ফাঁকে ফাঁকে খায়। দু-একজন ছাড়া কারো তেমন তাড়া আছে বলে মনে হলো না। পারিবারিকভাবেই খাবার সময়টাকে চীনারা উপভোগ করে।ওই দিন মাদাম ইয়ু আর মুক্তা দেবী আমাকে পরম যত্নে নানা সুস্বাদু চীনা খাবার খাইয়েছিলেন । আর একটা ব্যাপার ,চীনাদের জীবনে চা পান তাদের ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । চা ও চা-ক্রিম চীনা জাতির খাবার সংস্কৃতির একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিক ।চীনারা সবুজ চা বেশি পছন্দ করে ।চীনের প্রতিটি রেস্তোরাঁ,হোটেল ,রাস্তা ঘাট সর্বত্র চা পানের ব্যবস্থা রয়েছে ।চীনে ছয় ধরনের চা হয়। এগুলো হলো-সবুজ চা, কালো চা, সাদা চা, উলং চা, হলুদ চা ও ডার্ক চা। চীনের বিভিন্ন জাতির নিত্য জীবনযাপনে চা পান অপরিহার্য। সন্ধ্যাবেলায় সাধারণত আমি সিআরআইয়ের একটি আপার্টমেন্টে থাকতাম। চীনে থাকার সময় আমি দুদিন সন্ধ্যা বেলায় রমেশজীর সাথে হেঁটে হেঁটে পেইচিংয়ের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল, সন্ধ্যার আলোয় পেইচিংয়ের আশপাশটা একটু দেখে নেওয়া। চারদিকটা দেখি আলোয় ঝলমল করছে। শহরের জৌলুস দেখে সত্যিই আমার চোখে ধাঁধা লেগে গিয়েছিল। সিআরআই বিল্ডিং-এর পাশে মূল বড় রাস্তাটা অনেকটা হাইওয়ের মতো। চার পাশে বড়ো বড়ো ফ্ল্যাট বাড়ি, দোকানপাট আর হোটেল। রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে নানা ধরনের দামি গাড়ি, মোটরযান। আর তাল মিলিয়ে সাইকেল। রাস্তায় যানজট নেই বললেই চলে। কোথাও দেখলাম না ট্রাফিক সিগন্যাল ভেঙ্গে কোনো মানুষ রাস্তা পার হচ্ছে। এক মধ্যবয়স্ক চীনা ভদ্রলোক পেইচিংয়ের রাস্তায় রমেশের কাছে আমি ভারত থেকে বেড়াতে এসেছি শুনে আমাকে এক প্যাকেট সিগারেট গিফট করলেন। একদিন একটি সিনেমা হল থেকে চীনের বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক লি আনের 'লাইফ অব ফি' (Life of Pi) দেখে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে চেপে ফিরছিলাম। চন্দ্রিমাজীকে বললাম আপনাদের পাতাল রেল দেখবো। এখানে দেখলাম মেট্রো প্ল্যাটফর্মে ঢোকার আগে যাত্রীদের দেহ তল্লাশিসহ স্ক্যানিং মেশিনে জিনিসপত্রের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। একটি মেট্রো স্টেশন থেকে চীনের ঝাঁ চকচকে পাতাল রেলে চড়লাম ,নামলাম সিআরআই বিল্ডিংয়ের একেবারে কাছেই। হাসি-খুশী সাধারণ চীনাদের সঙ্গে বসে আসতে আসতে অনুভব করলাম পেইচিংয়ের পাতাল ট্রেনে বসে থাকা এই চীনা মানুষগুলো যেন চীনের বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতির প্রতীক। দ্রুত গতিতে ছুটতে থাকা চীনের এই ঝকঝকে পাতাল ট্রেন যেন চীনের সামাজিক উন্নয়নের বাস্তব প্রতীক। পেইচিংয়ের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, সমৃদ্ধির ছোঁয়া কিভাবে উছলে পড়েছে পেইচিংয়ের পথে-ঘাটে, বিভিন্ন পর্যটন স্থানে, গগনচুম্বী সুপারমার্কেট, বার্ডনেস্ট স্টেডিয়াম, ওয়াটার কিউব, ৭৯৮ শিল্প বাগানের সৃজনশীল অবকাঠামোয়। চীনের স্থাপত্যে, রাষ্ট্রীয় প্রগতিতে, সাধারণ মানুষের স্বপ্নে-আবেগে চীনের লাল মোহিনীশক্তি! আধুনিক চীনের নাগরিক জীবনে, সমাজ চেতনায় ইতিহাসের শিল্পরসে সমৃদ্ধ চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির প্রতিফলন! (ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাই প্রাণপ্রিয় সিআরআই বাংলা বিভাগ থেকে যেন আবার সোনালী আলোয় উদ্ভাসিত চীন ভ্রমণের আমন্ত্রণ পাই)। সিআরআই বাংলা বিভাগের সকল উপস্থাপক ও উপস্থাপিকাকে আমার হৃদয়ের সশ্রদ্ধ নমস্কার জানিয়ে শেষ করছি ।

মু: বন্ধু রবিশঙ্কর বসু, আপনি চমত্কার বাংলায় আপনার চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। আমরা মুগ্ধ হয়েছি। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আ: মুক্তা, বন্ধু রবিশঙ্কর বসু কিন্তু আসেলেই খুব ভালো লিখেছেন। যতোদূর জানি, তিনি কবিতা লেখেন। তার লেখা তাই বোধকরি কাব্যময়। ভাষাও বেশ শুদ্ধ ও ঝরঝরে। আমার তরফ থেকেও তাকে ধন্যবাদ। তো বন্ধুরা, রবিশঙ্করের চীনের গল্প আপনাদেরও নিশ্চয়ই ভালো লেগেছে। এবার চলুন একটি গান শোনা যাক।

গান

আ: বাংলাদেশের ঢাকার সিআরআই-সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাবের সদস্য তাছলিমা আক্তার লিমা লিখেছেন: চীনের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব অনেক পুরনো এবং গভীর। চীন বাংলাদেশের পরীক্ষিত ভালো বন্ধু। চীনের সাথে বাংলাদেশের মজবুত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আত্নার সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে চীনের সহযোগিতা অপরিসীম। আকাশপথে তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে দু'দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নে চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই) নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। চীনারা নিজেরাই বাংলা ভাষা শিখে আমাদের সাথে সিআরআই-এর মাধ্যমে মৈত্রীর সেতুবন্ধন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রমাণিত হয়, তারা আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে কতো সম্মান করে ও ভালোবাসে। এ জন্য আমরা সিআরআই-এর কাছে কৃতজ্ঞ এবং তাদেরকে আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ। বাংলাদেশে চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই) এর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রাপ্ত বেতার সংগঠন 'সিআরআই- সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব' কর্তৃক আয়োজিত "সিআরআই- এর বাংলাদেশি শ্রোতাদের অনুভূতিতে চীন" শীর্ষক সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। চীন আন্তর্জাতিক বেতার বাংলা বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত "আমার চীনা স্বাদ ভালো লাগে" শীর্ষক জ্ঞান যাচাই প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে সিআরআই- সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব গত ২৭ জুলাই শনিবার হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার আমু চা বাগানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিশু, কিশোর-কিশোরী ও চীন আন্তর্জাতিক বেতারের শ্রোতাদের নিয়ে দিনব্যাপী এই বিশাল সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। যার মাধ্যমে মূলত হবিগঞ্জ জেলায় চীন আন্তর্জাতিক বেতারের শ্রোতাসংখ্যা বৃদ্ধি এবং চীনা সংস্কৃতি ও বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করা হয়। ঘনশ্যামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পুনিল ঘোষের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, একই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রানা প্রসাদ ঘোষ। তিনি তার বক্তব্যের শুরুতে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ইতিহাস তুলে ধরেন এবং চীন দেশ ও চীন বেতারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে সিআরআই বাংলাদেশ মনিটর দিদারুল ইকবাল-কে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, শিগগিরই যেন আমু চা বাগানে সিআরআই- সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাবের একটি শাখা কার্যালয় চালু করা হয়, যাতে চা বাগানের স্কুল ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ক্লাবে একসঙ্গে বসে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনতে পারে এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে। এসময় উপস্থিত সকলে করতালির মাধ্যমে তার প্রস্তাব সমর্থন করেন। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলাদেশ মনিটর এবং সিআরআই- সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাবের পরিচালক দিদারুল ইকবাল তার বক্তৃতায় চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিল্প-কারখানা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার, ঐতিহ্য, পর্যটন এবং বাংলাদেশের সাথে গভীর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, চীন আন্তর্জাতিক বেতারের কল্যাণে বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ ছোট্ট একটি রেডিও অথবা এফএম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অতি সহজে চীন ও বিশ্ব সম্পর্কে জানতে পারছে। তিনি চা বাগানে বসবাসরত সকলকে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শোনার আহবান জানান এবং চিঠি, ই-মেইল অথবা ফোনের মাধ্যমে মতামত জানানোর অনুরোধ করেন। এ ছাড়া তিনি চা বাগানে সিআরআই- সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাবের শাখা কার্যালয় চালুর প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ২নং আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার ববিতা রাণী কর্মকার; আমু চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক প্রদীপ শীল; শায়েস্তাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের সিনিয়র রোভার স্কাউট লিডার মো:আকরামুল ইসলাম; স্থানীয় ব্রাক স্কুলের শিক্ষক রতন তাঁতী; কনিকা গোয়ালা; বীনা দাশ বৃষ্টি; সুলেখা রাজবল্লভ প্রমূখ। দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, পঞ্চায়েতের নেতা, চা বাগানের কর্মচারীসহ প্রায় ছয় শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন। আমু চা বাগানের নাচঘর প্রাঙ্গনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্থানীয় বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ৫টি ইভেন্টের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে ট্রফি তুলে দেন দিদারুল ইকবাল, ঘনশ্যামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রানা প্রসাদ ঘোষ, ২নং আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার ববিতা রাণী কর্মকার; আমু চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক প্রদীপ শীল এবং শায়েস্তাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের সিনিয়র রোভার স্কাউট লিডার মো:আকরামুল ইসলাম।

মু: বন্ধু লিমা, আমাদের বেতারকে কেন্দ্র করে নিয়মিত বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করায় আপনি এবং আপনার ক্লাবের সব সদস্যকে ধন্যবাদ জানাই। শ্রোতাবন্ধুরা, "শ্রেষ্ঠ শ্রোতা ক্লাব, ২০১৩" প্রতিযোগিতা এখন চলছে। আপনারা যদি এ-প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চান, তাহলে যথা শিগগিরি সম্ভব আপনাদের ক্লাবের পরিচয় এবং চলিত বছর ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানের ছবি, ওডিও বা ভিডিও আমাদেরকে পাঠান।

আ: পাবনা জেলার রোজিনা খাতুন চিঠিতে লিখেছেন, ...

মু: আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা বাংলাভাষা পড়েছি। এ পর্যন্ত চীনে মাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাভাষা কোর্স রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি হলো কমিউনিকেশন ইউনিভার্সিটি অব চায়না বা চীন যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি চীনের প্রথম শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম। এখানে টেলিভিশন ও বেতারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের জন্য দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা হয়। আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর বাংলাভাষা পড়ে তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরের মতো বাংলা ভাষা শিখেছি। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন যে, আমার সহকর্মী আলিম এ বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পড়ান। তিনি সেখানে বাংলাভাষা নিয়ে যেসব চীনা ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে, তাদের পড়ান। .....এখনও চীনে আমাদের মতো বাংলা ভাষা জানা চীনা মানুষের সংখ্যা অনেক কম। বাংলাভাষা জানার জন্য আমরা গর্ববোধ করি। বন্ধু রোজিনা খাতুন, আপনাকে চিঠির জন্য ধন্যবাদ। আশা করি আপনি নিয়মিত আমাদের লিখবেন।

আ: বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান শেষের আগে আপনাদেরকে আরেকটি সুন্দর বাংলা গান শোনাবো। আশা করি, সব শ্রোতা গানটি পছন্দ করবেন।

গান

আ: প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, এতোক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনারা আমাদের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও আনন্দ পেয়ে থাকেন, তাহলে মনে করবো আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আপনাদের জন্যই আমাদের সকল প্রচেষ্টা ও আয়োজন। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং শুনতে থাকুন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। আর হ্যা, আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না।

মু: হ্যাঁ, আপনারা আমাদের ইমেলেও প্রশ্ন বা মতামত পাঠাতে পারেন। আমাদের ইমেল ঠিকানা হলো ben@cri.com.cn। আবারো বলছি ben@cri.com.cn। আশা করি, আগামী সপ্তাহের একই দিনে, একই সময়ে আবার আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। ততোক্ষণ সবাই ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
লিঙ্ক